‘ঘুষ’ না দেওয়ায় ৭০ হেক্টর জমির চাষাবাদ বন্ধ!

মাত্র ১৫ হাজার টাকা ‘ঘুষ’ না দেওয়ায় ৭০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। বিল পরিশোধ করার পরও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। এতে সেচের অভাবে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মাঠেই। চাষাবাদও বন্ধ হয়ে আছে। এরই মধ্যে নির্ধারিত সময়ের চেয়েও প্রায় এক মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে।

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের চারটি ব্লকের শতাধিক কৃষক এমন অভিযোগ করেছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী।

কৃষকরা বলেন, ‘উপজেলার পোয়াপাড়া (বি)-৩৯, লোয়ার পোয়াপাড়া (বি)-৩৮, ছোটডলু (বি)-৪৩ ও ছোট ডলু (বি) ১২৬ এ চারটি ব্লকে মোট ৪টি সেচ পাম্প ব্যবহার করে তারা প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে শতাধিক কৃষক শুকনো মৌসুমে বোরো চাষ করে আসছেন। তারা মৌসুমী সবজি, ভুট্টা ও ধনিয়া উৎপাদন করে থাকেন।

এ জন্য দীর্ঘ দু’যুগ ধরে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সংযোগ নিয়ে নিয়মিত বিলও পরিশোধ করে আসছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কাউখালীর বেতবুনিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহের নতুন আবাসিক প্রকৌশলী অশোক কুমার ঘোষ আগাম ঘোষণা ছাড়াই মাসখানেক আগে চারটি সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন।

‘ঘুষ’ না দেওয়ায় ৭০ হেক্টর জমির চাষাবাদ বন্ধ! 1

পোয়াপাড়া (বি)-৩৯ স্কিম ম্যানেজার কৃষক মো. সুলতান বলেন, ‘বিদ্যুৎ অফিসে অনেক ঘোরোঘুরি করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। সময় চলে যাচ্ছে। বিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের পুনঃসংযোগের জন্য আবাসিক প্রকৌশলী অশোক কুমার ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করছেন। বিষয়টি স্থানীয় কৃষি বিভাগকে জানিয়েছি।’

কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ৩ কানি (১২০ শতক) জমিতে বোরো চাষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পানির অভাবে তা আর করতে পারছি না। কিছু জমি চাষাবাদ করলেও পানির অভাবে তা মরে যাচ্ছে।’

লক্ষ্মীধর চাকমা বলেন, ‘২ কানি জমিতে ভুট্টা ও ধনিয়া পাতা চাষ করেছিলাম। পানির অভাবে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চার কানি জমিতে বোরো চাষ করতে বীজতলা করেছি। পানি না থাকায় এসব বীজতলা লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। পানির অভাবে জমি সেচ দিতে না পারায় জমি খীল পড়ে আছে।’

আবাসিক প্রকৌশলীর এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তৈয়ন নূর। তিনি বলেন, ‘অফিসে গিয়ে আবাসিক প্রকৌশলীকে অনুরোধ করেছি। কাজ হয়নি। বিদ্যুৎ বন্ধ করে চাষাবাদ আটকে দেয়াটা অমানবিক, আইনবিরুদ্ধ।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ক্যজাই মারমা বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে চাষাবাদ করতে না পারলে ৭০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা কৃষকরা সর্বশান্ত হয়ে যাবে। এ আবাসিক প্রকৌশলীর আরও নমনীয় হওয়া প্রয়োজন। না হলে ক্ষতির সম্মুখীন হবে রাষ্ট্র ও কৃষকরা।’

আবাসিক প্রকৌশলী অশোক কুমার ঘোষ বলেন, ‘প্রতি পাম্প এক কিলোভোল্ট বলে ১০-১৫ কিলো পর্যন্ত নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যবহার করে আসছে কৃষকরা। তাই তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আর ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি অবান্তর।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!