বৃষ্টি ও বন্যার চাপ চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে, সবজির দাম চড়া

দোকানে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন রকমের সবজি। বাজারভর্তি সবজির মেলা। সরবরাহ বেশি দেখা গেলেও দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজির। গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিটি সবজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দাম বেড়েছে। আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত এ দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানান বিক্রেতারা। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে মাছ, মাংস ও ডিমের।

শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী বাজার ও কাজির দেউড়ি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

কর্ণফুলী বাজার ও কাজির দেউড়ি বাজার ঘুরে দেখা যায় করলা ১০০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কাকরল ৮০ টাকা, খাড়া শিম ২০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, ঢেড়স ৫০ টাকা, কচুর ফুল ৮০ টাকা, লাউ ৫০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, আলু ৫০ টাকা (লাল), বেগুন ৬০-৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, শসা ৬০-৭০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

জানা যায়, চট্টগ্রামের অন্তত ১৪টি উপজেলায় টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে সবজি ক্ষেত ও মৎস্যখামার। কৃষকদের সবজি ক্ষেতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব এসে পড়েছে সবজি বাজারের ওপর। অকালবৃষ্টির কারণে ভয়াবহ বন্যায় সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে। সবজি কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বাজারে বেশিরভাগ সবজি চট্টগ্রামের বাঁশখালী, চন্দনাইশ ও দোহাজারী থেকে আসে।

কাজির দেউড়ির সবজি বিক্রেতা হোসাইন জানান, গত দুই সপ্তাহে টানা বৃষ্টির কারণে সবজি দাম বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকায় মূলত দাম বাড়তি। আমরা চেষ্টা করলেও কম দামে বিক্রি করতে পারছি না, কেনা বেশি পড়ে। আগামী ১৫ দিন পরে দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানান।

কর্ণফুলী কাঁচাবাজার সবজি বিক্রেতা রবিউল জানান, ‘বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কম, তাই দাম একটু বেশি। কেজিপ্রতি কেনা বেশি পড়ে।’ ১৫ দিন পর দাম কমতে পারে বলে জানান ওই বিক্রেতা।

এদিকে সবজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সব ধরনের মাছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দাম বেড়েছে। লইট্টা ২০০ টাকা, রুই-কাতলা ৩০০-৪০০ টাকা, মইল্লা (সাগরের) ২০০ টাকা, ইলিশ ১১০০ টাকা, ইলিশ দেড়-দুই কেজি ওজনের বিক্রি হচ্ছে ২০০০-২২০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, দেশী-সাগরের কোরাল ৮০০-১০০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২৮০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৬০ টাকা, সরপুঁটি ১৬০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

কাজির দেউরি বাজারে ক্রেতা মো. সামসুদ্দিন বলেন, ‘শীতকালীন সবজি তো এখনও বের হয়নি তাহলে কেন দাম বাড়বে? বৃষ্টির সঙ্গে দাম বাড়ার সম্পর্ক কী?’ বাজারে মনিটরিং ঠিকমতো কার্যকর না থাকায় সবজি বাজার বিক্রেতারা সিন্ডিকেট হয়ে দাম বাড়ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। জানান।

জানতে চাইলে কর্ণফুলী কাঁচাবাজারের ক্রেতা সাগর বলেন, ‘বাজারের সবজি সরবরাহ বেশি, দাম বৃদ্ধিও কোন কারণ দেখছি না। সবজির ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়েছেন। এটা এক ধরনের কারসাজি ছাড়া আর কিছুই না।’

এদিকে বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে মাংস (লাল) ৭০০-৭৫০ টাকা, খাসি ৬৫০-৭০০ টাকা। মুরগী ফার্ম ১৩০-১৩৫ টাকা, দেশী মুরগী ৪০০-৪৩০ টাকা, মুরগী (পাকিস্তানী কক) ২০০-২২০ টাকা। এছাড়া গত দু’সপ্তাহে ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ৮ টাকা প্রতিখালী।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রথমে সড়কে বিভিন্ন স্তরের হাইওয়ে-থানার পুলিশ ও নামে-বেনামে ভূঁইফোড় সংগঠনের চাঁদাবাজি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। পদে পদে এসব টাকা দিতে গিয়ে পণ্যমূল্য দাম বেড়ে যায়। এগুলো বন্ধ করতে হলে চাঁদাবাজি মনিটরিং সেলের নজর রাখা উচিত। তা না হলে উভয়পক্ষকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।’

এ বিষয়ে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)এর কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোনো উপলক্ষকে অজুহাত দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়ানো একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের একটা ট্র্যাডিশন হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখছি না, এটা ব্যবসায়ীদেও কারসাজি। সবজি বৃষ্টির আগে মজুদ ছিল তাদের। কেন দাম বাড়বে?’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াছে। এছাড়া সামনে কোরবানি উপলক্ষে পেঁয়াজ, রসুনসহ মসলার আইটেমেও দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা।’ এক্ষত্রে প্রশাসন জোরালো পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন পর্যায়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান তিনি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!