হতাশায় আত্মহননে অমিত মুহুরীর ছায়াসঙ্গী পারভেজ

অমিত মুহুরী— নামটি চট্টগ্রাম নগর শুধু নয়, দেশের সর্বত্র আলোচিত একটি নাম। কারাগারে নিহত হওয়ার ঘটনায় পুরো দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। তিরিশের কোটায় যে ছেলেটির বয়স, তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কৌশল হার মানিয়েছিল বাঘা বাঘা সন্ত্রাসীদেরও। তার সকল অপকর্মের সহযোগী কামরুল ইসলাম পারভেজের আত্মহত্যার ঘটনায় আবারো আলোচনায় এলো অমিত মুহুরীর নাম।

প্রেমঘটিত ঘটনায় ২০১২ সালে অমিত মুহুরী তার অপর বন্ধু মো. রাসেল নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে নগরী ডিসি হিলে বেদম পিটিয়ে আহত করেছিল। তখন যুবলীগের বিতর্কিত নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর সেটা মিটমাট করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এতেও ক্ষোভ কমেনি অমিতের। পারভেজের সহযোগিতায় রাসেলকে নিয়ে আগ্রাবাদ জাম্বুরী মাঠে পেটানোর পাশাপাশি ব্লেড দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে মনের ঝাল মিটিয়েছিল অমিত মুহুরী।

রাসেলের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, তাকে মৃত ভেবে জাম্বুরি মাঠে ফেলে চলে যায় অমিত, পারভেজ ও তাদের অন্য সহযোগীরা। পরে রাসেলকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রাসেলের। রাসেল হত্যাকাণ্ডে দায়ের হওয়া মামলায় অমিত মুহুরী ছিল প্রধান আসামি, আত্মহত্যাকারী পারভেজ ছিল দ্বিতীয় আসামি।

কামরুল ইসলাম পারভেজের পিতা জাহাঙ্গীর খান জানান, শনিবার (১৪ মার্চ) রাতে তিনি বাসায় ফিরলে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ পান। অনেক ডাকাডাকির পরও পারভেজ ভেতর থেকে কোন সাড়া দেয়নি। পরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইনে (৯৯৯) ফোন করলে কোতোয়ালী থানা থেকে পুলিশ আসে। পুলিশের সহযোগিতায় দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে স্ত্রীর শাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পান পারভেজকে। তাকে ওই অবস্থা থেকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোর ৪টায় তার মৃত্যু হয়। মোমিন রোডের এফজি হিলটাউন বিল্ডিংয়ের সপ্তম তলায় কামরুল ইসলাম পারভেজের বাসা।

তার আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, কামরুল ইসলাম পারভেজ নামের ২৭ বছরের এক যুবক গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমরা ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারকে লাশ বুঝিয়ে দিয়েছি।

ভয়ংকর সন্ত্রাসী অমিতের সহযোগী পরিচয়টা আড়াল করে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে পারভেজের লাশ দাফনের যাবতীয় কার্যক্রম চলে একপ্রকার গোপনীয়তায়। তাকে দাফন করা হয় নগরীর চৈতন্যগলিতে। পারভেজের দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে।

অমিত মুহুরী মূলত ২০১৩ সালে সিআরবি ডবল মার্ডারের পর আলোচনায় আসে। এরপর ইমরানুল করিম ইমনকে হত্যার ঘটনায় হতবম্ব হয়ে যান খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট ইমনকে নিজের মোমিন রোডস্থ টর্সার সেলে মেরে চার দিন পর চুন-এসিড-ইট-বালি-সিমেন্ট মিশিয়ে ড্রাম ভরে দিঘীতে ফেলে দিয়েছিল। এই ঘটনায় ২ সেপ্টেম্বর অমিত গ্রেপ্তার হয় কুমিল্লার একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র থেকে।

এর আগের বছর সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ইরফানুল হক থেকে মোটর সাইকেলে নিয়েছিল অমিত। ইরফান প্রতিবাদ করলে অমিত স্পটেই গুলি করে হত্যা করেছিল তাকে। এলাকাবাসী জানান আত্মহত্যাকারী পারভেজ ছিল অমিতের ছায়াসঙ্গী। ২০১৯ সালের ২৯ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩২ নম্বর সেলে খুন হয়েছিল ঠাণ্ডা মাথার খুনি অমিত মুহুরী।

জানা গেছে, পারভেজ মাদকাসক্ত হওয়া এবং কথায় কথায় নির্যাতন করার কারণে তার স্ত্রী কিছুদিন আগে তাকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যান। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে পরিবারের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে ভয়ঙ্কর এই উঠতি সন্ত্রাসী আত্মহননের পথ বেঁচে নেন।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!