উচ্ছেদ আতংকে নির্ঘুম রাত লালদিয়ার চরে

কর্ণফুলীর তীরে চলমান উচ্ছেদ কার্যক্রমে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে লালদিয়ার চরে। সেখানে বসবাসরত ১৭শ’ পরিবারের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দারা ভূমি হারানোর আতংকে আছেন। ওই জমি উচ্ছেদের জন্য প্রশাসন থেকে একাধিকবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এদিকে, পুনর্বাসন ছাড়া লালদিয়ার চরে বুলডোজার চললে রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে তার প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে চরের বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বন্দরের চেয়ারম্যানকে কর্ণফুলী তীরের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। উচ্ছেদকালীন সময়ে লালদিয়ার চরের মানুষগুলোকে আদৌ পুনর্বাসন করা হবে কিনা এ বিষয়ে সরকারি কোন নির্দেশনা না থাকায় আতঙ্ক আরো ঘণীভূত হচ্ছে।

এছাড়া পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ অভিযান না চালনোর প্রতিবাদে বুধবার (১৭ এপ্রিল) মানবন্ধন করেছে লালদিয়ার চরের বাসিন্দারা। লালদিয়ার চর উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত হয় এই কর্মসূচি। কর্মসূচিতে আসা সত্তোরোর্ধ আয়েশা খাতুন বলেন, ‘সরকারের প্রয়োজনে নিজের ভিটেমাটি সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সরকার আমাদের পুনর্বাসন করে লালদিয়ার চরে। এখন শুনছি আবার আমাদের উচ্ছেদ করা হবে। পরিবার নিয়ে আমরা কোথায় যাবো?’
লালদিয়াচরের বাসিন্দা আবুল হাসান বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের উচ্ছেদ আতঙ্ক তাড়িত করে। সরকার যদি শেষ পর্যন্ত পুনর্বাসন ছাড়া আমাদের উচ্ছেদ করে তাহলে দশ হাজার মানুষের ঠিকানা কোথায় হবে তা ভাবতেই আঁতকে উঠি।’

এদিকে, লালদিয়ার চরের বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যায়ের সদস্যরাও। সম্প্রতি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল লালদিয়ার চরের অধিবাসীদের আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের মহানগর পর্যায়ের বেশ কয়েক নেতা লালদিয়ার চরের বাসিন্দারের নানা কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দিচ্ছেন।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালে আহমদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়নামারের বাস্তুচ্যুত দশ লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করেছেন। তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। লালদিয়ার চরের মাত্র দশ হাজার মানুষের দায়িত্ব তিনি অবশ্যই নেবেন। লালদিয়ার চরের মানুষগুলোকে শেষ পর্যন্ত তিনি পুনর্বাসনের আওতায় নিয়ে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা।

লালদিয়ার চর উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘সরকারি প্রয়োজনে জায়গার দরকার হলে আমরা অবশ্যই ছেড়ে দোবো। তবে এই এলাকার বাসিন্দারা কোথায় গিয়ে নিজেদের ঠিকানা গড়ে তুলবে সেটিও সরকারকে ইতিবাচক ভাবে দেখতে হবে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান বলেন, উচ্ছেদ বিষয়ে হাইকোর্টের অর্ডার হয়েছে। সেই অর্ডারের কপি আমরা এখনো পাইনি। কপি পাওয়ার পর আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ হবে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন বলেন, লালদিয়ার চর চট্টগ্রাম বন্দরের জায়গা। সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর দায়িত্ব তাদের।

জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর অবৈধ তালিকায় যে দুই হাজার ১২২ স্থাপনার কথা হাইকোর্টের তালিকায় রয়েছে সেই তালিকার অধিকাংশই লালদিয়া চরের বসতি।
উল্লেখ্য, চারযুগ আগে চট্টগ্রামে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি (বর্তমান জহুরুল হক ঘাঁটি)তার পাশেই লালদিয়ার চর নামক ছোট্ট গ্রামে বসবাস ছিলো তাদের। বিমান বাহিনীর ঘাঁটি সম্প্রসারণের প্রয়োজন হলে তখন পাশ্ববর্তী বাসিন্দাদের ভূমি প্রয়োজন হয় সরকারের। তৎকালীন রাষ্ট্র প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ক্ষতিপুরণ পাওয়া সাপেক্ষে নিজেদের ভিটেমাটি তুলে দেয় সরকারের হাতে। ভূমি হারা মানুষগুলোর ঠাঁই হয় পাশ্ববর্তী চরাভূমিতে (বর্তমান লালদিয়ার চর)। ভূমিটি চট্টগ্রাম বন্দরের হলেও সেখানে গত ৪৮ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় বসবাস তাদের।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!