অবিশ্বাস্য/ ডেঙ্গুই নেই, অথচ শেভরনের পরীক্ষায় পজিটিভ!
কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে একই ব্যক্তির দুই ধরনের রিপোর্ট দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। দুপুরে চট্টগ্রামের শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় আসে ডেঙ্গু ‘পজিটিভ’ আর অন্যদিকে রাতে সিএসসিআরের পরীক্ষায় রিপোর্ট আসে ‘নেগেটিভ’। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলেন তার ডেঙ্গুই হয়নি। এ নিয়ে আতঙ্কিত ভুক্তভোগী ও তার পরিবার।
নগরীর ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতির দিকে। ক্রমেই বেড়ে চলেছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এর মাঝেই নামকরা দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট নিয়ে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্যে আতঙ্কিত ভুক্তভোগীর পরিবার।
জানা যায়, ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইনামুল হক দুইদিন জ্বর-কাশিতে ভুগে তৃতীয় দিন (২৭ জুলাই) দুপুরে ১০৩ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে চট্টগ্রামের শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে নিজ থেকেই ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রক্ত পরীক্ষা করান। ওইদিন বিকেলে নোয়াখালী ও পাবনা জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট প্যাথলজি (এক্স) ডা. অঞ্জন সরকার স্বাক্ষরিত শেভরনের রিপোর্টে ডেঙ্গু ‘পজিটিভ’ দেখায়।
এতে ভুক্তভোগীর পরিবার চিন্তিত হয়ে সিএসসিআর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আমীর হোসেনের কাছে গেলে তিনি পুনরায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। ওইদিন রাতেই সিএসসিআরে আবার পরীক্ষা করান ভুক্তভোগী এনামুল হক। পরদিন (২৮ জুলাই) সিএসসিআরের রিপোর্টে আসে ডেঙ্গু নেগেটিভ। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এমন রিপোর্টে হতবাক ভুক্তভোগীর পরিবার। ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত না হয়েও শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির রিপোর্টে আসে ডেঙ্গু ‘পজিটিভ’। অন্যদিকে সিএসসিআরের রিপোর্টে ডেঙ্গু ‘নেগেটিভ’।
দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রিপোর্ট দুই রকম
শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডেঙ্গু পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, আইজিএম-নেগেটিভ এবং আইজিজি-পজিটিভ। ম্যালেরিয়া এবং টাইফয়েড পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’। অন্যদিকে সিএসসিআরের রিপোর্টে দেখা যায় আইজিএম,আইজিজি এবং এনএস১ তিনটিই ‘নেগেটিভ’। এখন আসল আর ভুল রিপোর্ট নিয়েই বিভ্রান্তিতে ভুক্তভোগীর পরিবার।
ভুক্তভোগী এনামুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মারা গেছে। এই ভয়েই সঠিক চিকিৎসার জন্য শেভরনে গেলাম। রিপোর্ট দেখেই আকাশ থেকে পড়লাম। তাছাড়া জ্বর আর কাশি ছাড়া অন্য কোনো উপসর্গ না থাকায় রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি পরামর্শ দেন আবার পরীক্ষা করাতে। পরবর্তীতে রিপোর্টে আসে ডেঙ্গু নেগেটিভ।
তিনি বলেন, ‘নামকরা একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট যদি সঠিক না হয় তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে? শারীরিক মানসিকভাবে যে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হলাম তার কী হবে? আমার মা-বাবা রীতিমত অসুস্থ হয়ে গেল। সারারাত সবার নির্ঘুম কাটল শুধুমাত্র শেভরনের ভুল রিপোর্টের জন্য। এই ভুল রোগ নির্ণয়ের জন্য শেভরনের বিরুদ্ধে যেন উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমন রিপোর্টের কারণে সাধারণ রোগীরা তো মারাও যেতে পারে।’
সিএসসিআর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আমীর হোসেন বলেন, ‘রোগীকে দেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হলাম তিনি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত নন।’
শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির রিপোর্ট নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর শেভরন দিতে পারবে।’
এ প্রসঙ্গে শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির জেনারেল ম্যানেজার পুলক পারিয়াল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটা (আইজিএম) নেগেটিভ আরেকটা (আইজিজি) পজিটিভ। আবার পরীক্ষা না করালে তো বুঝতে পারছি না উনার রিপোর্টে এমন কেন এলো! প্রয়োজনে বিনামূল্যে উনার (ভুক্তভোগী এনামুল হক) পরীক্ষা করে আবার দেখবো সমস্যা মূলত কোথায়।’
ভুল চিকিৎসার রোগীর মৃত্যু হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর তো তেমন ট্রিটমেন্ট নেই। এটার জন্য তো এন্টিবায়োটিক খেতে হয় না। রোগীকে প্যারাসিটামল খেতে হবে আর বিশ্রামে থাকতে হবে।’
ডেঙ্গু পরীক্ষায় বাড়তি টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার আজ থেকে নির্ধারণ করেছে। আমরাও সে অনুযায়ী নিচ্ছি। তাছাড়া এনএস১ পরীক্ষার জন্য আমরা উন্নত কিট ও রি-এজেন্ট ব্যবহার করে থাকি।’
একই ব্যক্তির দুই ধরনের রিপোর্ট প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন,’ ‘আইজিএম ও আইজিজি একটা পাগলা টেস্ট। এই টেস্টে অনেক সময় যার শরীরে ডেঙ্গু নেই এমন ৪০ শতাংশ মানুষের রিপোর্টে আসে পজিটিভ। আবার কারো শরীরে ডেঙ্গু আছে অথচ ৩০ শতাংশ মানুষের রিপোর্টে আসে নেগেটিভ। ডাক্তার না দেখিয়ে কোনো পরীক্ষা করা উচিত নয়। এনএস১ পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু আছে কি নেই তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কিছু প্যাথলজি ব্যবসায়িক ফায়দা নেওয়ার জন্য এই পাগলা টেস্টগুলো করায়। মানুষকে বিভ্রান্ত করে। কম দামি রি-এজেন্ট ব্যবহার করে কিছু কিছু প্যাথলজি এমন করে। ডেঙ্গু নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তার না দেখিয়ে কোনো পরীক্ষা না করানোই ভালো।’