আধিপত্যের অভিযোগ এনে ডিন পদে নির্বাচন বয়কট চবি অধ্যাপকের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ডিন পদে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আইন অনুষদের আওয়ামী ও বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের প্রার্থী অধ্যাপক জাকির হোসেন। নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

চিঠিতে তিনি লেখেন, আগামী ৩০ মার্চ আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত আছে। উক্ত নির্বাচনে আমি মো. জাকির হোসেন ও অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক প্রার্থী রয়েছি। গত ২৩ মার্চ মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুককে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও তিনি উপাচার্য হিসাবে যোগদান না করে আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনে তাঁর প্রার্থীতা বহাল রেখেছেন।

চিঠিতে তিনি আরও লেখেন, কাউকে উপাচার্য নিয়োগের আগে তাঁর কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়। চাহিদা অনুযায়ী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেয়ার মানে তিনি নিয়োগে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন। তাই নিয়োগের রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন জারির পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তা গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বরাবরে লিখিতভাবে না জানানোর আগ পর্যন্ত তিনি এই নিয়োগ গ্রহণ করেছেন বলে পরিগণিত হয়। যাই হোক, ২৭ মার্চের সিভয়েস২৪.কম অনলাইন পোর্টাল ও ২৮ মার্চের আজকের পত্রিকায় চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের রেজিস্ট্রার হিসাবে এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। আপনি পত্রিকা দু’টিকে বলেছেন, অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক আপনাকে জানান যে, তিনি রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে যোগদান করবেন না। এতে প্রতীয়মান হয় যে, উপাচার্য হিসাবে যোগদানের চেয়ে ডিন পদ অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুকের কাছে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।

চিঠিতে আরও লেখা হয়, আমি ও অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত শিক্ষকদের ফোরাম হলুদ দলের সদস্য। হলুদ দল আমাকে ডিন নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দিলে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেন। এতেও প্রমাণিত হয় ডিন পদের প্রতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুকের গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ রয়েছে।

ডিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন আনুষদের সহকর্মীদের মধ্যে ভয়ঙ্কর বিভেদ, বিদ্বেষ ও শত্রুতার এমন এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যেখানে সহকর্মীদের মধ্যে ওয়ার্কিং রিলেশনও হুমকির মুখে পড়েছে। অনুষদের সহকর্মীদের সম্পর্কের বুনন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েকজন সহকর্মী তাঁদের বিব্রতকর অবস্থা ও মনেকষ্টের কথা আমাকে জানিয়েছেন। সহকর্মীদের মাঝে সালাম-শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময়েও বিভেদ-বিদ্বেষের প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো কোনো কর্তাব্যক্তিও সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ায় সহকর্মী ভোটারদের মাঝে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আইন বিভাগের একজন শিক্ষক সহকর্মীদের কাউকে কাউকে ডেকে দফায় দফায় নির্বাচন বিষয়ে অনুচিত প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন যার ফলে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ বাংলাদেশের মধ্যে একটি অনন্য আইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সহকর্মীদের মাঝে বিদ্বেষের বিষাক্ত পরিবেশের কারণে অনুষদের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটি নির্বাচনের কারণে শিক্ষার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেয়া গর্হিত অপরাধ। যে নির্বাচন সহকর্মীদের একে অপরের শত্রুতে পরিণত করে, আইন শিক্ষার অনন্য উচ্চতার প্রতিষ্ঠানকে ‘কাশিম বাজার কুঠিতে’ রূপান্তরিত করে, কোনো বিবেকবান মানুষ সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের অংশীজন থাকতে পারেন না। কাজেই এমন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমি সমীচীন মনে করি না। আইন অনুষদের বৃহত্তর স্বার্থে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সকল বিভেদ-বিদ্বেষ-শত্রুতা ও বিবব্রতকর অবস্থা অবসানের লক্ষ্যে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের স্বার্থে ডিন নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সহকর্মীদের আমাকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের হস্তক্ষেপে সহকর্মী ভোটারদের মাঝে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সহকর্মীরা আমাকে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন। তাই আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বলেন, একজন প্রার্থী নির্বাচন থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের চিঠি দিয়েছেন। তবে নিয়মানুযায়ী সেই চিঠি গ্রহণের সুযোগ নেই।

এমআইটি/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!