৫ মিনিটেই ‘হাওয়া’ কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট, সহজে মেলে কালোবাজারে

ঢাকাগামী ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’র সব টিকিট সকাল ৮টায় অনলাইনে ছাড়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ‘হাওয়া’ হয়ে যায়। এমন চিত্র প্রতিদিনের। স্টেশনে এসে টিকিট না পেয়ে কালোবাজারিদের কাছ থেকে চড়া দামে পর্যটকদের টিকিট কিনতে হয়। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্যের জাল। টিকিট কেন হাওয়া হয়ে যায়, কারা হাওয়া করে দিচ্ছে— এমন সব প্রশ্ন সামনে রেখে কালোবাজারি রোধে স্বপ্রণোদতি হয়ে মামলা করেন এক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এরপরই বিষয়টি তদন্তের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে র্যা ব-১৫ এর হাতে। এর মধ্যে কিছু কিছু টিকিট অনলাইনে মিললেও কালোবাজারিরা এখনও দাপটের সঙ্গেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে আদালতে মামলার পর ট্রেনে পস মেশিন দিয়ে যাত্রীর টিকিটের সঙ্গে এনআইডির তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক যাত্রীর তথ্যে গরমিল থাকায় জরিমানাও করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর পর থেকে প্রায় সব টিকিটই কালোবাজারিদের দখলে চলে যায়। প্রতিদিন সকাল ৮টায় অনলাইনে ছাড়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ৭৮০টি টিকিট হাওয়া হয়ে যায়। যাত্রীরা স্টেশনের কাউন্টারে গেলে জানিয়ে দেওয়া হয় টিকিট শেষ। পরে স্টেশন ও আশপাশের কালোবাজারির কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি দামে সেই টিকিট কিনতে হয়।

আরও জানা গেছে, টিকিট কালোবাজারিতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি), গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ, স্টেশন মাস্টার ও বুকিং সহকারীরা জড়িত। সহকারী মাস্টার আতিকুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, বুকিং সহকারী এবারত হোসেন, নেজাম উদ্দিন, তমাল বড়ুয়াও এতে জড়িত রয়েছেন। এছাড়া আরএনবির রুবেল শেখ ও হেলাল উদ্দিন স্টেশনে চড়া দামে টিকিট বিক্রি করে থাকেন।

সহজ ডটকমের কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলামের কারসাজিতে এসব টিকিট কালোবাজারির হাতে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে তাকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এছাড়া কক্সবাজার স্টেশনের আশপাশের ভ্রাম্যমাণ টং দোকান ও কয়েকজন ব্যক্তি যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করেন। ট্রেন টিকিট এক্সামিনার (টিটিই) যাত্রীর টিকিট ও এনআইডির তথ্য মিলিয়ে না দেখার ফলে কালোবাজারি থেকে কেনা টিকিটে যাত্রীরা সহজে ভ্রমণ করতে পারেন।

এদিকে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি নিয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১-এর বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা রোববার (১৭ ডিসেম্বর) বিকালে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত র্যা ব-১৫ কে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।

যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। কোনো ধরনের কালোবাজারি করা হয় না। টিকিট শতভাগ অনলাইনে পাওয়া যায়। সাংবাদিকরা এগুলো না বুঝে নিউজ করেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তারেক মো. ইমরান বলেন, ‘টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। চাহিদার বিপরীতে যোগান কম বলে এমন হয়। কক্সবাজারের কোনো টিকিট কালোবাজারি হয় না। তবে হয়তো যাত্রীর এনআইডি ও টিকিটের তথ্যের অমিল থাকতে পারে। অন্যের টিকিটে ভ্রমণের দায়ে আমরা নিয়মিত জরিমানা আদায় করি।’

এ বিষয়ে জানতে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) চিফ কমান্ড্যান্ট রেজোয়ানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে যদি টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ উঠে তা তদন্ত করা হবে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!