সরকারকে না চটিয়ে স্বরূপে ফিরতে চায় হেফাজত, চট্টগ্রামে রুদ্ধদ্বার বৈঠক

কারাবন্দিদের আইনি সহায়তা দিতে ৫ জনের কমিটি

দীর্ঘদিন পর আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তবে এবার তাদের কৌশল সরকারের বিপক্ষে গিয়ে নয়, ‘পক্ষে’ থেকে দলকে শক্তিশালী করা। সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে তারা পুনরায় ‘গর্জে ওঠা’র কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেকে।

সরকারকে না চটিয়ে স্বরূপে ফিরতে চায় হেফাজত, চট্টগ্রামে রুদ্ধদ্বার বৈঠক 1

এ নিয়ে বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ফটিকছড়ির জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসায় টানা তিন ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন হেফাজতের সিনিয়র নেতারা।

ওই বৈঠকে মাওলানা ফোরকানুল্লাহ ও মাওলানা মোবারকুল্লাহকে নতুন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির করা হয়েছে। এছাড়া সারা দেশে জেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কারাবন্দী আলেম-ওলামাদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য পাঁচ সদস্যের সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা হলেন হেফাজতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, আল্লামা ইয়াহইয়া, মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরিস এবং প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী।

বৈঠকে আপাতত সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি না দিয়ে সংগঠনকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, পঞ্চগড়ে কাদিয়ানি সম্প্রদায় বিশ্বের তাবত মুসলমানদের ধোঁকা দিয়ে গোপনে তাদের সম্মেলন করেছে। কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই এই সম্মেলন করতে পারায় তাদের আস্ফালন বেড়ে গেছে। তারা এখন পঞ্চগড় ও নেত্রকোনায় সাধারণ মুসলমানদের জান-মালের ওপর হামলা করার মতো দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তাই অনতিবিলম্বে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করে তাদের সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

বৈঠকের বিষয়ে সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, এ মুহূর্তে আমরা রাজপথে কর্মসূচির পরিবর্তে সংগঠন গোছানোকে প্রাধান্য দিচ্ছি। অতীতের সমস্ত গ্লানি ভুলে হেফাজতে ইসলামকে নতুন উদ্যমে এগিয়ে নিতেই আজকের বৈঠক।

হেফাজত আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান, নায়েবে আমীর আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, আল্লামা তাজুল ইসলাম, ফোরকানুল্লাহ খলিল, আল্লামা মোবারক উল্লাহ, যুগ্মমহাসচিব আল্লামা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জহুরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরীস নদভী, অর্থ সম্পাদক মুফতি মোহাম্মদ আলী কাসেমী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দীন রাব্বানী।

সভা শেষে শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমাদ শফী, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী এবং আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদিসহ সব কারাবন্দি আলেম উলামা, দেশ-জাতি ও সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করেন হেফাজতের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।

গত বছরের ১৮ এপ্রিল হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। এর আগে গত বছরের ২৬ মার্চ মিছিল বের করে হাটহাজারী থানায় আক্রমণ করে হেফাজত ইসলাম। এ ঘটনায় পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ভূমি অফিস, সরকারি গাড়িতে আগুন দেওয়াসহ ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। এরপর সরকার হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। পরে জুনাইদ বাবুনগরীসহ হেফাজতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মৃত্যুর পর সংগঠনটি কার্যত ঝিমিয়ে পড়ে।

এএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!