এবার খুনের মামলার মূল হোতা পেলেন পাঁচলাইশ ছাত্রলীগের দায়িত্ব, বিদ্যার দৌড় ষষ্ঠ শ্রেণি

একের পর এক দাগি আসামি ও সন্ত্রাসীদের ছাত্রলীগ বানাতে ব্যস্ত চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক— এমন অভিযোগ এখন ভাসছে আনাচেকানাচে। বুধবারের (১০ ফেব্রুয়ারি) বিতর্কিত কমিটির রেশ কাটতে না কাটতে বৃহস্পতিবার নতুন আরেক বির্তকের জন্ম দিলেন ইমু-দস্তগীর।

চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই চট্টগ্রাম নগরীর হামজারবাগ এলাকার চাঞ্চল্যকর নুরুল আলম রাজু হত্যামামলাটির রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। আর খুনের সেই মামলার প্রধান আসামি মোহাম্মদ হোসেন রবিনকে বানিয়ে দেওয়া হলো পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত যদিও রবিন ষষ্ঠ শ্রেণির গণ্ডিই পার হতে পারেননি।

পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগের নতুন এই সাধারণ সম্পাদক রবিনের বিরুদ্ধে হত্যামামলা ছাড়াও রয়েছে ইয়াবা, চুরি, মারামারিসহ একাধিক মামলা।

ছাত্রলীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেছেন, একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও হত্যামামলার প্রধান আসামি, যিনি কিনা কলেজের বারান্দাও মাড়াননি কখনও— এমন একজন বিবাহিত লোককে কী বুঝে ইমু-দস্তগীর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে দিলেন তা কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না। ইমু-দস্তগীর ‘টাকা খেয়েই’ এই কমিটি করেছেন বলেও অভিযোগ করছেন এই নেতারা।

মোহাম্মদ হোসেন রবিনের কাছে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে নুরুল আলম রাজু হত্যামামলার আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর আইয়ুব খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজু হত্যামামলার সকল প্রক্রিয়া শেষ। এখন রায়ের অপেক্ষায় আছি আমরা।’

নির্বাচিত হওয়ার পর বুকে টেনে নিলেন কাউন্সিলর মোবারক। এদিকে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বলছেন, একজন বিবাহিত লোককে কী বুঝে সাধারণ সম্পাদক বানানো হল?
নির্বাচিত হওয়ার পর বুকে টেনে নিলেন কাউন্সিলর মোবারক। এদিকে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বলছেন, একজন বিবাহিত লোককে কী বুঝে সাধারণ সম্পাদক বানানো হল?

সাধারণত এমন মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে সাজা কী হয়— সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অপরাধ প্রমাণ হলে আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়ে থাকে।’

রবিনের মত একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে ছাত্রলীগের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোটা কতটুকু যৌক্তিক তা জানার জন্য নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহম্মেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরকে একাধিকবার কল করা হলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

স্থানীয়রা জানান, পাঁচলাইশের হামজারবাগ এলাকায় মোহাম্মদ হোসেনক রবিনকে সকলে ‘পিস্তল রবিন’ নামেই চেনে। কারণ কথায় কথায় পিস্তল বের করা রবিনের স্বভাব। রবিন নগর ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক মিনহাজুল আবেদিন সানির অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। এ কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে মীর জিয়ান আলী খানকে। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মোহাম্মদ হোসেন রবিনকে।

এছাড়া এই কমিটিতে সহ সভাপতি করা হয় শাহাদাৎ হোসেন পারভেজ, খোরশেদ আলী জনি, আব্দুল্লাহ আল আহাদ, নাঈম বিন কাশেম, শাহাজাদা চৌধুরী, সোহরাব হোসেন রবিনকে। স্নেহাশীষ বড়ুয়া সোহেল, সব্যসাচী নন্দী ও মেহেদী হাসানকে যুগ্ম সম্পাদক মনোনীত করা হয়। পাশাপাশি জহিরুল ইসলামকে প্রচার সম্পাদক ও নোমান চৌধুরীকে দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এর আগে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজসহ ১২টি ইউনিটে বির্তকিত কমিটি দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন ইমু-দস্তগীর। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা কমিটিতে মোবাইল চোর, মাদকাসক্ত, শিবির সম্পৃক্ত, হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামীদের কমিটির পদে আনতে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে ইমু-দস্তগীরের বিরুদ্ধে। নগরজুড়ে হাজারো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এ দুই নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে যাচ্ছে। দাহ করছে কুশপুত্তলিকা। এমনকি প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে ইমু-দস্তগীরের ছবিতে জুতোপেটাও করতেও দেখা গেছে ছাত্রলীগের শত শত নেতাকর্মীকে।

বিএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!