এক দেশেই জাবেদের ২৭৬৯ কোটি টাকার সম্পদ, খবরে চোখ রাখছে যুক্তরাষ্ট্রও

চট্টগ্রামের আনোয়ারা-কর্ণফুলী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অবগত।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে করা এক প্রশ্নে একথা বলেছেন মুখপাত্র ম্যাথু মিলার।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সংসদ সদস্য হিসেবে পুননির্বাচিত হলেও মন্ত্রিসভায় তার পদ হারান। তবে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদে আছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত বিফ্রিংয়ে এক সাংবাদিক তার প্রশ্নে বলেন, ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর লোকজনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’। সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদের সাম্রাজ্য গড়ে তোলার অভিযোগ আছে। এটা অনেকগুলো ঘটনার একটি। বাংলাদেশ সরকারকে জবাবদিহি করতে এবং বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নেবে?

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, তারা প্রতিবেদনটির বিষয়ে অবগত। নির্বাচিত কর্মকর্তারা যাতে বাংলাদেশে দুর্নীতির বিষয়ে দেশের আইন এবং আর্থিক বিধিবিধানগুলো মেনে চলেন তা নিশ্চিত করতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী বৃটেনে এবং যুক্তরাষ্ট্রে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। ওই সম্পদের মূল্য ২০ কোটি পাউন্ড — যা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের শতকরা এক ভাগের সমতূল্য। সেখানে বলা হয়, প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড বা বাংলাদেশি ২ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী।

কী আছে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে?

লন্ডনের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় একটি প্রপার্টি ২০২২ সালে ১১ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি হয়। রিজেন্ট পার্ক থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই প্রপার্টির অবস্থান। বিখ্যাত লর্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অবস্থানও এর ঠিক পাশেই। লন্ডনের সবচেয়ে দামি এলাকাগুলোর মধ্যে এটি একটি। এই প্রপার্টিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু সাদা রঙের বাড়ি। বাড়িগুলোতে যে জানালা আছে, এর বিস্তার মেঝে থেকে একেবারে ছাদ পর্যন্ত। সর্পিলাকৃতির সিঁড়িগুলো উঠে যায় উপরের কয়েক তলা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে আছে সিনেমা হল ও জিমনেসিয়াম।

এই প্রপার্টির মালিক বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে তিনি গড়ে তুলেছেন রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ব্লুমবার্গ নিউজে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যুক্তরাজ্যে কোম্পানি হাউসের করপোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল লন্ডনের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে টাওয়ার হ্যামলেটসে আবাসন—যেখানে ইংল্যান্ডের বৃহত্তম বাংলাদেশি কমিউনিটির আবাসস্থল এবং লিভারপুলে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ভবন।

ব্লুমবার্গ নিউজ যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রায় আড়াইশ প্রপার্টির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে, যখন এই প্রপার্টিগুলো কেনা হয়, তখন যুক্তরাজ্যজুড়ে তীব্র আবাসন সংকট চলছিল এবং এর ৯০ ভাগই ছিল সদ্য তৈরি নতুন বাড়ি।

এই লেনদেনগুলো এমন এক সময়ে করা হয়েছিল, যখন রুশ ধনকুবেররা খুব সহজেই তাদের সম্পদ যুক্তরাজ্যে লুকিয়ে রাখতে পারছে—এমন সমালোচনার মুখে ব্রিটিশ সরকার সম্পত্তির বিদেশি মালিকানায় আরও স্বচ্ছতা দেখাতে চাইছিল। ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের পর যা আরও জরুরি হয়ে ওঠে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা বলছেন, তার এসব সম্পত্তির কারণে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ততা আছে এমন লেনদেন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের আইন আদৌ কার্যকর কি না।

ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে সাইফুজ্জামানের অন্তত পাঁচটি প্রপার্টি খুঁজে পেয়েছে। মিউনিসিপ্যাল প্রপার্টির নথি অনুসারে, এসব সম্পত্তি ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ছয় মিলিয়ন ডলারে কেনা হয়েছে।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে প্রাক-নির্বাচনী ঘোষণায় সাইফুজ্জামান তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫৮ দশমিক তিন মিলিয়ন টাকা (দুই দশমিক চার মিলিয়ন ডলার) এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের মোট সম্পদের পরিমাণ নয় লাখ ৯৩ হাজার ডলার বলে জানান। তিনি বাংলাদেশে সম্পদের ঘোষণাপত্রে তার যুক্তরাজ্যের সম্পদের পরিমাণ দেখাননি। মন্ত্রী হিসেবে ২০২২-২৩ সালে তার বেতন প্রায় ১০ হাজার পাউন্ড হিসাবে দেখানো হয়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!