কথায় কথায় গুলি করতো খোরশেদ, ভয়ে টু শব্দটি করতো না কেউ

কথায় কথায় গুলি করতো র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত কুখ্যাত সন্ত্রাসী খোরশেদ। তার ভয়ে এলাকায় পান থেকে চুন খসতে পারতো না। এমনকি কথা কাটাকাটির জের ধরেও প্রকাশ্যে গুলি চালাতো সে। তার মৃত্যুতে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছে এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী জানায়, নিজের বসতির পাশে মোবাইল ফোন চুরিকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ঘরে গুলি চালিয়েছিল খোরশেদ। তার ভয়ে এলাকায় কেউ টু শব্দটি করতে পারতো না। নীরব চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, জায়গা দখল-বেদখল, প্রতিপক্ষের লোকজনকে ধরে এনে টর্চার- সবই করতো সে। আগ্রাবাদের পাঠানটুলী এলাকায় নিজের অফিসকক্ষের পাশের রুমটি ছিল খোরশেদের টর্চার সেল। সেখানে ধরে এনে প্রতিপক্ষের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতো সে।
রোববার (১৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ এলাকায় খোরশেদ র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযদ্ধে নিহত হয়। তার বিরুদ্ধে সিএমপির বিভিন্ন থানায় ৮টি মামলা রয়েছে। মোগলটুলী জমিরউদ্দিন লেইনের মৃত শফিক আহমেদের পুত্র খোরশেদ।

চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিনতানুর রহমান বলেন, খোরশেদ আগ্রাবাদ এলাকায় যুবলীগ নেতার পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতো। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা থাকলেও বারবার পুলিশের হাত থেকে পালিয়েছে সে। একাধিকবার কারাগারে গেলেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়তো। তাকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে খুঁজেছি। খোরশেদ কয়েকটি কিশোর গ্যাংও চালাতো।

জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট আগ্রাবাদের বিভিন্ন শিপিংহাউজ থেকে চাঁদা আদায়ের সময় পুলিশ খোরশেদকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায় সে। এর আগেও দুইবার পালিয়েছিল সে। নগর যুবলীগের প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় খোরশেদ যা খুশি তা-ই করতো—এমন অভিযোগ এলাকার মানুষের। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেতো না।

খোরশেদ আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, শেখ মুজিব রোড, চৌমুহনী পাঠানটুলি রোড, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, কমার্স কলেজ রোড কাটা বটগাছ, জমির উদ্দিন লেন, মোগলটুলি বাজার, বার কোয়ার্টার এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল।

ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ বলেন, র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত খোরশেদ বিষয়ে ডবলমুরিং থানায় র‌্যাব বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছে। মামলা নং-২৯।
সদরঘাট থানার ওসি ফজলুর রহমান ফারুকী জানান, খোরশেদ পেশাদার সন্ত্রাসী। প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে সদরঘাট থানায় একটি, কোতোয়ালী থানায় একটি অস্ত্র মামলা, ডবলমুরিং থানায় মাদক, অস্ত্র ও হত্যা সংক্রান্ত তিনটি মামলার খোঁজ পাওয়া গেছে। পুলিশের তালিকায় তার নামের পাশে ‘তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অস্ত্র বিক্রেতা’ বলে উল্লেখ রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ জুন রাত ১টার দিকে আরেক পেশাদার সন্ত্রাসী গোলাম সরওয়ার প্রকাশ হামকা মিলনসহ ১০-১৫ সহযোগী নিয়ে মনির হোসেন মান্নান প্রকাশ কানা মান্নানের হাত বিচ্ছিন্ন করে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে খোরশেদ। মান্নান হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে খোরশেদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মান্নানকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ সড়কের পাশে ফেলে দেয় তারা।
পুলিশ জানায়, নিহত খোরশেদ পাঠানটুলী ওয়ার্ড যুবলীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিল। কিশোর গ্যাং লিডার হিসেবেও তার কুখ্যাতি ছিল।
সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!