এক করোনা রোগীতে দিশেহারা ম্যাক্স হসপিটাল

১০ চিকিৎসকসহ ৬০ নার্স-কর্মী কোয়ারেন্টাইনে

বোয়ালখালীর সেই করোনা রোগীর চিকিৎসা দিয়ে এখন অনেকটা অচল চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হসপিটাল। ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা প্রায় ১০ জন চিকিৎসক, ৫০ জনেরও বেশি নার্স, টেকনিশিয়ান, স্টাফ ও আয়া এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। লকডাউন করা হয়েছে সিসিইউ ইউনিট, জরুরি বিভাগ এবং জেনারেল একটি ওয়ার্ড।

বুধবার (১৫ এপ্রিল) জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদিবাগ রোডে ম্যাক্স হসপিটালে গিয়ে ওই রোগীর বিস্তারিত হিস্ট্রি ধরে একে একে তালিকা করে এসব নির্দেশনা প্রদান করেন ম্যাক্স কর্তৃপক্ষকে। জরুরি বিভাগ বন্ধ হওয়ায় আপাতত রোগী ভর্তিও বন্ধ রয়েছে সেখানে। নার্স, স্টাফ, টেকনিশিয়ানদেরকে ম্যাক্স হসপিটালের নবম ও দশম তলায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা নিজেরা আছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে।

জানা গেছে, বোয়ালখালী সারোয়াতলী ইউনিয়নের সেই রোগী প্রথমে ম্যাক্স হসপিটালের জরুরি বিভাগে আসেন। জরুরি বিভাগ থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক চেকআপ করে ভর্তি করান সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট)। সিসিইউতে চিকিৎসক এক্সরে ও ইসিজিসহ আরো কিছু টেস্ট দেন। একদিন পর অবস্থার উন্নতি ঘটলে ওই রোগীকে জেনারেল বেডে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন (মঙ্গলবার) সকালে ওই রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল হলে ম্যাক্স থেকে ছাড়পত্র নিয়ে তিনি বোয়ালখালী চলে যান। মঙ্গলবার রাতে ওই রোগীর করোনা আক্রান্তের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। রাতেই সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে তাকে জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে নিয়ে আসা হয়।

ওই রোগীর জরুরি বিভাগ থেকে সিসিইউ হয়ে জেনারেল বেড এবং ফলোআপসহ ছাড়পত্র দেওয়ার আগ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জন চিকিৎসক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তার সংস্পর্শে আসেন। আর নার্স ও টেকনিশিয়ানদের সাথে তাদের অন্যান্য সহকর্মীর তালিকা ৫০ জনেরও বেশি।

ম্যাক্স হসপিটালের একজন পরিচালক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের হসপিটালে চিকিৎসা নেওয়া এক রোগীর করোনা পজিটিভ আসার পরপরই আমরা সিসিইউ, জরুরি বিভাগ লকডাউন করে জীবাণুমুক্ত করা শুরু করেছি। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহযোগিতায় আমরা ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের তালিকা করে তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রেখেছি। কারণ তারা বাসায় গিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইন না মানলে তা আরও সংক্রমিত হতে পারে। জরুরি বিভাগ বন্ধ থাকায় আপাতত রোগী ভর্তি বন্ধ আছে। বৃহস্পতিবার নাগাদ ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা ফ্লোরগুলো এবং জরুরি বিভাগ জীবাণুমুক্ত হবে। এরপর রোগী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তবে কর্তৃপক্ষ স্বীকার না করলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই ঘটনায় চট্টগ্রামের একজন শীর্ষ কার্ডিয়াক সার্জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে যেতে হয়েছে, যার তত্ত্বাবধানে বোয়ালখালীর ওই রোগী সিসিইউতে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে চট্টগ্রামে প্রথম শনাক্ত হওয়া দামপাড়ার করোনা রোগী ম্যাক্সের পার্শ্ববর্তী ভবনে অবস্থিত ন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ায় চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফ প্রায় ২৪ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে যান। তাদের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রামের একজন নামকরা মেডিসিন ও গ্যাস্টলজিস্ট।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!