চট্টগ্রামের তিন ভাইয়ের পকেটে ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা, সবাই ধরাছোঁয়ার বাইরে

সাজা হয়, পরোয়ানা আসে— তবু ছোঁয়া যায় না

তারা তিন ভাই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণের নামে ব্যাংক থেকে নিয়েছেন অন্তত চার হাজার কোটি টাকা। তিন ভাইয়ের নামেই আছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। বিভিন্ন ব্যাংকের দায়ের করা মামলায় তিন ভাই-ই পেয়েছেন বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড। চলমান আছে আরও অন্তত দেড় ডজন মামলা। কিন্তু তাদের ছোঁয়া যায় না, ধরা যায় না। চট্টগ্রামের বাসিন্দা এই তিন ভাই-ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় স্থায়ী ঠিকানা করে নিয়েছেন আগেই। দেশে থাকা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনোটিরই আর ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতাও নেই। এমনকি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকে রাখা বন্ধকি সম্পত্তির মূল্যও এতো কম যে, তা দিয়ে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের এক-দশমাংশও আদায় করা সম্ভব নয়।

এই তিন ভাই হলেন চট্টগ্রামভিত্তিক নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতন এবং পরিচালক টিপু সুলতান ও ফরহাদ মনোয়ার।

সবশেষ বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ৩২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা নিয়ে মেরে দেওয়ায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতন এবং পরিচালক টিপু সুলতান ও ফরহাদ মনোয়ারকে ৫ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর আগেই অন্য মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে রতনের বিরুদ্ধে।

নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের নেওয়া খেলাপি ঋণ আদায়ে চট্টগ্রামে জনতা ব্যাংকের লালদীঘি শাখার দায়ের করা মামলায় অর্থঋণ আদালতের যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান এই রায় দেন। অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংক লালদীঘি শাখা থেকে ১১২ কোটি ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৮০১ টাকা ঋণ নেয় জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ঋণের সেই টাকা আর পরিশোধ করা হয়নি। পরবর্তীতে সুদ ও দণ্ড সুদসহ ব্যাংকের মোট পাওনা দাঁড়ায় ৩২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এই টাকা পরিশোধ করার জন্য জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডকে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশও না মেনে টাকা পরিশোধ না করায় বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এ রায় দেওয়া হল।

এর আগে নুরজাহান গ্রুপের এমডি জহির আহমদ রতন সবমিলিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ১৫টি মামলা আছে। এ কারণে আদালত তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের জুবলী রোড শাখা নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মেরিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের কাছে পাওনা রয়েছে ২০৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর বাইরে নুরজাহান গ্রুপেরই আরেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান তাসমিন প্রোপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড থেকে ব্যাংকটি পাবে ৯২ কোটি চার লাখ টাকা। সবমিলিয়ে শুধু নুরজাহান গ্রুপের এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাছেই সাউথইস্ট ব্যাংক জুবলী রোড শাখা পাবে প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা। অথচ এর বিপরীতে ব্যাংকের কাছে বন্ধকি সম্পত্তি যা আছে, তার মূল্য বড়জোর ৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত হবে।

জানা গেছে, জহির আহমদ রতন মেসার্স আহমদ ট্রেডার্সের নামে ১১৮ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৩ টাকা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। এ ঘটনায় ২০২০ সালে মামলা দায়ের করা হয়। ঋণের বিপরীতে কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক না থাকায় বাদীপক্ষ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেন। আদালত তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ন্যাশনাল ব্যাংকের ১১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ না করায় নুরজাহান গ্রুপের এমডি জহির আহমদ রতনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। তিনি যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন সে জন্য বাদী পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞাসহ তার পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!