চট্টগ্রামে ছাত্রকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শিক্ষক আটক, স্থানীয়দের সঙ্গে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের হাতাহাতি

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এক মাদ্রাসাছাত্রকে যৌন নিপিড়নের অভিযোগে শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষকসহ আহত হন তিন জন।

আটক শিক্ষকের নাম হাফেজ মাওলানা জোবায়ের। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা তিনি।

রোববার (২৬ মে) দুপুরে উপজেলার ওয়ার্লেসে অবস্থিত দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে ওই শিক্ষককে আটক করা হয়।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, শনিবার রাতে ওয়ার্লেস দারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক জোবায়ের হেফজ বিভাগের এক শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করেন। রোববার সকালে ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা বিষয়টি ক্যান্টিনে জানায়।

পরে যৌন নিপীড়নে আক্রান্ত ওই শিক্ষার্থী ক্যান্টিনে এসে পরিবারকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায়। এর মধ্যে স্থানীয় লোকজন জানার পর মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিষয়টি জিজ্ঞেস করতে যায়। এই নিয়ে স্থানীয় এবং মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ইব্রাহীম, স্থানীয় তরুণ তানভীর শাহরিয়ার রিয়াজ ও নুরনবী বশর আহত হন। আহতরা উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

পরে খবর পেয়ে মিরসরাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অভিযুক্ত শিক্ষক জোবায়ের আটক করে হেফাজতে নিয়ে আসে।

আহত স্থানীয় বাসিন্দা তানভীর শাহরিয়ার রিয়াজ জানান, মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের বিষয়টি জানার পর আমি মাদ্রাসার ভেতরে গিয়ে হুজুরদের কাছে জানতে চাই। তখন মাদ্রাসার শিক্ষকরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। ঘটনা দেখে স্থানীয় অন্যরা এগিয়ে আসলে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের ওপরও হামলা চালায়।

তিনি আরও জানান, ওয়ার্লেস দারুল উলুম মাদ্রাসায় যৌন নিপীড়নের ঘটনা আজ নতুন নয়। এর আগে বেশকয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। যতবারই ঘটে ততবারই মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ শোয়াইব গোপনে বিষয়গুলো ধামাচাপা দিয়ে দেন এবং অভিযুক্ত শিক্ষকদের কোনো বিচার না করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

যৌন নিপীড়নের শিকার শিশু শিক্ষার্থীর পরিবার জানায়, ২০১৬ সালে আমার ছোট ভাইকে ওয়ার্লেস দারুল উলুম নূরানী বিভাগে ভর্তি করাই। নূরানী বিভাগ থেকে হিফজ বিভাগে যাওয়ার পর এখন নাজেরা বিভাগে পাঠদান চলছে। এতদিন কোনো তার কোনো সমস্যা শুনিনি। হঠাৎ করে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমার ভাইয়ের সঙ্গে ঘটবে কখনো চিন্তা করিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ শোয়াইব বলেন, দোষী তো প্রতিষ্ঠান না, দোষী একজন ব্যক্তি। অভিযুক্ত বাঁশখালী হুজুরকে পুলিশ নিয়ে গেছে। সে যদি প্রকৃত অন্যায়কারী হয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয়রা এভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালানোর বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করেছে।

যোগাযোগ করা হলে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে এই ঘটনায় যৌন নিপীড়নের শিকার শিশু শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে হাতাহাতির ঘটনার বিষয়টি অবগত নন বলে জানান ওসি।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!