৫০ লাখ চাঁদা চেয়ে পাঁচলাইশের ওসি নাজিম আবার মামলার জালে, তদন্তে পিবিআই

চট্টগ্রাম নগরীর হামজারবাগে বাড়ি দখল ও চাঁদা দাবির অভিযোগে পাঁচলাইশ থানার বিতর্কিত ওসি নাজিম উদ্দীন ও এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শামীমা ওয়াহেদ নামে এক নারী। তিনি নগরীর পাঁচলাইশ থানার জাংগালপাড়া এলাকার মৃত ওয়াহেদ আজগর চৌধুরীর স্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলিউল্লাহর আদালতে এই মামলা দায়ের করা হয়। আদালত মামলাটিকে ক্রিমিনাল মামলা হিসেবে আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআইকে) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দীন ছাড়া অপর দুই আসামি হলেন আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী এবং এসআই মো. জাকির।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শামিমার স্বামী ওয়াহেদ আজগর চৌধুরী ২০১২ সালে মারা যাওয়ার পর থেকে মামলার বাদি ও তার দুই সন্তানকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা ছাড়াও সামাজিকভাবে হয়রানি করে আসছিলেন আসামি আহমেদ ফয়সাল। মামলার বাদি ও তার সন্তানদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে আসামি আহমেদ ফয়সাল সকল ধরনের চেষ্টা করে আসছেন।

অভিযোগে জানা যায়, পাঁচলাইশ থানার বিতর্কিত ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদারের নির্দেশে এসআই মো. জাকির আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে শামিমা ওয়াহেদ ও এ মামলার সাক্ষী সাজ্জাদুল ইসলাম ও রাশেদুল ইসলামকে গত ২৭ জুলাই দুপুরে থানায় ওসির রুমে ডেকে নিয়ে অশালীন ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেয়। তারা এই বলেও ভয়ভীতি দেখান, যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ওই বাড়ি ছেড়ে না দেয় তাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে শামীমা ও অন্যদের জেলের ভাত খাওয়াবে।

অভিযোগের বিবরণী থেকে জানা যায়, গত ১২ আগস্ট সকালে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিমের নির্দেশে আহমেদ ফয়সাল ও এসআই জাকিরসহ আরও অজ্ঞাত ৫-৬ জন সন্ত্রাসী হকিস্টিক, লাঠি, রামদা নিয়ে গৃহবধূ শামীমা ওয়াহেদের বাসায় ঢোকে। এ সময় বাসা থেকে শামীমা ও তার ভাইকে বের করার জন্য জোর-জবরদস্তি করে। একইসঙ্গে আহমেদ ফয়সালের কথায় বাদির ভাই সাজ্জাদুলকে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়।

এ সময় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা সাজ্জাদুলকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। এতে তার শরীরে প্রচণ্ড জখম হয়। পরে প্রাণভিক্ষা চাইলে আসামিরা জানায় ওসি নাজিমের নির্দেশ ১৫ দিনের মধ্যে আসামিদেরকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। আর যদি না দেয়, তাহলে সন্ত্রাসী দিয়ে পিটিয়ে বের করে দেবে এবং তাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হবে।

এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদারের মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে একই নম্বরে ওসি তদন্ত আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ওসি স্যার এখন ছুটিতে। আমরা এই বিষয়ে কিছু জানি না। আমাদের কাছে অর্ডার আসলে পরর্বতীতে দেখা যাবে আসলে কী করা যায়। এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।’

এর আগে চট্টগ্রামে কিডনি ডায়ালাইসিসের খরচ বাড়ানোর প্রতিবাদ করায় মো. মুনতাকিম প্রকাশ মোস্তাকিম নামের এক যুবককে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে পাঁচলাইশ থানার ওসি এবং এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মামলা করা হয়। ওই সময় মেডিকেল পরীক্ষা ও গণমাধ্যমে মুনতাকিমের যেসব ছবি প্রকাশ হয়, সেখানে মোস্তাকিমের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গিয়েছিল।

এরপর আদালতের আদেশ অনুযায়ী মোস্তাকিমের পক্ষে চট্টগ্রাম সিআইডির পুলিশ সুপার মো. শাহনেওয়াজ খালেদ গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন ও এসআই আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করেন। কিন্তু মামলা হওয়ার আগের দিন হঠাৎ ছুটিতে চলে যান অভিযুক্ত ওসি নাজিম এবং এসআই। অথচ ফৌজদারি মামলা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

পরে সিআইডি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে জানায়, মুনতাকিমকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের কিছুই পাওয়া যায়নি এবং মামলায় যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে সেগুলোরও সত্যতা পাওয়া যায়নি।

অথচ আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের আগে বাদীকেও কিছু জানানো হয়নি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!