সিডিএর দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেবেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভাগীয় কমিশনারের ডাকা বৈঠকে আসেননি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রকল্পের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা। এ নিয়ে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম। ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা ও অসহযোগিতার অভিযোগে মন্ত্রিপরিষদ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্পের কাজ করছে একাধিক সংস্থা। এরপরও সম্প্রতি টানা পাঁচ দিন পানির নিচে ছিল বন্দরনগরীর বেশিরভাগ এলাকা।

জলাবদ্ধতা নিয়ে রোববার (১৩ আগস্ট) সব সংস্থার প্রতিনিধিকে নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। কিন্তু নগরীর সার্কিট হাউসের ওই বৈঠকে আসেননি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ও সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দীন এবং উপপ্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) কাজী কাদের নেওয়াজ। এ নিয়ে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা ও অসহযোগিতার অভিযোগ মন্ত্রিপরিষদ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শুরুতেই চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা প্রকল্পের অপর পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, প্রকল্পের অধীনে ৩৬ খালের মধ্যে ১৬টির কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এগুলো তারা হস্তান্তরে আগ্রহী। এ সময় বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম প্রক্রিয়া জানতে চাইলে শাহ আলী বলেন, ‘সিডিএ চুক্তির মাধ্যমে খালগুলো সিটি করপোরেশনকে দেবে।’ তবে আপত্তি জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, প্রকল্প শেষ-প্রতিবেদন (পিসিআর) পাওয়ার আগে খাল বুঝে নিলে আইনি জটিলতা দেখা দেবে।

পরে বিভাগীয় কমিশনার জানতে চান, বৈঠকে সিডিএর প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রকল্প পরিচালক এসেছেন কিনা? আসেননি জানানো হলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা থাকতে পারবেন না শুনে তারিখ পিছিয়ে রোববার বৈঠক দেওয়া হয়। এর পরও তারা নেই কেন?’ বৈঠকে জানানো হয়, প্রকল্প পরিচালক ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে গেছেন।

এ সময় তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম পানিতে ডুবে আছে—এটিই এখানের সবচেয়ে বড় সমস্যা। ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হচ্ছে, গোটা দেশ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। জনগণ, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক– সবাই জানতে চাচ্ছেন। দায়িত্বজ্ঞান না থাকলে তো জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। আমার টাকা, আমি খেয়ে ফেললাম বিষয়টি তো এমন নয়।’

তিনি বলেন, ‘এটি জনগণের টাকা, জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। জবাবদিহির জন্যই আমরা বিভিন্ন কাজ রেখে এখানে এসেছি। ঢাকার চেয়ে এখানের কাজ কি কম গুরুত্বপূর্ণ?’

বিভাগীয় কমিশনার আরও বলেন, ‘প্রকল্প এখানে, পিডি থাকবেন ঢাকায়? প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের কাজের ক্ষেত্রে এটিই বলা হয়েছে। গত বৈঠকে ছিলেন না, মেনে নিলাম। কিন্তু আজও ঢাকা যেতে হবে? তিনি না থাকলে আমরা কার কাছ থেকে বাস্তব অবস্থা জানবো? এটি কর্তব্য পালনে অবহেলা এবং সরকারি আদেশের বরখেলাপ। কাউকে কিছু না জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বৈঠকে আসেননি। ২৩ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এবং ৪ আগস্ট তথ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেও বৈঠকে ছিলেন না তিনি। এটি তার খামখেয়ালি। সভার কার্যবিবরণীতে এ অবহেলা ও তার কাছ থেকে যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ এবং মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে।’

প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দীন জানান, ‘আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সংশোধনী প্রকল্পের (আরডিপিপি) কাজে ঢাকায় এসেছি।’

আরএম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!