লাল কাঁকড়া ও নীল জলরাশির দ্বীপ সোনাদিয়া

এস এম আরোজ ফারুক, কক্সবাজার ॥
বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে কক্সবাজার জেলার অপূর্ব সৌন্দর্য্য বেষ্টিত পর্যটন, কুতুবজোম ইউনিয়নের একটি বিছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়া। পরিকল্পিত উন্নয়ন ও প্রচারের অভাবে দ্বীপটির সৌন্দর্য্য সম্পর্কে ধারনা নেই অনেকের। এই দ্বীপটিতে রয়েছে উপকূল ভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার অপার সম্ভবনা। এরই দাবি তুলেছেন দ্বীপবাসী।

thumbnail_shonadia-pic
সৃষ্টি শৈল্পিক আদলে গড়া কক্সবাজার জেলার পর্যটন শিল্পোর আরেক সম্ভাবনাময় সৈকতের নাম সোনাদিয়া। এখানে রয়েছে বালিয়াড়ি, লাল কাঁকড়া, কাছিম প্রজনন ব্যবস্থা, চামচ ঠোঁটের বাটন পাখি, ঝাউবন এবং অতিথি পাখির অভয়ারণ্য।
দ্বীপবাসীর তথ্যমতে, এখানে শুটকী মহাল রয়েছে ২টি, চিংড়ী চাষ যোগ্য জমিও রয়েছে। রয়েছে প্রাকৃতিক বনায়ন ও বালুময় চরাঞ্চল। দূষণ ও কোলাহলমুক্ত সৈকত, লাল কাঁকড়ার মিলন মেলা, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম, পূর্ব পাড়ার হযরত মারহা আউলিয়ার মাজার ও তার আদি ইতিহাস, জেলেদের সাগরের মাছ ধরার দৃশ্য, সৃর্য অস্তের দৃশ্য, প্যারাবন বেষ্টিত আঁকা-বাঁকা পানি পথে নৌকা ভ্রমণ।

 

যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ দ্বীপে সরকারী বা বেসরকারী ভাবে যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে এ পর্যন্ত পর্যটন আর্কষণের আধুনিক কোন পদক্ষেপ বলতে গেলে নেয়া হয়নি। সঠিক পরিকল্পনা পূর্বক তা বাস্তবায়ন করা গেলে পর্যটন রাজধানী হিসাবে পরিচিত কক্সবাজার শহরের অতীব নিকটবর্তী এ দ্বীপটি পর্যটন বিকাশে অন্যতম স্থান হতে পারে যা দেশের তথা কক্সবাজারের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

 

পাশাপাশি দ্বীপবাসীর জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই দ্বীপে দ্বীপবাসীর সম্পৃক্ততায় কমিউনিটি ভিত্তিক ইকোট্যুরিজম ও কোস্টাল ট্যুরিজম অর্থাৎ উপকূলীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। যা দ্বীপবাসীর বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা সহ অন্যান্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

 

সোনাদিয়ার দ্বীপের নামকরণের সঠিক কোন ঐতিহাসিক তথ্য না থাকলেও সোনাদিয়ার দ্বীপকে ঘিরে আদিকাল হতে সোনা সমতূল্য দামী পন্য মৎস সম্পদ আহরিত হত বলে এই দ্বীপ সোনার দ্বীপ, সোনাদিয়া বলে পরিচিত। তাই ঐতিহাসিক ভাবে না হলেও লোক মুখে উচ্চারিত সোনাদিয়ার কথা বিবর্তনে সোনাদিয়ায় রূপান্তিত হয়। দ্বীপটি সোনাদিয়া হিসাবে বর্তমানে প্রজন্মের কাছে ও বই পুস্তকে স্থান পাচ্ছে।

 
জানা গেছে, মোহনা, চর ও বন ভূমিতে ঊনিশ প্রজাতির চিংড়ি, চৌদ্দ প্রজাতির শামুক, ঝিনুক নানা ধরনের কাঁকড়া, প্রায় আশি প্রজাতির সাদা মাছ, পঁয়ষট্টি প্রজাতির স্থানীয় ও যাযাবর পাখি এবং কমপক্ষে তিন প্রজাতির ডলফিন বিচরণ করে থাকে এই দ্বীপে। বাণিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছের মধ্যে কোরাল, বোল, বাটা, তাইল্যা, দাতিনা, কাউন (কনর মাছ) ও প্যারাবন সমৃদ্ধ এলাকার অন্যান্য মাছ পাওয়া যায়। সরকারীভাবে পর্যটনের ব্যবস্থা করলে দ্বীপের অবহেলিত মানুষের কর্ম সংস্থান হবে এবং সরকারী খাতে প্রচুর রাজস্ব আয় হবে।

 
কক্সবাজার থেকে স্পীডবোটে দ্বীপে যেতে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট। যাতায়াতে কম সময় লাগায় পর্যটকরা দ্বীপটির সৌন্দর্য্য উপভোগ করে দিনে গিয়ে দিনেই শহরে ফিরে আসতে পারে। এতে করে খুব কম সময় ব্যায় করে ভ্রমন পিঁপাসুরা দেখে আসতে পারে নীল জলরাশীর এই দ্বীপটি।

 
তবে দ্বীপটিতে পর্যটকদের আগম বাড়তে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়ন, জেটি ঘাট স্থাপন, পাবলিক টয়লেট স্থাপন, বসার স্থান, মানসম্মত দোকানের ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি তুলেছেন দ্বীপবাসি।

 
দ্বীপটির উন্নয়ন সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন উন্নয়নে সরকারের মহা পরিকল্পনার মধ্যে সোনাদিয়া দ্বীপও রয়েছে। এই দ্বীপটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের পরিকল্পনা আছে। উন্নয়নের কাজ শুরু হলেই সোনাদিয়া আর অবহেলিত থাকবে না।

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!