১৭ কোটি টাকার ভূমি বন্দর কর্মকর্তার দখলে, অভিযোগ দুদকে

ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া সম্পত্তির অতিরিক্ত ১০৪ শতক ভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে জয়নাল আবেদীন (৪৩) নামে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে। দখলে নেওয়া জায়গা তার নামে রেকর্ডও করেন তিনি। ওই জায়গার মূল্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা।

অভিযুক্ত জয়নাল আবেদীন চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানাধীন নাজির পাড়া খায়রুল আলমের বাড়ির মৃত শেখ মোহাম্মদের পুত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল আদালতে বিচারাধীন একটি ভূমি দখল করতে জয়নালের নেতৃত্বে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায় ৫-৮ জন ভূমিদস্যু। এতে ওই ভূমি মালিকের আড়াই লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘটনার পর জয়নাল আবেদীনসহ আটজনের বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্ত ওসমান বাহাদুর। ২০১৭ সালের ১২ জুন জায়গা কিনতে অন্য একটি পক্ষকে বাধ্য করে অভিযুক্ত জয়নাল। এ ঘটনায়ও ক্রেতার ওপর হামলা ও ভাংচুর চালান তিনি। এ ঘটনার পর জয়নাল আবেদীনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর তার এক আত্মীয়ের ৩ শতক ভূমি জবর-দখল করেন জয়নাল। পরে আদালতে গিয়ে উচ্ছেদ মামলা দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্ত ওলেমা খাতুন নামের এক নারী।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক নিউমুরিং এলাকার এক নারী বলেন, ‘জয়নাল একজন ভূমিদস্যু। সে প্রথমে কৌশলে জায়গার বায়না নেয়। পরে ওই জায়গাসহ আশপাশের অতিরিক্ত জায়গা দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তার বিশেষ দাপট হলো তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসমান বাহাদুর বলেন, ‘বন্দরের চাকরির প্রভাব খাটিয়ে আমার ১০৪ শতক জায়গা জয়নাল নিজের নামে রেকর্ড করে। এ জায়গা দখল করতে বিভিন্ন সময়ে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায় তার লোকজন। আমি পড়াশোনা তেমন জানি না, আইনও বুঝি না। তাই দুদকের মাধ্যমে এর প্রতিকার চাইতে এসেছিলাম।’

জয়নালের হুমকি প্রসঙ্গে ওসমান বাহাদুর আরও বলেন, ‘আমাকে দুর্বল করতে আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলাও করেন তিনি। এমনকি জয়নাল হুমকি দিয়ে বলেছেন জায়গা দখলে নিতে তোমার পেছনে প্রতিমাসে ১ লাখ টাকা খরচ করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে জয়নালকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘দুদকে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা সত্য নয়। যেসব জায়গার কথা বলছেন সেগুলো আমার ও পরিবারের কেনা সম্পত্তি। মিথ্যা অভিযোগ এনে আমার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। আমিও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’

চট্টগ্রাম বন্দর নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক রেজাউল হক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর কোন কর্মচারী কিংবা কর্মকর্তা এই ধরনের অন্যায় কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দুদকের গণশুনানিতে এই ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে এসব তথ্য তুলে ধরেন ওসমান বাহাদুর। তার অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন দুদকের কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম।

মুআ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!