চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ, জেলার-ডেপুটি জেলার নিজের হাতেই পেটান

জেল কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে এমন অভিযোগ শোনা গেলেও এবার নির্যাতিত একজন বন্দির স্ত্রী এবার এ নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আদালতের।

সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা চট্টগ্রাম কারাগারে থাকা সাজাপ্রাপ্ত বন্দি মো. শামীমের স্ত্রী পারভিন আক্তার হিরা চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম, জেলার দেওয়ান তারিকুল ইসলাম, ডেপুটি জেলার মো. সাইমুর, কারারক্ষী সবুজ দাশ এবং সুবেদার মো. এমদাদ হোসেনকে।

এর আগে গত ২৫ নভেম্বর পারভিন আক্তার হিরা চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সরওয়ার জাহানের আদালতে মামলার আবেদন করলেও ৩০ নভেম্বর আবেদনটি খারিজ করে দেওয়া হয়। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। শুনানি শেষে আদালত নির্যাতনের ঘটনা পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করার জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি নির্যাতনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১২ জুলাই সঠিক সময়ে খাবার না দেওয়ার প্রতিবাদ করায় জেলার তারিকুল ইসলাম বন্দি শামীমকে বেধড়ক মারধর করেন। এরপর ১৭ জুলাই ভোরে ডেপুটি জেলার মো. সাইমুর, কারারক্ষী সবুজ দাশ এবং সুবেদার মো. এমদাদ হোসেন কারাগারের ভেতরে একটি আমগাছের সঙ্গে বেঁধে বন্দি শামীমকে মারধর করেন। পরে তাকে জেলার তারিকুলের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় জেলার তারিকুল ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘শালা এখনো মরে নাই, মরলে এক কলম লিখে দেব, কিছুই হবে না।’ এরপর জেলার তারিকুল আবার শামীমকে মারধর করেন। এভাবে ধারাবাহিক নির্যাতনের পর ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে শামীমকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

গত ২২ আগস্ট কুমিল্লা কারাগার থেকে টেলিফোনে শামীম তার স্ত্রী পারভিন আক্তার হিরাকে নির্যাতনের ঘটনাটি জানান। পারভিন এরপর ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা জানিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানান। গত ১১ নভেম্বর শামীম হাজিরা দেওয়ার জন্য আদালতে এলে চট্টগ্রাম কারাগারে নির্যাতনের ঘটনার বিস্তারিত জানান স্ত্রীকে। এর পরপরই মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেন পারভিন।

নির্যাতনের শিকার শামীম একটি হত্যামামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। তবে ওই মামলায় হাইকোর্ট সম্প্রতি তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে ২০০৪ সাল থেকেই চট্টগ্রাম কারাগারে আছেন শামীম। তিনি শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগের রোগী। গত ১৭ জুলাই পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম কারাগারের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড অর্থাৎ হাসপাতালে ছিলেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!