অনিয়মের ইজারায় গেল চমেক হাসপাতালের ক্যান্টিনসহ দোকান

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানের মধ্যেই দরপত্র ছাড়া দুটি দোকান তুলে দেওয়া হল চেনা সিন্ডিকেটের ‘পুতুল’ এক প্রতিষ্ঠানের হাতে। এক্ষেত্রে কোনো নিয়মও মানা হয়নি। হাসপাতালের ভেতরে যে সিন্ডিকেট বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত, এই অনিয়মের পেছনেও বরাবরের মতোই তারা সক্রিয় ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, কোনো ঘোষণা ছাড়াই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির ক্যান্টিন ও একটি গ্রোসারি শপ ইজারা দেওয়া হয় মেসার্স মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। নগরীর আগ্রাবাদের বিসিক মার্কেটে এই প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা।

সদ্য গত হওয়া মেয়াদেও ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠান এসকে এন্টারপ্রাইজের পক্ষে তাজুল ইসলামই ওই ক্যান্টিন ও গ্রোসারি শপ পরিচালনা করেছেন। এসকে এন্টারপ্রাইজের মালিক সেলিম আহমেদ তাজুলের ভগ্নিপতি। জানা গেছে, সেলিম আহমদ মারা যাওয়ার পরও তার স্বাক্ষরে বিভিন্ন কাগজপত্র হয়েছে, যা মূলত তাজুল ইসলামই বেনামে করেছেন। এরকম কিছু চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে।

এদিকে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, উন্মুক্ত টেন্ডারে সংঘাতের ঝুঁকি এড়াতে পিপিআর পদ্ধতিতে কোটেশনের মাধ্যমে দোকান দুটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি ছেলেভোলানো অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয়। দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের তৎপরতার মধ্যেই এমন কাণ্ডে তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) হাসপাতালের পক্ষ থেকে দেওয়া এক চিঠিতে এক বছরের জন্য দোকান দুটির কার্যাদেশ দেওয়া হয় ওই প্রতিষ্ঠানকে। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবীর এবং উপপরিচালক ডা. মুহাম্মদ আফতাবুল ইসলাম।

অথচ এর আগে অন্তত ছয়টি প্রতিষ্ঠান ক্যান্টিন ও গ্রোসারি শপ ইজারা নেওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী আবেদন জানায়। কিন্তু চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দরপত্র ছাড়াই ওই দুটি দোকান তুলে দেয় মেসার্স তাজুল ইসলাম নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে।

মেসার্স মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে লেখা ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘চতুর্থ শ্রেণির ক্যান্টিন ও ক্যান্টিন সংলগ্ন গ্রোসারি শপ’ ইজারার লক্ষ্যে আপনার দাখিলকৃত দরপত্র অত্র হাসপাতালের দরপত্র মূল্যায়ন ও ক্রয় কমিটি কর্তৃক গৃহীত হওয়ায় শর্তসাপেক্ষে এই কার্যাদেশ জারি করা হলো।’

সাত কর্মদিবসের মধ্যে স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদনের কথা জানিয়ে এতে বলা হয়, তিন মাসের অগ্রিম ভাড়া ৯০ হাজার টাকা নিরাপত্তা জামানত হিসেবে জমা দিতে হবে।

জানা গেছে, দোকান ভাড়া নেওয়া নিয়ে এক দ্বন্দ্বে মাসতিনেক আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন এই তাজুল। পরে আবার নিজে থেকে সেই মামলা প্রত্যাহারও করে নেন।

একাধিক সূত্রে পাওয়া অভিযোগে জানা গেছে, অনিয়মে দেওয়া এই কার্যাদেশের নেপথ্যে জড়িত ছিলেন চমেক হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন মানিক, প্রশাসন শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ আরও বেশ কয়েকজন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!