রোগীর পেটে পেরেক নিয়ে সিএসসিআরে তুঘলকি কান্ড!

চট্টগ্রাম নগরীর রেডিসন ব্লু হোটেলের শেফ শহিদুল ইসলামের পেটে পেরেক নিয়ে তুঘলকি কান্ড ঘটেছে সিএসসিআর হাসপাতালে। প্রথম দিকে এপেন্ডিসাইটিস অপারেশেনের সিন্ধান্ত নিয়ে শহিদুলকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। টাকা পরিশোধ না করায় রোগীকে অপারেশন থিয়েটার থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর অন্যচিকিৎসকের পরীক্ষা নিরীক্ষার পর প্রমান মেলে শহিদুল ইসলামের পেটে রয়েছে পেরেক। অনেক চেষ্টার পর পেট থেকে পেরেক বের করা হয়। এ নিয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে ডাক্তারের তুমুল বাকবিতন্ডা হয়। রোগী বর্তমানে সিএসসিআর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি পেটে ব্যাথা নিয়ে গত ৩০ মার্চ দুপুরে ভর্তি হন সিএসসিআর হাসপাতালে। এরপর হাসপাতালের সার্জারী বিশেষজ্ঞ সানাউল্লাহ শেলী পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সিন্ধান্ত দেন এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের। এরপর ৩১ মার্চ রোববার অপারেশনের জন্য শহিদুল ইসলামকে অপরাশেন থিয়েটারে নিয়ে গেলে নার্সরা জানায় অপারেশনের বিল অগ্রিম পরিশোধ করা ছাড়া অপারেশন করাতে অপারগতা প্রকাশ করেন ডাক্তার শেলী।
বিষয়টি নিয়ে রেডিসন ব্লু কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন শহীদুল ইসলাম ও তার স্বজনরা। রেডিসন কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী তাদের যে কোন কর্মকর্তাদের চিকিৎসার বিল পরিশোধ করা হয় চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে। এই বিষয়ে রেডিসন এবং সিএসসিআর কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি রয়েছে।

অপারেশন করাতে ডাক্তার সানাউল্লাহ শেলী অপরাগতা প্রকাশ করার পর রেডিসন ব্লু কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে চিকিৎসক পরিবর্তন করে সিএসসিআর কর্তৃপক্ষ। এরপর শহিদুল ইসলামের চিকিৎসা শুরু করেন আরেক সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আহসানুল আবেদীন। রোগীর সাথে কথা বলার পর এ্যপেন্ডেসাইটিস নিয়ে সন্দেহ তৈরী হয় তার। তিনি রোগীকে এক্সরে করার পরামর্শ দেন। এক্সরেতে রোগীর পেটে একটি পেরেকের অবস্থান ধরা পড়ে। আরো নিশ্চিত হওয়ার পর বিভিন্ন মেশিনে ৩ বার একই চিত্র ধরা পড়ে।

শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীকে নগরীর অন্য আরেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার শেভরন থেকে এক্সরে করানোর পরামর্শ দেন। সেখানে এক্সরে করানোর পর রোগীর পেটে পেরেকের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে দেখতে পান। এর পর ডাক্তার আহসানুল আবেদীন শতভাগ নিশ্চিত হন রোগীর পেটে পেরেক রয়েছে। কিভাবে পেটে পেরেক ঢুকেছে জিজ্ঞেস করলে রোগীও সুনিদৃষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি ডাক্তারকে।

প্রথম দিকে অপারেশনের চিন্তা ভাবনা করলেও রোববার রাতে ডাক্তার এর বিশেষ কায়দায় রোগীর পেট থেকে মলত্যাগের মাধ্যমে পেরেক বেরিয়ে আসে । পেট থেকে মাঝারী সাইজের পেরেক বের হওয়ায় বিষ্মিত হন রোগী এবং চিকিৎসকরা।
এই ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় সিএসসিআরে। হাসপাতালে রোগীর ভগ্নিপতি ফোরকানের সাথে কথা কাটাকাটি হয় ডাক্তার সানাউল্লাহ শেলীর সাথে।

সোমবার (১ এপ্রিল) সকালে সিএসসিআরের ৭০৯ নম্বর কেবিনে কথা হয় রোগী শহীদুল ইসলামের সাথে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডাক্তার শেলীর ভুলে আমাকে ভুল অপারেশন করার সিন্ধান্ত নেয় হাসপাতাল। সেই সাথে টাকা পরিশোধ না করার কারনে অপারেশন থিয়েটার থেকে ফেরত পাঠায়। রেডিসনের চুক্তি অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ বিল পরবর্তী সময়ে পরিশোধ করার বিধান থাকলেও তা শুনেননি ওই ডাক্তার। তিনি অভিযুক্ত ডাক্তার শেলীর বিচার দাবী করেন। পেটের ভেতর পেরেক কিভাবে আসলো এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদুলও বিষ্ময় প্রকাশ করেন।
তবে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য সিএসসিআরের সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের সাথে কথা বলতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডাক্তারদের মোবাইল নাম্বার সরবরাহ করেনি। ভুল চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তার সানাউল্লাহ শেলী চট্টগ্রামের সাউদার্ন হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বলে জানা গেছে।

ডাক্তার সানাউল্লা শেলীর সাথে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অন্যদিকে ডাক্তার আহসানুল আবেদীনের চেম্বারের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলেও সংযোগে সাড়া পাওয়া যায়নি। সিএসসিআর কর্তৃপক্ষ এই দুই চিকিৎসকের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়।

সিএসসিআর এর চিফ অপারেটিং অফিসার ডাক্তার সালাউদ্দিন মাহমুদ এই ঘটনাকে ভিন্নভাবে বর্ননার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন ডাক্তার সানাউল্লাহ শেলী ওই দিন অন্য অপারেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় শহীদুলকে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য অপারেশন করেননি। টাকার জন্য সিএসসিআরে কারো অপারেশন হয়নি এমন ঘটনা কোনদিন ঘটেনি বলে দাবী করেন তিনি।

এ বিষয়ে রেডিসন ব্লু’র ইন হাউজ চিকিৎসক মেজর ডাক্তার আমিনুল হক বলেন, চুক্তি অনুযায়ী রেডিসনের কর্মরতদের চিকিৎসা করে সিএসসিআর। চিকিৎসা শেষে বিল পরিশোধ করা হয়। শুরুতে শহিদুল ইসলামের চিকিৎসার বিষয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে এমন ভুল আর হতোনা। এই ঘটনাকে মিসটেক হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, সিএসসিআর কর্তৃপক্ষ আরো দায়িত্বশীল হলে এমন ভুল আর হতো না। বিষয়টি নিয়ে তিনি সিএসসিআর এর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!