রঙিন পোশাকেও আফগানিস্তানের সামনে বিবর্ণ বাংলাদেশ

সাদা পোশাকে আগানিস্তানের সামনে বড্ড বিবর্ণ ছিল বাংলাদেশ। পোশাক বদলে সাদা থেকে রঙিন হলো। কিন্তু বাংলাদেশের খেলায় সেই বিবর্ণ রঙই রয়ে গেল। বিশেষকরে আফগানিস্তানের সামনে। ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফিফের ডরভয়হীন ব্যাটিংয়ে খাঁদের কিনারা থেকে দল জয় পায়। প্রতিদিনতো আর আফিফরা জ্বলে উঠবেন না। বাংলাদেশ দলে অন্যদের জ্বালানি শক্তি কেমন যেন ম্রিয়মান দেখাচ্ছে সেই বিশ্বকাপ থেকে। বিশ্বকাপে সাকিব একাই জ্বলেছিলেন। কিন্তু ফাঁকফোকরে ঠিকই ব্যাটিং দৈন্যতা দেখা গিয়েছিল। যেটি রোববার মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আবারও দেখা মিলল। আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলেও ব্যাটিং ব্যর্থতা আড়াল করতে পারেনি বাংলাদেশ। পরিবর্তন আনা হয়েছিল ব্যাটিং অর্ডারেও। কিন্তু সেটি শুধুমাত্র সিরিয়ালের আগে-পরে ছাড়া অন্য কোন লাভ হয়নি। আর তাই আগের রাতে জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দেয়া রশিদ খানের দল বাংলাদেশকে ২৫ রানে হারিয়ে ফাইনালের পথ অনেকটাই সুগম করে ফেলেছে।

শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আফগানদের কাছে পাত্তাই পায়নি সাকিব আল হাসানের দল। ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে ১৬৫ রানও হয়ে যায় অসম্ভব কিছু। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে মাঝারি লক্ষ্য টপকাতে নেমে যে হাল হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি দেখা যায় শুরুতে। ৩২ রান তুলতেই সাজঘরে ফিরে যান লিটন (০), মুশফিক (৫), সাকিব (১৫), সৌম্য (০)। তারপরও কিছুটা আশা জিইয়ে রেখেছিলেন সাব্বির রহমান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৫৮ রান যোগ করে বিপর্যয় সামাল দেন। লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হতে যত দ্রুত রান তোলা দরকার ছিল সেটি অবশ্য পারেননি তারা।

৪৪ রান করে মাহমুদউল্লাহ সাজঘরে ফেরার পরের ওভারে আউট হয়ে যান সাব্বিরও (২৪)। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর জয় উপহার দেয়া আফিফ হোসেনের কাঁধে আসে দলকে লড়াইয়ে রাখার দায়িত্ব। ৪ ওভারে ৫৯ রানের কঠিন সমীকরণ যখন বাংলাদেশের সামনে আফিফ তখন ডাবল ফিগারে। মোসাদ্দেককে সঙ্গে নিয়ে চেষ্টা চালান এ তরুণ। তবে আগের ম্যাচের মতো সফল হতে পারেননি। রশিদ খানদের বৈচিত্র্যময় বোলিং আক্রমণ চড়াও হতে দেয়নি ব্যাট। ১৬ রান করে লং অফে সীমানাদড়ি ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা নাজিবউল্লাহর হাতে ক্যাচ তুলে দেন আফিফ। তখনই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সব আশা। মোসাদ্দেক ১২ ও মোস্তাফিজ ১৫ রান করে হারের ব্যবধানই কেবল একটু কমান।

ব্যর্থতার বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছেন না সাব্বির রহমান।
ব্যর্থতার বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছেন না সাব্বির রহমান। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও কথা বলেনি তাঁর ব্যাট।

প্রভাত নাকি দিনের পূর্বাভাস দেয়! ইনিংস শেষে আফগানিস্তানের স্কোরবোর্ড এই প্রবাদকে ভুল বানিয়ে দেয়। শুরুতে রানের ঘরে ১৯। উইকেটের ঘরে ৩। পরে ৪০/৪। কিন্তু ইনিংস শেষে সফরকারীরা তোলে ১৬৪/৫। মোহাম্মদ নবি ৫৪ বলে ৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংসটাই মূলত পাল্টে দেন দৃশ্যপট।

টস হারলেও শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কৃত্রিম আলোয় বাংলাদেশের শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো। ইনিংসের প্রথম বলটা মিডল স্টাম্পে পিচ করেন সাইফউদ্দিন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই বল বাতাসে ভেসে সামান্য আউট সুইংয়ে গুরবাজের অফস্টাম্প উপড়ে যায়। উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের সামনে বাতাসে ভাসতে থাকে স্টাম্প। ইনিংসের প্রথম বল হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রানের খাতা খুলতে পারেননি গুরবাজ। পরে তৃতীয় ওভারের শেষ বলে আরও এক আফগান ব্যাটসম্যানকে তুলে নেন সাইফউদ্দিন। সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ বানিয়ে নাজিবুল্লাহ তারাকাইকে (১১) ফেরান তিনি।

মাঝে নিজের প্রথম আর ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে সাফল্য পান সাকিব আল হাসান। স্লগ খেলতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে লিটন দাসের হাতে ধরা পড়েন হযরতউল্লাহ জাজাই (১)। পরে সাকিবের বলে আউট হন নাজিবুল্লাহ জাদরানও। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঝড় তোলা জাদরান এদিন দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেননি (৫)।

এরপরই শুরু হয় মোহাম্মদ নবি ও আসগর আফগানের লড়াই। ওপেনার রহমানউল্লাহ ছাড়া তাদের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানই আউট হন কিছুটা তাড়াহুড়া করতে গিয়ে। সেটা খেয়াল রেখেই নিজেদের শুরুটা বেশ দেখেশুনে করেন তারা। ফলও পান। মাঝে তাইজুলের বলে আউট হলেও নো বল ‘ভাগ্যে’ বেঁচে যান আসগর। ‍সুযোগ পেয়ে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন তিনি। নবি-আসগরের ব্যাটিং ধার একটু বাড়তেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেন বাংলাদেশের বোলাররা। শুরুর আত্মবিশ্বাসটা কিছুটা হারিয়ে ফেলায় ঠিক জায়গায় বল রাখতে পারেননি তারা। ফলে পছন্দের জায়গায় বল পেয়ে সেগুলোকে আকাশে উড়িয়ে গ্যালারিতে ফেলেন আফগান দুই ব্যাটসম্যান।

১৭তম ওভারে আসগর যখন আউট হন, ততক্ষণে কাজের কাজ অনেকটাই সেরে ফেলে আফগানিস্তান। প্রথম বলের মতো আরেকটি বলে গুলবাদিন নায়েবকে বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু নবিকে থামাতে না পারায় শুরুর সাফল্য তেমনভাবে কাজে আসেনি। আগের ম্যাচে ১৮ বলে ৩৮ রান করেছিলেন নবি। কোনো চার ছিল না, ছক্কা চারটি। এদিনও চারের চেয়ে ছক্কার মার বেশি। সাত ছক্কার সঙ্গে চার মেরেছেন তিনটি। শেষ পর্যন্ত ৫৪ বলে ৮৪ রানে অপরাজিত থাকেন নবি। আসগরের সঙ্গে ৭৯ রানের মহামূল্যবান জুটি গড়ার পর সপ্তম উইকেট জুটিতে করিম জানাতকে নিয়ে তোলেন অবিচ্ছিন্ন ৪৩ রান। এর মধ্যে জানাত করেন ৬ বলে ৫ রান। শেষ তিন ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪২ রান নেয় আফগানিস্তান।

বাংলাদেশের হয়ে সাইফউদ্দিন চারটি ও সাকিব দুটি উইকেট নেন। বাকি পাঁচ বোলারের কেউ উইকেটের দেখা পাননি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!