চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের ‘মাই ম্যান’ কমিটি নিয়ে পরিস্থিতি জটিল, পাল্টায় নতুন কমিটি

চট্টগ্রামে নগর ছাত্রলীগের ১৩ ইউনিটে একপেশে ‘মাই ম্যান’ কমিটি দেওয়ার একদিনের মাথায় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতার অনুসারীরা পাল্টা কমিটি ঘোষণা করায় পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে আরও জটিল।

ইতিমধ্যে তিন ইউনিটে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা। এদিকে এসব ইউনিটে পাল্টা আরও একটি কমিটি ঘোষণা করার ঘোষণা দিয়েছে বিক্ষোভরত শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও।

আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতারা যে ৩ ইউনিটে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছে সেসব ইউনিট হলো সরকারি হাজী মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ, বাকলিয়া ও পাহাড়তলী থানা ছাত্রলীগ।

বৃহস্পতিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে নগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মিতুন মল্লিক ও যুগ্ম সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল এসব কমিটির অনুমোদনে স্বাক্ষর করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাকলিয়া থানা ৭১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি, পাহাড়তলী থানায় ৮১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজে ৪০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের পাল্টা কমিটিতে বোরহান উদ্দিন ইমনকে সভাপতি ও রবিউল ওয়াহব কমলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

অন্যদিকে বাকলিয়া থানা কমিটিতে শহিদুর রহমান মানিককে আহ্বায়ক এবং পাহাড়তলী থানায় সাজিদ হোসেন সাক্ষরকে সভাপতি ও কাজী রবিউল ইসলাম শহীদকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ক্রমাগত স্বেচ্ছাচারী অসাংগঠনিক আচরণ এবং এসব বিষয়ে বারবার কেন্দ্রকে অভিযোগ করেও কোন সুরাহা না মেলায় বাধ্য হয়েই পাল্টা কমিটি ঘোষণা করার কথা জানিয়ে নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল বলেন, ‘একপেশেভাবে কারও সাথে আলোচনা না করে তারা নজিরবিহীনভাবে ১৩ ইউনিটে কমিটি দিল। এরপর তারা কারও কলও ধরছেনা। এসব কমিটির সবগুলো মাইম্যান কমিটি আর ত্যাগী নেতাকর্মীদের গণহারে বঞ্চিত করা কমিটি। অতীতেও তারা এভাবে অনিয়মের কমিটি করেছে। আমরা বারবার কেন্দ্রে বিচার দিয়েছি। কিন্তু কোন সমাধান পাইনি। পাল্টা কমিটি দেওয়ার কোন ইচ্ছাই আমাদের ছিল না। কিন্তু এভাবে কতদিন? বাধ্য হয়ে তাদের স্বেচ্ছাচারিতা রুখতে আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো। সবগুলো ইউনিটেই আমরা ত্যাগী বঞ্চিতদের নিয়ে পাল্টা কমিটি দেবো।’

এদিকে মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের পাল্টা কমিটি করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও। গত দুদিন ধরে দফায় দফায় কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করছে তারা। এমনকি ইমু দস্তগীরের দেওয়া কমিটির সভাপতি কাজী নাইমকে কলেজ প্রাঙ্গণে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করা হয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে।

এর আগে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর নগরীর ১৩টি ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করেন। এগুলো হলো বাকলিয়া থানা, চকবাজার থানা, হালিশহর থানা, বায়েজিদ থানা, পাহাড়তলী থানা, হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড, ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড, ১২ নম্বর সরাই পাড়া ওয়ার্ড এবং ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ড।

কমিটি গঠনের পর থেকেই ইমু দস্তগীরের মুঠোফোনে দফায় দফায় চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরাও এই একই অভিযোগের কথা বলছেন। তাদের অভিযোগ এভাবে প্রতিবারই কমিটির অনুমোদন দেওয়ার পরমুঠোফোন বন্ধ করে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা করা আর যাই হোক ছাত্রলীগের মত ঐতিহ্যবাহী একটা ছাত্র সংগঠনের নেতা সুলভ আচরণ হতে পারে না।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!