অপমানের ঢোক গিলে ‘নেতা লোকমানের’ তদবিরের বদলিতে সিওএসের সই

অফিস সময় এড়িয়ে স্বাক্ষর সন্ধ্যায়

রেলওয়ের চন্দনাইশ কাঞ্চননগর ডিপোর এক চৌকিদারকে বদলির তদবির ফাইলে সই নিতে দলবল নিয়ে রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের (সিওএস) অফিসে যান রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি শেখ লোকমান হোসেন। কিন্তু নিজেদের ইচ্ছেমতো সময়ে সাক্ষাৎ করতে না পেরে অফিসের এক কর্মচারীকে পিটিয়ে ভয়ভীতি দেখান শ্রমিক লীগের ওই নেতা। অবশেষে সেই অপমানের ঢোক গিলে ‘বদলি বাণিজ্যের’ ফাইলেই স্বাক্ষর করেছেন রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের (সিওএস) বেলাল হোসেন সরকার। দিন এড়িয়ে অফিস সময় শেষে স্বাক্ষরও হয়েছে একেবারে সন্ধ্যায়।

৬ সেপ্টেম্বর (রোববার) সন্ধ্যায় বদলি বাণিজ্যের ওই ফাইলে সিওএসের স্বাক্ষর করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা। অফিস সময় শেষে রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের সন্ধ্যাকালীন ‘ফাইল স্বাক্ষর’ বিষয়ে লুকানো প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন খোদ রেলের কর্মকর্তারাও।

তদবিরের মাধ্যমে বদলি হওয়া ওই চৌকিদারের নাম মোরশেদ। তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ কাঞ্চননগর ডিপোর চৌকিদার পদে কর্মরত রয়েছেন। তাকে পাহাড়তলী রেলওয়ে নিউ স্টোর ডিপোতে বদলি করা হয়েছে। তবে বদলির নথিতে সিওএস স্বাক্ষর করলেও বদলির নির্দেশনাপত্রটি ৭ সেপ্টেম্বর (সোমবার) জারি হওয়ার কথা রয়েছে।

বদলির বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি শেখ লোকমান হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটি তেমন বড় বদলি না। চট্টগ্রামের ভেতরের এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের বদলি।’

জানা গেছে, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি শেখ লোকমান হোসেনের নেতৃত্বে শ্রমিক লীগের ৫ জনের একটি দল ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের (সিওএস) কার্যালয়ে যায়। অপর চারজনের মধ্যে ছিল রেলওয়ে টিএ ব্যাঞ্চের বাঁধন সরকার, রিপন খান ও কাইয়ুম। তারা সিওএস বেলাল হোসেন সরকারের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা জানান অফিসে খালাসি পদে কর্মরত মো. মোরশেদ আলমকে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্রমিক নেতাদের সাক্ষাৎ করতে আসার বিষয়টি সিওএসকে জানালেও তিনি মুঠোফোনে ব্যস্ত থাকায় তাদের অপেক্ষা করতে বলেন। অপেক্ষার ১০ মিনিট পর রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি শেখ লোকমান হোসেন সাক্ষাতের বিষয়টি আবারও জানানোর তাগিদ দেন। কিন্তু ততক্ষণে সিওএসের মুঠোফোনে কথা শেষ না হওয়ায় একটু অপেক্ষা করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সিওএস অফিসের কর্মচারী মোরশেদকে গায়ে ধাক্কা দিয়ে মারধর করেন শেখ লোকমান।

রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের (সিওএস) অফিসের খালাসী পদে কর্মরত মো. মোরশেদ আলম মারধরের শিকার হওয়ার কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুপুরে শ্রমিক লীগ নেতা লোকমানের সঙ্গে বাঁধনসহ ৫ জন অফিসে সিওএস স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। এ সময় তাদের হাতে নিউ স্টোর ডিপোতে একজনের বদলিবিষয়ক ফাইল ছিল। বিষয়টি আমি স্যারকে জানাই। কিন্তু স্যার ফোনে কথা বলায় তাদের অপেক্ষা করতে বলি। তারা আবারও আমাকে বিষয়টি স্যারকে জানাতে বললে তিনি তাদের অপেক্ষা করতে বলার কথা জানান। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে নেতা লোকমান আমাকে হঠাৎ বলে উঠে ‘হেই ব্যাডা আমি কে চিনস’। এ সময় আমি বলি— ‘ভাই চিনি।’ একথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই নেতা শেখ লোকমান হোসেন ও বাঁধন সরকার আমাকে ধাক্কা দিয়ে চড়থাপ্পড় মারতে থাকেন। বিষয়টি দেখে তাদের সঙ্গে আসা রিপন খান ও কাইয়ুম এদের সরিয়ে নেন।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!