মেয়র আসে—মেয়র যায়, গুরুধাম মন্দির লাগোয়া শৌচাগার সরেনা

চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা রাজাপুকুর লেইনের গুরুধাম মন্দিরের পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠা গণশৌচাগারের বয়স প্রায় দুই যুগ। এত সময়ের মাঝে কত মেয়র আসলো-গেলো, কিন্তু ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পাশের শৌচাগারটি স্থানান্তরে সিটি করপোরেশন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। মন্দির কমিটির সদস্যদের বার বার অনুরোধ করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। এরপর হয়েছে প্রতিবাদ। লিখিত অভিযোগও পরে আছে ফাইলবন্দী।

মন্দির কমিটির সদস্য ও দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশির দশকের দিকে আন্দরকিল্লা রাজাপুকুর লেইনের মুখে ‘গুরুধাম’ মন্দির নির্মিত হয়। তার কয়েকবছর পর ৯০ শতকের প্রথম দিকে ওই মন্দির ঘেঁষে সিটি কর্পোরেশন গণশৌচাগার নির্মাণ করে। সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই পবিত্র স্থানের পাশে শৌচাগার গড়ে ওঠাকে নিন্দনীয় বলে মনে করছে মন্দির কমিটির সদস্যরা।

মন্দির কমিটির এক সদস্যের অভিযোগ, কোন ধর্মীয় পবিত্র স্থানের পাশে এমন স্থাপনা নির্মাণ যুক্তিযুক্ত নয়। দুই যুগ পার হওয়ার পরও কত মেয়র আসছে কেউ মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষায় এই শৌচাগারটি অন্যত্র স্থানান্তর করেনি। কোন মসজিদের পাশে যদি শৌচাগার থাকত এতদিনে এটা অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়ে যেত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজনীয় স্থানের পাশে গড়ে উঠেছে বলেই যুগের পর যুগ ধরে এই শৌচাগার সরানো হচ্ছে না।

এ বিষয়ে গুরুধাম মন্দির কমিটির সেক্রেটারি নিলয় চন্দ্র ধর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই মন্দরটি ১৯৮৩ সালে স্থাপিত হয়। মন্দির হওয়ার ৭-৮ বছর পর ৯০ সালের দিকে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী শৌচাগারটি স্থাপন করেন। এটা নিয়ে আমরা অনেক অভিযোগ করেছি, প্রতিবাদ করেছি। এখন পর্যন্ত যত মেয়র এসেছেন, সবার কাছে আবেদন করা হয়েছে। কেউই তার সুরাহা করেননি। তৎকালীন মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে কয়েকবার যাওয়া হয়েছে এখানে শৌচাগার নির্মাণ না করার অনুরোধ নিয়ে।শৌচাগার হওয়ার পরও কয়েকবার অনুরোধ করা হয়েছে যাতে অন্য কোথাও শৌচাগারটা স্থানান্তর করা হয়। তখন স্থানান্তর করে দিবে বলে আর করেননি তিনি। সাবেক মেয়র মঞ্জুর আলমের কাছে কয়েকবার যাওয়ার পর উনিও বলে ছিলেন শৌচাগারটা অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু তিনিও করেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সদ্য সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে কয়েকবার যাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, স্থানান্তরের, জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের তিনি জায়গা ঠিক করে দিতে বললেন। তখন আমরা একটি জায়গা লিজ নেওয়ার জন্য যাই। যাতে ওই জায়গায় শৌচাগারটি স্থানান্তর করতে পারি। কিন্তু সেই জায়গাটিও আরেকজনকে লিজ দিয়ে দেন তিনি। তবে এ নিয়ে এখনও নতুন প্রশাসকের সাথে কথা হয়নি। আমরা বর্তমান প্রশাসকের কাছে অনুরোধ করছি আমাদের এই পূজনীয় স্থানের পাশ থেকে শৌচাগারটি যেন অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হয়।’

বাঁশখালী নিমকালি মন্দির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা লায়ন অসিত সেন বলেন, যেকোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষা করা উচিত। গুরুধাম মন্দির লাগোয়া গণশৌচাগারটি ধর্মীয় পবিত্রতা নষ্ট করছে। এছাড়া মলের গন্ধে স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গাফেলতিও বেশ প্রশ্নবিদ্ধ।

পশ্চিম বাকলিয়া আওয়ামী লীগ ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী মৎস্যজীবি লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য টুটুল ভট্টাচার্য বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই শৌচাগারটি মন্দিরের সাথে লাগানো। সেখানে আমরা সরজমিনে গিয়ে দেখতে পেলাম, সেফটি ট্যাংকের পানি মন্দিরে প্রবেশ করছে যা নিন্দনীয়, অশোভন। শৌচাগারটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্রশাসকের প্রতি অনুরোধ করছি।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!