বেতনের দাবিতে হাবিব গ্রুপের দুই গার্মেন্টসে ভাঙচুর, শ্রমিক বিক্ষোভ

চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্পনগরীতে হাবিব গ্রুপের মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান লিগাসি ফ্যাশন লিমিটেড ও আনোয়ারা ফ্যাশন লিমিটেডের কারখানায় বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত নয়টার পর ভাংচুর হয়। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় প্রায় চার হাজার ৮০০ শ্রমিক কারখানাতেই রাত কাটায়। অবশেষে শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে বেতন পেয়ে শ্রমিকরা কারখানা ত্যাগ করেন। এর আগে ৬ আগস্ট শ্রমিকদের ঈদ বোনাস বুঝিয়ে দেয় মালিকপক্ষ। ২২ আগস্ট কারখানা চালু হলে ২৪ আগস্ট শ্রমিকদের ছুটির বকেয়া (ইএল) টাকা প্রদানের লিখিত আশ্বাসে তারা শান্ত হয় বলে জানা গেছে।

নগর পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) দেবদূত মজুমদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, পোশাক কারখানায় গণ্ডগোলের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটায় আমি ঘটনাস্থলে হাজির হই। বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও মালিকের সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক করে ভোররাতে বাসায় ফিরে যাই। সকাল থেকে আবার ঘটনাস্থলে এসে সুশৃঙ্খলভাবে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া পর্যন্ত কারখানায় উপস্থিত ছিলাম।

লিগাসি ফ্যাশন ও আনোয়ারা ফ্যাশনে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
লিগাসি ফ্যাশন ও আনোয়ারা ফ্যাশনে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

প্রতিষ্ঠানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) আমিনুল হক চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংক যথাসময়ে টাকা দিতে না পারায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। তবে সময়ক্ষেপণ হলেও আমরা শ্রমিকদের শেষ পর্যন্ত হাসি মুখে ঈদ উদযাপনের সুযোগ করে দিতে পেরেছি। কিছু শ্রমিক ভাংচুর করেছে। তারা এই কারখানার সুনামের সাথে পরিচিত নয়। অন্য কারখানা থেকে সম্প্রতি আমাদের কারখানায় যোগ দিয়েছে। আমাদের পুরাতন কোন শ্রমিক আমাদের ক্ষতি করেনি। কারণ তারা জানে আমরা বেতন-বোনাস নিয়ে কোন তালবাহানা করিনি কখনো। বিগত ১২ বছর আমি নিজে তিন থেকে ছয় তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করেছি।

সরেজমিনে বিসিক শিল্পনগরীতে গিয়ে দেখা হলো ভোলা জেলার নাহিদ হোসেনের সাথে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। তার আয় রোজগারে চলে ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ। পাশাপাশি পিতার সংসার পরিচালনায় আছে তারও ক্ষুদ্র অবদান। চাকুরি করে কালুরঘাট বিসিক শিল্প নগরীর লিগাসি নামের একটি পোশাক তৈরি কারখানয়। তার মাসিক বেতন আট হাজার ৮৭৫ টাকা। শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেল ৫.১৫টায় তার সাথে দেখা বিসিক সড়কের মুখে।

নাহিদ জানালেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র বেসিক বেতনটা দিয়ে ঈদের আগে বিদায় দিতে চেয়েছিল। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে পুুরো বেতনই শোধ করেছে। কথা বলতে বলতে তার মুখে ঈদ আনন্দ ফুটে উঠলো।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে বেতন পেয়ে শ্রমিকরা কারখানা ত্যাগ করেন।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে বেতন পেয়ে শ্রমিকরা কারখানা ত্যাগ করেন।

আরেকটু অগ্রসর হয়ে লিগাসি গার্মেন্টেসের সামনে দেখা টাঙ্গাইলের ববিতা আক্তারের সাথে। ববিতাকে এগিয়ে নিতে এসেছে তার প্রতিবেশী রোকসানা। কারণ লিগাসি গার্মেন্টসের ঘটনায় সবাই উদ্বিগ্ন ছিল। ববিতার বেতন নয় হাজার ৩০০ টাকা। পূর্ণ বেতন নিয়ে ঘরে ফিরছেন ববিতা। ববিতা জানালেন এর আগে ৬ আগস্ট বোনাস পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মালিকপক্ষ বেতন না দেওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার ভিতরে বিক্ষোভ করে।

এভাবে প্রায় চার হাজার ৮০০ শ্রমিক বৃহস্পতিবার সকালে কারখানায় এসে শুক্রবার দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সবাই বেতন নিয়ে ঘরে ফিরছেন। মধ্যে প্রায় ২৪ ঘন্টা সময় কেটেছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। কারণ এই কারখানার শ্রমিকদের তিনদিন আগে বোনাস পরিশোধ করা হলেও বৃহস্পতিবার বেতন শোধ করতে ব্যর্থ হয়। প্রথমে ঘোষণা দেওয়া হয় বিকেল পাঁচটায় বেতন শোধ করা হবে। বিকেলে জানানো হয় সন্ধ্যা সাতটায়। সাতটায় জানানো হয় রাত নয়টায়। রাত নয়টায় এসে অর্থ সংকটে কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র মূল বেতন (বেসিক) দিতে চাইলে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা টাকাও গ্রহণ করেনি, কারখানাও ত্যাগ করেনি। এরই মধ্যে ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। তবে ঠিক কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারেনি গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ।

এফএম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!