আগ্রাবাদের ত্রাস টেন্ডারবাজ পারভেজ শেষমেশ পুলিশের হাতে ধরা

কিশোর গ্যাংয়ের জোরে ভাগ বসায় গণপূর্তের সব টেন্ডারেই

চট্টগ্রামে এক প্রকৌশলীকে মারধর ও নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস ভাংচুরের মামলায় পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন নগরীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আগ্রাবাদ এলাকার ত্রাস এসএম পারভেজ।

সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস ভাংচুর ও প্রকৌশলীকে মারধরের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার পুলিশ।

ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন এর সত্যতা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশের তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী এসএম পারভেজ চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

গণপূর্ত অধিদফতরের টেন্ডার, তেল কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য, ফুটপাতের চাঁদাবাজি, সিজিএস কলোনিতে সরকারি ফ্ল্যাট দখল, সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের জিম্মি, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণসহ বহু অভিযোগ রয়েছে যুবলীগ নামধারী এই এসএম পারভেজের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) নগরীর আগ্রাবাদের গণপূর্ত ই/এম সার্কেলের আওতাধীন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আনাস ট্রেডিংয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কক্ষে একটি সভা হচ্ছিল। সভাটি ঘন্টাখানেক চলার পর দুপুর সোয়া একটার দিকে ৭-৮ জনের একটি দল নিয়ে ৮ মামলার আসামি ও কিশোর গ্যাং লিডার এসএম পারভেজ নির্বাহী প্রকৌশলীর রুমে ঢুকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম ধরে চিৎকার করতে থাকে।

অভিযোগে জানা গেছে, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিক নিজের পরিচয় দেওয়ার পর পারভেজের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ দলটি তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে করতে মারধর শুরু করে। পারভেজ এ সময় গণপূর্তের প্রকৌশলী রায়হানকেও শাসাতে থাকেন।

সেকেন্ড ইন কমান্ড দাঁতলা সুমনের (ডানে) সঙ্গে ডবলমুরিং পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী পারভেজ।
সেকেন্ড ইন কমান্ড দাঁতলা সুমনের (ডানে) সঙ্গে ডবলমুরিং পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী পারভেজ।

এই ঘটনার পর গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান ইবনে কামাল বাদী হয়ে নগরীর ডবলমুরিং থানায় তালিকাভুক্ত শীর্ষ এসএম পারভেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।

জানা গেছে, আগ্রাবাদ এলাকার ত্রাস এসএম পারভেজ নিজের পরিচয় দেন নগরের কথিত যুবলীগ নেতা হিসেবে। তবে নগর আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ হোসেন বাচ্চুর অনুসারী হিসেবে রয়েছে তার পরিচিতি। পুলিশের সঙ্গেও তার বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। লোকেমুখে প্রচার রয়েছে, ডবলমুরিং থানার তৎকালীন এক ওসির সঙ্গেও তার ব্যবসা রয়েছে।

আগ্রাবাদে পারভেজের রয়েছে একটি শক্তিশালী কিশোর গ্যাং। এর জোরে দিনের বেলায় টেন্ডারবাজিই মূলত তার পেশা। সন্ধ্যার পরই চলে যান নেশার ঘোরে। টার্গেটের কোন সরকারি টেন্ডারই মিস হয় না তার। আগ্রাবাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তার আধিপত্য বেশ। তার হাতের আঙ্গুলের ইশারায় সবকিছুই হয় গণপূর্ত অধিদপ্তরের আগ্রাবাদ অফিসে।

বছরের পর বছর তার দখলে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক সড়কে গণপূর্তের রেস্টহাউজের বড় একটি অংশ। মাদকের আখড়া বানিয়ে ফেলা এই রেস্টহাউজই তার আস্তানা। বাইরে থেকে লোক ধরে এনে এখানেই সন্ধ্যার পর চলতো টর্চার। অনেকে এটিকে টর্চার সেল হিসেবেও চেনেন।

পুলিশের তথ্যমতে, পারভেজের বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ মামলা রয়েছে অন্তত ৮টি। ডবলমুরিং পুলিশের তালিকাভুক্ত এই সন্ত্রাসীর সেকেন্ড ইন কমান্ড দাঁতলা সুমনের বিরুদ্ধেও রয়েছে কমপক্ষে ১৫টি মামলা।

২০১৯ সালে আগ্রাবাদে ঈদের দিন বাসা থেকে ডেকে নিয়ে সোহেল নামে এক শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগ আছে পারভেজ ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

বিএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!