রাঙামাটিতে নিহতদের তালিকা প্রকাশ

রাঙামাটিতে নিহতদের তালিকা প্রকাশ 1প্রতিদিন ডেস্ক : রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে ঘটনায় তৃতীয় দিনে এক সেনা সদস্যসহ আরও দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এ জেলায় পাহাড় ধসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১০৮ জন। এসব নিহতদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। এখনো পাহাড়ে ধসে আতঙ্ক বিরাজ করছে রাঙামাটিতে।

সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শহরের মানিকছড়ি এলাকায় পাহাড় ধ্বংসস্তুপে উদ্ধার অভিযানে নামে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ভোর থেকে উদ্ধার অভিযানে পর দুপুর ১২টার দিকে পাওয়া যায় সে নিখোঁজ সৈনিক আজিজুরকে। প্রায় ১২ফুট মাটির নিচে মাটি খুঁড়ে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরের প্রবেশমুখে মানিকছড়ি রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের পাহাড় ধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে রাঙামাটি সদর জোনের সেনাবাহিনীর একটি দল উদ্ধার কাজ চালাতে যায়। দলটি ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এসময় অকস্মাৎ নতুন করে পাহাড় ধসে উদ্ধারকারী সেনাবাহিনীর দলের উপর পড়ে। এসময় পাহাড়ি মাটিতে তলিয়ে যায় ১৫জন সেনা সদস্য। ওইদিন ২ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৪ জন জনকে মৃত ও ১২জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কিন্তু সেদিন পাওয়া যায়নি সৈনিক আজিজুর রহমানের মরদেহ। অবশেষে তিন দিনপর তার মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। শহরের ভেদভেদীর রেডিও সেন্টার এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে আগত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মাটি কেটে উদ্ধার করে এ সেনাকে।

নিহতদের নামের তালিকা প্রকাশ-
রাঙামাটিতে এখনো নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ২০টি পরিবার। তাদের মধ্যে কিছু পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেছে। আর কিছু পরিবারের অস্তিত্বও পাওয়া যায়নি। দিন যত বাড়ছে, দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সংখ্যা। অব্যাহত রয়েছে উদ্ধার অভিযানও। এখন পর্যন্ত রাঙামাটি জেলায় নিহত ১০৮জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। তারা হলেন- মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, কর্পো আজিজ, সৈনিক মো. শাহীন ও মো. আজিজুর রহমান (২০), নাইমা আক্তার (০৬), রুমা আক্তার (২৫), নুরী আক্তার (০৩), হাজেরা বগেম, সোনালী চাকমা, অমিয় চাকমা (১০), আইয়ুশ মল্লিক (২), চুমকী মল্লিক(২২) স্বামী লটিন মল্লিক (২৮), মিল্টন/মিন্টু ত্রিপুরা (৪৫), মলি চাকমা (৫৫), ফেন্সী চাকমা, মাহবুব আলম (৫০), মো. শাহীন (২৫), হরিনবী চাকমা, সীমা চাকমা (৩২), সুজন চাকমা (৭), বন্যা চাকমা (৩), জুরি চাকমা (১০), মো. কামাল (৩০), মো. আব্বাস আলী (৫৫), শাহ আমাল (৫৫), মো. শফিকুল ইসলাম (২৫), প্রিয়তোষ চাকমা, মায়াধন চাকমা, মধুমিতা চাকমা (৩৫), সুমন দাশ, (২৫), জয়িতা (৪০) হলি আনসার সদস্য সবুরি বেগম (৩৫) বৃষ্টি (০৭), ব্রিগেড মালী আব্দুল জলিল (৪০), ৩০৫ সদর আনসার ব্রিগেড রাঙমাটি, মো. শরীফ(২৫), রুনা বেগম (১৭), সোহাগ (১৪), কমলা বেগম (২১), সুজিতা চাকমা (৩২), সৌম্য চাকমা (৫), কমো চাকমা (৩৫), কনি মনি চাকমা (৭২), প্রিয়তম চাকমা (১২), বিপুল চাকমা (৩০), রুপালী চাকমা (৩৫), জুই মনি চাকমা (১৪), জুমজুমি চাকমা (০৪), কন্তি সোনা চাকমা (৩৫), সান্তনা চাকমা (৬), করিন দেওয়ান (৩৫), হ্যাপি চাকমা (৩৫), তৃষা মনি চাকমা (১৭), জয়েস চাকমা (০৯)।

কাউখালী উপজলো : ২৩ জন।
বৈশাখী চাকমা(৭), মো. ইসাহাক মিয়া (আশিক) (৩০), মো. মনির (৩০), আব্দুর রশিদ, কাশখালী, ফাতেমা বেগম (৬০), অংচিং মার্মা (৫২) পতিা- অংচাংপ্রু মার্মা, রাউজান ঘোনা, আশেমা মার্মা (৩৪), তমো মার্মা (১২), ক্যাথাইচিং মার্মা, নুসুমা বগেম, নুরজাহান বেগম (৩০), দবির উদ্দিন, (৯০) মনিবালা চাকমা (৫০) বৃষমোহন চাকমা (৪০), নিশি চন্দ্র চাকমা, (৬০), লায়লা বগেম (২৮), খোদেজা বেগম (৫০), শোভা রানী চাকমা (৫৫), লাইপ্রু র্মামা (৬৫), কমল ধন চাকমা (২৭), নমিতা চাকমা,(২১), সোহেল চাকমা (৭), মো. আবদুর রশীদ (৫০), তৃষ্ণা মনি চাকমা (১১), পিতা ফুল মোহন চাকমা।

কাপ্তাই উপজলোঃ ১৮ জন।
নোমান (৫), রুবি (২১), নুরুন্নবী (৫০), রমজান আলী (৫), আবুল হোসেন (৩২), রবি তঞ্চঙ্গ্যা (৩৩), উচিংনু র্মামা (৪০), নিতুই মার্মা (৬), রোহান (৭), চামাউ মার্মা (২৫), অং এম্রপ্রু মার্মা (৪৫), আই প্রু মার্মা (১৫), চিং মিউ মার্মা( ১৫), প্রানুটচিংমা (৬), মো. ইকবাল (৩৪), উবাইনমা মার্মা (৬২), মংনু মার্মা (৫৭)।

বিলাইছড়ি উপজলোর মো. শহীদ, রেঞ্জু ও জুরাছড়ি উপজলোর চিত্রাঙ্গমুখী চাকমা (৫০), বিশ্বমনি চাকমা (১০)।

কমিটি গঠন
রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলোর মধ্যে রয়েছে-ক্ষয়ক্ষতি নির্বাপন কমিটি, ত্রাণ বিতরণ কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি, আশ্রয় কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি, সার্চ কমিটি ও পূনঃর্বাসন কমিটি।

এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান জানান, রাঙামাটিতে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। বৃষ্টি শুরু হলে আবারও পাহাড় ধ্বস হতে পারে। তার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্তকতামূলক মাইকিং অব্যাহত রাখা হয়েছে। রাঙামাটি শহরের ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া অনেক মানুষ আশেপাশের মানুষের বাসা বাড়িতেও অবস্থান নিয়েছে। দুর্যোগে গঠন করা কমিটিগুলো কাজ করবে। আর ক্ষয়ক্ষতি নির্বাচন কমিটি সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা রয়েছে। আপাতত পাহাড় ধসে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. জসীম উদ্দীন বলেন, এখনো পাঁচ-ছয়জন নিখোঁজ আছেন বলে স্থানীয় লোকজন দাবি করেছে। সেই অনুযায়ী আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!