সৌম্য-মোসাদ্দেক ঝড়ে সপ্তমবারে এসে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালের পর সাকিব-মুশফিকের সেই কান্নার দৃশ্য এখনও অনেকে ভুলতে পারেননি। কত কাছে এসে কত দূরে থেকে গেল শিরোপা জয়! পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে চ্যাম্পিয়ন হওয়া হলো না বাংলাদেশের। তারও আগে, ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার মুরালিধরন হয়ে গিয়েছিলেন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের স্বপ্ন থেকে গেল অধরা। ২০১৮ সালের শুরুতে শ্রীলঙ্কার নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে নিশ্চিত জয়ের ম্যাচটি বাংলাদেশের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিলেন ভারতের দিনেশ কার্তিক। শিরোপা অধরাই থেকে গেল এবারও। এরপর এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলল বাংলাদেশ। কিন্তু শিরোপা আর হাতে আসলো না।

কতবার এই শিরোপাটার একেবারে নিশ্বাঃস ফেলা দূরত্ব থেকে ফিরে আসতে হয়েছে বাংলাদেশকে! ছয়বার ত্রিদেশীয় কিংবা তারও বেশি দেশ নিয়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিল টাইগাররা। কিন্তু টেস্ট পরিবারের সদস্য হওয়ার পর গত ১৯ বছরে সেই অধরা সাফল্যটা কোনোভাবেই ধরা দিচ্ছিল না। বাংলাদেশ যে বাধাটা কেন যেন উতরে যেতে পারছিল না এত দিন। গেরোটা শুক্রবার ছুটল ডাবলিনে। ইতিহাসের সাক্ষী হলো মালাহাইড। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ফাইনাল জিতল বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের এ কাব্যিক জয়ের দুই নায়ক সৌম্য সরকার আর মোসাদ্দেক হোসেন।

২৪ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য ২১০ রান। টি-টোয়েন্টি জমানায় ২৪ ওভারে লক্ষ্য কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। তামিম-সৌম্যর জুটি ৫ ওভারের পাওয়ার প্লেতেই এনে দেয় ৫১। এমন একটা শুরুই তো দরকার ছিল! সৌম্য ছিলেন দারুণ মেজাজে। তামিম শুধু প্রান্ত বদল করে দিচ্ছিলেন। সৌম্যর রান তখন ৩৯, তামিম ইকবালের ১০। ছয়টি চার আর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ফেলেছেন সৌম্য। তামিম তখনো বাউন্ডারির খাতা খোলেননি। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারটি করতে আসা শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে পরপর দুই বলে চার মেরে তৃতীয় বলে ক্যাচ তুলে দিলেন এর আগে একবার প্রাণে বেঁচে যাওয়া তামিম। ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটির ৪২-ই এল বাউন্ডারি থেকে। ব্যাটিং অর্ডারে পদোন্নতি পেয়ে তিনে নামা সাব্বির দ্রুত আউট হয়ে ভয়ই ধরিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে। গ্যাব্রিয়েল চার বল আর ১ রানের মধ্যে ২ উইকেট তুলে এনে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরান ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কিন্তু তাতেও সৌম্য টলেননি। মুশফিকের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটিটাও হলো ৩৩ বলে। ৯টি চার আর তিন ছক্কায় ৪১ বলে ৬৬ রানের দুরন্ত সাহসী এক ইনিংস খেলা সৌম্য বদলি ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ তুলে ফিরলেন।

সৌম্য শুরু করেছিলেন, তবে কঠিন সমীকরণ মেলাতে গিয়ে দেখতে দেখতে ১৫.৪ ওভারে ১৪৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। ৪৮ বলে দরকার ৬৫ রান। জয়ের স্বপ্ন ধূসর হওয়ার সংশয় যখন, তখনই আবির্ভাব মোসাদ্দেকের। ডাবলিনে শুক্রবার বৃষ্টি হয়েছে। মোসাদ্দেকের সৌজন্যে ঝড়ও উঠল। ১৮ বলে যখন দরকার ২৭ রান, ম্যাচটা চকিতে নিজেদের হাতের মুঠোয় আনলেন মোসাদ্দেক। অ্যালেনের করা ২২তম ওভারে ৬, ৬, ৪, ৬, ২, ১—২৫ রান তুলে এক ঝটকায় সমীকরণ করে ফেললেন একেবারে সহজ। এরই ফাঁকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডও গড়লেন। শুধু তা–ই নয়, দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে মুগ্ধ করলেন মোসাদ্দেক। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে গড়লেন ৪১ বলে ৭০ রানের জুটি। সব সংশয় দূর করে এই জুটিই বাংলাদেশকে নিয়ে গেল জয়ের প্রান্তে।

বৃষ্টির কারণেই ম্যাচের ভাগ্য বারবার বদলেছে। কমেছে আকার। বৃষ্টি নামার আগে ২০.১ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ১৩১ রান। ৫ ঘণ্টার বেশি সময় বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকার পর ম্যাচ ২৪ ওভারে নেমে আসে। বাকি ৩.৫ ওভারে ক্যারিবীয়দের হাত খুলে মারতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। আর ২১ যোগ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থামে ১ উইকেটে ১৫২ রানে। ডিএল সমীকরণে বাংলাদেশের লক্ষ্যটায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের তোলা রানের সঙ্গে যোগ হয় আরও ৫৮। বৃষ্টিবাধায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসায় কঠিন লক্ষ্য, আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন—সব বাধা উতরে বাংলাদেশ দূর করেছে ফাইনাল হারের দুঃখ। লিখেছে নতুন ইতিহাস।

এর আগে টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাট করতে নামার পর ২০.১ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩১ রান তোলার পরই নামে বৃষ্টি। সে অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে খেলা বন্ধ থাকার পর আবার বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১০টায় খেলা শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়।

বৃষ্টির আগে সাই হোপ ছিলেন ৫৬ বলে ৬৮ এবং সুনিল আমব্রিস ৬৫ বলে ব্যাট করছিলেন ৫৯ রানে। এরপর খেলা শুরু হলে ৬৪ বলে ৭৪ রান করে আউট হন সাই হোপ। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে তার ক্যাচ ধরেন মোসাদ্দেক সৈকত। সুনিল আমব্রিস ৭৮ বলে থাকেন ৬৯ রানে অপরাজিত। ড্যারেন ব্র্যাভো অপরাজিত থাকেন ৩ বলে ৩ রান করে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!