চট্টগ্রামকে ‘আলোকিত’ করার প্রকল্প ঘিরে বড় লুটপাট, খুঁটিতেই ২০ লাখ টাকা গায়েব

অভিযোগের তীরে বিদ্ধ বিদ্যুতের ঝুলন কুমার

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে চলছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ইনস্টলেশন অব জিআইপি পুল (বৈদ্যুতিক খুঁটি) অ্যান্ড এলইডি লাইট ওয়েরিং প্রকল্পের প্রায় ৪৮ কোটি টাকার কাজ। গত দেড় বছর ধরে চলমান এ প্রকল্পের মালামাল ব্যবহারে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগ। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরজুড়ে ডিজিটাল আলোকায়ন চার স্তরের সকল যন্ত্র ও লাইট ইউরোপের ভালো ব্র্যান্ডের সরবরাহ করার কথা বললেও মূলত সেসব জিনিস ভারত থেকে আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমনকি পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে এ প্রকল্পের প্রথম দরপত্র বাতিলও করা হয়। দ্বিতীয়বার দরপত্র দেওয়া হয় পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে। পরে তাদের সঙ্গে যোগসাজশে কাজে কারসাজি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে খোদ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।

দুর্নীতির এসব ঘটনায় বারবার ওঠে আসছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশের নাম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, একের পর এক প্রকল্পে কারসাজির আশ্রয় নিয়ে তিনি পকেটে ভরছেন কোটি কোটি টাকা।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে ইনস্টলেশন অব জিআই পুল (বৈদ্যুতিক খুঁটি) অ্যান্ড এলইডি লাইট ওয়েরিংয়ের জন্য প্রায় এক বছর মেয়াদে মোট ৪৮ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর দরপত্র খোলা হয়। সেখানে চারটি দরপত্রে ১৫-১৭ শতাংশ ছাড় দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয় ‘অমনি পাওয়ার লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পরে বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে সে দরপত্র বাতিল করেন।

এরপর ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দরপত্রটি খোলা হয়। সেখানে চারটি দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় ‘এসটিএমএস’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই সময় দু’বারের দরপত্রে অংশ নেওয়া আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল এসপিএল ও জেএসএম (জেবি), প্রোপ্রার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেড, এনার্জি প্যাক ইলিক্ট্রনিক লিমিটেড ও ইস্ট অ্যান্ড ইলিক্ট্রনিক লিমিটেড।

প্রকল্পের আওতায় নগরজুড়ে ডিজিটাল আলোকায়ন করতে লাগানো হয়েছে ৪০০ মিটার গ্যালভেনাইজড আয়রন (জিআই) পুল। স্থান ও এলাকার ধরন অনুসারে প্রতিটি পুল ৩০ মিটার উচ্চতার স্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে প্রায় ২০০ মিটার পুল স্থাপন করা হয়েছে প্রতিটি মাত্র ২০ মিটার উচ্চতার। প্রতিটি ৩০ মিটার উচ্চতার পুলের মূল্য বাবদ কর্পোরেশন থেকে বিল তোলা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে ১০ মিটার কম উচ্চতায় বানানো ২০০ মিটার পুলে প্রতিটিতে টাকা বেচে যায় ১০ হাজার করে। সে হিসেবে ২০০ মিটার পুলে হাতিয়ে নেওয়া হয় ২০ লাখ টাকা।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার বলেন, গাজীপুরের বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে অস্ত্র সরবরাহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ‘এসটিএমএস’ নামের ওই প্রতিষ্ঠান। জালিয়াতি করে ‘ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্যাডে ঘষামাজা করে অভিজ্ঞতার সনদ বানিয়ে কাজ কৌশলে বাগিয়ে নেন বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ। সেখানে তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন একই বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক রুপক চন্দ্র দাশ। মূলত ৪৮ কোটি টাকার এ প্রকল্প কৌশলে নিজেরা বাগিয়ে নিতে দ্বিতীয়বার দরপত্রের আবেদন করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করেও সাড়া মেলেনি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে অভিযোগের বিষয়ে জানতে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে শিগগিরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডিজে/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!