ঘরের দুয়ারে বউবাজার, ঝুঁকিতে এলাকাবাসী

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়ার বউবাজার এলাকায়। অপ্রয়োজনে যখন-তখন অলিগলিতে ঘোরাঘুরি, আড্ডা চলছেই। বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান কোন ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া ত্রাণ বিতরণ করছে। এতে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে করোনার ঝুঁকি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ১৯ নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড বস্তি অধ্যুষিত। অধিকাংশ দিনমজুর ও দরিদ্র মানুষ বস্তিতে বসবাস করে। কোথাও ত্রাণের খবর পেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে হতদরিদ্ররা। বাজার হওয়ায় একদিকে ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ভিড়, অন্যদিকে বাজার করতে আসা মানুষের ঢ্ল। এতে জনবিস্ফোরণ ঘটে বউবাজার। এলাকাজুড়ে বস্তিবাসীদের বেপরোয়া চলাফেরা, অপ্রয়োজনে অলিগলিতে আড্ডাবাজিতে স্থানীয়দের মনে বিরাজ করছে করোনা আতঙ্ক।

দেখা যায়, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা থাকলেও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় ও অলিগলিতে ঘোরাঘুরি করছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। প্রায় সময় স্থানীয় বউবাজারেও ভিড় লেগে থাকছে। এলাকার বস্তিগুলোতেও লোকজনের বেপরোয়া চলাফেরা শঙ্কিত করে তুলেছে স্থানীয়দের। এ বিষয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন।

ঘরের দুয়ারে বউবাজার, ঝুঁকিতে এলাকাবাসী 1

সর্বশেষ শুক্রবারও (১৭ এপ্রিল) বউবাজারের বিভিন্ন স্থানে লোক জড়ো করে কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ব না মেনে রিক্সার গ্যারেজ ও অলিগলিতে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ত্রাণসামগ্রী। মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলার হিড়িক পড়েছে ত্রাণদাতাদের মাঝে। যেখানে বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি, সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিচ্ছে মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধ বয়সের মানুষজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘অলিগলির আড্ডা এই এলাকার মানুষের দৈনন্দিন অভ্যাস। বেশিরভাগ বস্তিবাসী হওয়াতে এই মহামারিতেও তারা সচেতন নয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বাসিন্দা বলেন, থানা থেকে বাজারের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল দুপুর ১২টা পর্যন্ত। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে বাজারের সময় বর্ধিত করে ৪টা পর্যন্ত করেছে। আমাদের এলাকায় বাজার হওয়াতে ঝুঁকির মধ্যে আছি। তারওপর অলিগলির আড্ডা এই এলাকার মানুষের পুরানো অভ্যাস। এ পরিস্থিতিতেও আড্ডা চলছে। কেউ সচেতন নয়।

১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইয়াছিন চৌধুরী আছু চট্টগ্রাম প্রতিদিন কে বলেন, ‘সেনাবাহিনী-পুলিশসহ আমরা মানুষকে ঘরে ঢোকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি, মাইকিং করছি। বউবাজার, জামাইবাজার সরিয়ে চরচাক্তাই স্কুল মাঠে নিয়ে আসার জন্য ডিজিএফআই, জেলা প্রশাসকসহ সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারি ত্রাণ সবার ঘরে ঘরে পৌছে দেবো। ত্রাণকর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছে আমাদের সাথে সমন্বয় করে ত্রাণ দিতে, কিন্তু তারা মানছেন না।’

এব্যাপারে বাকলিয়া থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতি ঘরে তারা ৮-১০ জন বসবাস করে। বস্তিবাসীদের আগ্রাবাদের সাথে তুলনা করা যাবে না। পুলিশ গেলে তারা ঘরে ঢুকে পড়ে।’

তবে সুরক্ষা ছাড়াই লোক জড়ো করে ত্রাণ বিতরণের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ত্রাণ কেউ দিচ্ছেন না, কেউ ত্রাণ দিলে আমাদের জানায়, আমরা পুলিশ পাঠাই।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!