৭০ প্রবাসী এবার ‘সিআইপি’, ২৩ জনই চট্টগ্রামের

সবচেয়ে বেশি ফটিকছড়ি-রাউজান-হাটহাজারীর

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মোট ৭০ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি-এনআরবি) হিসেবে নির্বাচিত করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ২৩ জনই চট্টগ্রামের বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সিআইপি-এনআরবির এই তালিকায় দেখা গেছে, চট্টগ্রামের বাসিন্দা ২৩ জনের মধ্যে ফটিকছড়ির সর্বাধিক ৫ জন, রাউজান ও হাটহাজারীর ৪ জন করে, মিরসরাইয়ের দুজন এবং সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ ও সীতাকুণ্ডের একজন করে বাসিন্দা এতে স্থান পেয়েছেন।

অন্যদিকে তালিকায় আরব আমিরাতপ্রবাসীদের প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা গেছে। ১৫ জনই মধ্যপ্রাচ্যের ধনী ওই দেশটির। এরপরই ওমানপ্রবাসী ৬ জন তালিকায় স্থান পেয়েছেন। এছাড়া মালয়েশিয়া, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য থেকে স্থান পেয়েছেন একজন করে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী অধ্যূষিত সৌদি আরব থেকে এবার চট্টগ্রামের কোনো বাসিন্দা সিআইপি তালিকায় আসেননি।

প্রতি বছর মোট তিনটি ক্যাটাগরিতে এ সম্মাননা দেওয়া হয়ে থাকে। ক্যাটাগরিগুলো হলো- ক) বাংলাদেশে শিল্পক্ষেত্রে সরাসরি বিনিয়োগকারী অনিবাসী বাংলাদেশি, খ) বাংলাদেশে বৈধ চ্যানেলে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী অনিবাসী বাংলাদেশি এবং গ) বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক অনিবাসী বাংলাদেশি।

সিআইপি-এনআরবি সম্মাননা-২০১৮-এ বাংলাদেশে শিল্পক্ষেত্রে সরাসরি বিনিয়োগকারী অনিবাসী ক্যাটাগরিতে একজন, বাংলাদেশে বৈধ চ্যানেলে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী অনিবাসী বাংলাদেশি ক্যাটাগরিতে ৫৯ জন, বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক অনিবাসী বাংলাদেশি ক্যাটাগরিতে ১০ জনসহ সর্বমোট ৭০ জন এ মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রবাসী দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে নির্বাচিত সিআইপিদের মধ্যে সম্মাননা ও সিআইপি কার্ড দেওয়া হবে।

বাংলাদেশে বৈধ চ্যানেলে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী অনিবাসী বাংলাদেশি ক্যাটাগরিতে ২০২৩ সালের জন্য নির্বাচিত ৫৯ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মধ্যে ২২ জনই চট্টগ্রামের বাসিন্দা এবং অপর একজন কক্সবাজারের।

ফটিকছড়ির পাঁচজন

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বাসিন্দা পাঁচ প্রবাসী এবার সিআইপি হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন ওমানপ্রবাসী, একজন দুবাইপ্রবাসী ও অপর একজন পোল্যান্ডপ্রবাসী। এদের মধ্যে রয়েছেন ওমানের আলী এন্ড ইউসুফ ট্রেডিং কোম্পানির কর্ণধার মোসলেহ উদ্দীন। তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুরের বাসিন্দা শাহাব উদ্দীন ও সেলিনা আক্তারের সন্তান। এবার সিআইপি হয়েছেন দুবাইয়ের দেইরা ইমন অপটিক্যাল এলএলসির কর্ণধার সৈয়দ মামুনুর রশিদ। তিনি নানুপুরের বাসিন্দা সৈয়দ ওসমান গণি ও জাহানার বেগমের সন্তান। এই তালিকায় আছেন পোল্যান্ডের ম্যালোপোলস্কির ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন। তিনি রোসাংগিরির বাসিন্দা হাছি মিয়া ও সালমা বেগমের সন্তান। এই সম্মাননা পেয়েছেন ওমানের মাস্কাটে আবু আলী ট্রেডিংয়ের কর্ণধার সিরাজুল হক। তিনি নাজিরহাট পৌরসভার পূর্ব ফরহাদাবাদের বাসিন্দাআহমদ ছাপা ও লায়লা বেগমের সন্তান। এছাড়া আরও সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন ওমানের রুয়ি আল হামরিয়ার আল বুস্তান ওয়ান্ডারফুল ট্রেডিং কোম্পানির কর্ণধার কবির আহামদ। তিনি লেলাং ইউনিয়নের দক্ষিণ গোপালঘাটার বাসিন্দা মফজল আহামদ ও মোমেনা খাতুনের সন্তান।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের চারজন

দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিন উপজেলার বাসিন্দা তিন প্রবাসী এবার সিআইপি হয়েছেন। এদের একজন আরব আমিরাত প্রবাসী, একজন ওমানপ্রবাসী এবং অপর একজন মালয়েশিয়াপ্রবাসী। এদের মধ্যে রয়েছেন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের জেএলএন কেলাং লামার ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার উত্তর পদুয়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম ও শাহানুর বেগমের সন্তান। এবার সিআইপি হয়েছেন আরব আমিরাতের আজমানের ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন। তিনি সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর কাঞ্চনার বাসিন্দা ছিদ্দিক আহমদ ও মমতাজ বেগমের সন্তান। এছাড়া এই সম্মাননা পেয়েছেন ওমানের রুয়ি আল হামরিয়ার ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া বাচা। তিনি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণ হাশিমপুরের বাসিন্দা কবির আহমেদ ও রাবিয়া খাতুনের সন্তান।

হাটহাজারীর চারজন

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা চার প্রবাসী এবার সিআইপি হয়েছেন। এদের সকলেই আরব আমিরাত প্রবাসী। এদের মধ্যে রয়েছেন আরব আমিরাতের শারজার ব্যবসায়ী আনিস উদ্দিন। তিনি গুমানমর্দনের নুরুল আলম ও নুরজাহান বেগমের সন্তান। এবার সিআইপি হয়েছেন দুবাইয়ের উম রামুল এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। তিনি মেখল মোজাফফরপুরের বাসিন্দা সাহেব মিয়া ও জয়নাব খাতুনের সন্তান। আরও সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন দুবাইয়ের দেইরাভিত্তিক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। তিনি বুড়িশ্চর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সোলাইমান ও রেহেনা বেগমের সন্তান। এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক অনিবাসী বাংলাদেশি ক্যাটাগরিতে ২০২৩ সালের জন্য নির্বাচিত বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (অনিবাসী বাংলাদেশি) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আরব আমিরাতের শারজার আল ফালাক ট্রেডিংয়ের কর্ণধার মোহাম্মদ সেলিম। তিনি ফতেয়াবাদ দক্ষিণ পাহাড়তলীর বাসিন্দা আবদুল ছবুর ও রিজিয়া বেগমের সন্তান।

রাউজানের চারজন

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বাসিন্দা চার প্রবাসী এবার সিআইপি হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনই আরব আমিরাতপ্রবাসী এবং অপর একজন ওমানপ্রবাসী। এদের মধ্যে রয়েছেন দুবাইয়ের রাস আল খোর ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এলাকার ব্যবসায়ী আবু বক্কর। তিনি উত্তর গশ্চির বাসিন্দা আব্দুল হাফেজ ও নাজমা খাতুনের সন্তান। এবার সিআইপি হয়েছেন ওমান মাসকাটের আল তাজ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং এন্ড কনট্রাকটিং কোম্পানির কর্ণধার তাসলিমা করিম মিলি। তিনি বাগোয়ান গশ্চির বাসিন্দা আশরাফুর রহমানের স্ত্রী। এই সম্মাননা পেয়েছেন আবুধাবীর আল আইন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার রাউজান মেকানিক এলএলসির কর্ণধার আবদুল হালিম। তিনি দক্ষিণ নোয়াপাড়ার বাসিন্দা আবদুল নবী সারাং ও নাজমা খাতুনের সন্তান। এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক অনিবাসী বাংলাদেশি ক্যাটাগরিতে ২০২৩ সালের জন্য নির্বাচিত বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (অনিবাসী বাংলাদেশি) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আরব আমিরাতের আল আওইরের রাস আল খোরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ এরশাদুল হক। তিনি সুলতানপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফ ও জারিয়া বেগমের সন্তান।

চট্টগ্রাম নগরের চারজন

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দা চার প্রবাসী এবার সিআইপি হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনই আরব আমিরাতপ্রবাসী এবং অপর একজন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। এদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের পিয়াসমার্শ গিল্ড ফোর্ডের সেন্ট্রো সোর্সিং ইউকে লিমিটেডের কর্ণধার তাহসিন উদ্দিন খান। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটার বাসিন্দা সাইফউদ্দিন খান ও নূরজাহান খানের সন্তান। সিআইপির মর্যাদা পেয়েছেন আরব আমিরাতের আবুধাবীর জবরুত স্টিল সাপ্লাই কোম্পানির কর্ণধার মোহাম্মদ জবরুত খান। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ খুলশীর ভিআইপি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এজাহার মিয়া মিস্ত্রি ও সাকিনা খাতুনের সন্তান। এছাড়া সিআইপি হয়েছেন আবুধাবীর মুসাফ্ফাহ এলাকার আল তাইয়ার অটো ইলেকট্রিকের কর্ণধার মুহাম্মদ ওসমান খান। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ের খাজা রোডের বাসিন্দা মোহাম্মদ মুন্সি খান ও লায়লা বেগমের সন্তান। এই সম্মাননা আরও পেয়েছেন আবুধাবীর আল দানাহভিত্তিক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আরিফ উদ্দিন। তিনি চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ের চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আবদুল আজিজ ও মাহফুজা বেগমের সন্তান।

মিরসরাইয়ের দুজন

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা দুই প্রবাসী এবার সিআইপি হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন আরব আমিরাতপ্রবাসী এবং অপর একজন ওমানপ্রবাসী। এদের মধ্যে রয়েছেন আবুধাবীর বোয়িং এক্সপ্রেস ট্রাভেল এলএলসির কর্ণধার মোহাম্মদ ইউসুফ শরিফ। তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জের ধুম এলাকার বাসিন্দা নিগার সুলতানা ও শামসুরনেছার সন্তান। এছাড়া সিআইপি হয়েছেন দুবাইয়ের ইন্টারন্যাশনাল সিটির ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জিয়া উদ্দীন। মিরসরাইয়ের ওসমানপুর এলাকার বকন্দিপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল হাই ও ফাতেমা বেগমের সন্তান।

কক্সবাজারের এক

কক্সবাজার থেকে এবার একজনই সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন দুবাইয়ের মিরডিফ এলাকার সিক্রেট ক্লোকস এলএলসির কর্ণধার মাওলানা জয়নাল আবেদীন। তিনি কবির আহমেদ ও শামসুন্নাহার বেগমের সন্তান

এছাড়া এবার সিআইপি সম্মাননা পেয়েছেন আরব আমিরাতের শারজার ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইমরান। তিনি সীতাকুণ্ডের পূর্ব মুরাদপুরের জামাল উল্লাহ ও আনোয়ারা বেগমের সন্তান।

যেসব সুবিধা পাবেন এনআরবি-সিআইপিরা

নির্বাচিত সিআইপিদের (এনআরবি) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সরকার অনুমোদিত পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। সিআইপি কার্ডের মেয়াদ থাকাকালীন তাঁরা বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশপত্র পাবেন ও সরকার নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট বিষয়ক নীতিনির্ধারণী কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। সিআইপিরা দেশ-বিদেশে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অগ্রাধিকার পাবেন।

এছাড়া জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে বিদেশে থাকা বাংলাদেশ মিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাবেন তাঁরা। সড়ক, বিমান, নদীপথে ভ্রমণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকিট পাবেন। হোটেল-রেস্তোরাঁয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা পাবেন। বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ-২ চামেলী ব্যবহার এবং স্পেশাল হ্যান্ডলিং ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।

সিআইপিরা স্ত্রী-স্বামী, নির্ভরশীল পুত্র-কন্যা ও নিজেদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেবিন সুবিধা পাবেন। সিআইপি ব্যক্তি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবেন এবং তাদের বিনিয়োগ ‘ফরেন প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট (প্রমোশন অ্যান্ড প্রটেকশন) আইন, ১৯৮০’ এর বিধান অনুযায়ী সংরক্ষণ করা হবে বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশে উপস্থিত থাকলে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে এবং সিটি করপোরেশন আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন সিআইপিরা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!