গভীর রাতে ‘নওফেল অনুসারী’ ছাত্রলীগের দুই উপগ্রুপের মারামারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে

কমিটি বিলুপ্তের ১২ দিনের মাথায় দুই দফায় সংঘর্ষে জড়ালো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগ।

সবশেষ শুক্রবার (৭ অক্টোবর) দিবাগত রাত ২টায় শাহ আমানত হলে সিএফসি গ্রুপের দুই উপগ্রুপের মধ্যেই এবার মারামারির ঘটনা ঘটলো। সিএফসি গ্রুপ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

জানা গেছে, শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহ সভাপতি মির্জা খবির সাদাফ খানের অনুসারী তন্ময়কে মারধর করে সাদাফ খানেরই একসময়ের কর্মী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক আইন সম্পাদক খালেদ মাসুদের অনুসারীরা। খালেদ মাসুদ ও সাদাফ আইন অনুষদের শিক্ষার্থী।

এরপর রাত আড়াইটার দিকে সাদাফের অনুসারীরা খালেদ মাসুদের অনুসারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক আরাফাত রায়হানকে মারধর করে।

এদের মধ্যে খালেদ মাসুদ ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-২০১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আরাফাত চবিতে কর্মরত সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদকে মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার হয়।

পরে এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে হলের ভেতরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে চবি ছাত্রলীগের রুবেল-টিপুর নেতৃত্বাধীন কমিটির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় বিজয় ও সিএফসি, সিক্সটি নাইন গ্রুপ। টানা সংঘর্ষের একপর্যায়ে ২৪ সেপ্টেম্বর চবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি বিলুপ্তের ঘোষণার দিনও সংঘর্ষ চলছিল ছাত্রলীগের মধ্যে। কমিটি বিলুপ্তের ঘোষণা আসার পরপরই সংঘর্ষও থেমে যায়। শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারী দুই উপগ্রুপ সিএফসি ও বিজয় কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় আনন্দ মিছিলও বের করে।

এই দুই গ্রুপের নেতারা এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানায়, কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। তারা আর সংঘর্ষে জড়াবে না।

কিন্তু কমিটি বিলুপ্তির ১২ দিনের মাথায় শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিগত কমিটিতে পদ বঞ্চিত বিজয় গ্রুপের একাংশের নেতা সাখাওয়াত হোসের নেতৃত্বাধীন সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শাহ জালাল হলে অবস্থানকারী সিক্সটি নাইন গ্রুপের সেই সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে উভয়পক্ষের প্রায় ১৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

সিক্সটি নাইন গ্রুপ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। ক্যাম্পাসে সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল ইসলাম। সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ২০১১-২০১২ সেশনের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলামকে সংগঠন থেকে আজীবন বহিস্কার করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের বিরুদ্ধে সিএফসি গ্রুপের সাদাফ খানের অনুসারীরা অবস্থান নেয়। তারা কমিটি ভেঙে সিএফসি গ্রুপের মধ্যে সাদাফ খানের আধিপত্য বিস্তার নিশ্চিত করার চেষ্টা চালায়। ২০০৭-২০০৮ সেশনের শিক্ষার্থী রুবেল অছাত্র হলেও সভাপতি হওয়ার আগে থেকে কমিটি বিলুপ্তের কিছুদিন আগপর্যন্ত ছিল সিএফসি গ্রুপের একক সর্বোচ্চ নেতা। রুবেলের ৪ বছর ১০ মাসের নেতৃত্ব ‘হাতছাড়া’ হয়ে যাওয়ার পর এবার সিএফসি গ্রুপেই শুরু হলো গৃহদাহ। কমিটি বিলুপ্তের ১২ দিনের শুক্রবার গভীর রাতে মাথায় সিএফসির দুই পক্ষের কোন্দল সাদাফ-খালেদের অনুসারীদের মারামারির মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে এলো।

এবিষয়ে জানতে সিএফসি গ্রুপের দুই পক্ষের নেতা মির্জা খবির সাদাফ খান ও খালেদ মাসুদকে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া মেলেনি।

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

আরএম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!