বিয়ে প্রতারণায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর মামলা, কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

এইচএসসি পাশের ভুয়া সনদ দেখিয়ে প্রথমে বিয়ে, পরে সেই জাল সনদ জমা দিয়ে আবার ভর্তি হন জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনকি সেখান থেকে নিয়েছেন স্নাতক ডিগ্রিও। পরে স্বামীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে নেন কয়েক কোটি টাকা। এমন অভিনব বৈবাহিক প্রতারণা ও আর্থিক জালিয়াতির শিকার হয়ে মেয়েটির স্বামী জাপানপ্রবাসী মোহাম্মদ আবু জাহেদ চট্টগ্রামের আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। ভুক্তভোগী ওই স্বামীর অভিযোগ, মেয়েটির পারিবারিক যোগসাজসেই এই প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।

পারিবারিক যোগসাজসে জাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে বৈবাহিক প্রতারণা এবং কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গত ২৩ আগস্ট স্ত্রী, শাশুড়ি ও সম্বন্ধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে চট্টগ্রামে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন জাপানপ্রবাসী মোহাম্মদ আবু জাহেদ।

অভিযুক্তরা হলেন জাহেদের স্ত্রী চট্টগ্রামের পাথরঘাটার ইসহাক ভিলার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসহাকের কন্যা ফারহানা নওশিন (৪০), শাশুড়ি ফাতেমা বেগম (৬৯) ও সম্বন্ধী মোহাম্মদ ইরফান (৪২)। অভিযোগ থেকে জানা যায়, অভিযুক্ত ফারহানা নওশিনের এইচএসসি পরীক্ষা পাসের সনদপত্র ও নম্বরফর্দ জালিয়াতির ঘটনা জেনেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তথ্য গোপন করে বৈবাহিক প্রতারণায় সরাসরি জড়িত ছিলেন ফাতেমা বেগম (৬৯) ও মোহাম্মদ ইরফান (৪২)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সরল বিশ্বাসে বিয়ের পর প্রবাসী জাহেদ তার নিজ খরচে স্ত্রী নওশিনকে জাপানে নিয়ে গিয়ে সেখানকার J.F OBERLIN UNIVERSITY থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করান। এছাড়াও স্ত্রী নওশিনকে বিশ্বাস করে জাহেদ আমেরিকায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান NJN YUME LLC-তে ৫১ শতাংশ অংশীদার বানিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেন। কিন্তু নওশিন ব্যবসার দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার স্প্রিংফিল্ডে বসবাসকারী বড় ভাই ইকবালের যোগসাজসে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। পরবর্তীতে সন্দেহ থেকে প্রবাসী জাহেদ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে নওশীনের রোল নম্বর দিয়ে যাচাই করলে পরীক্ষার ফলাফল অকৃতকার্য আসে।

প্রতারণার শিকার প্রবাসী মো. আবু জাহেদ বলেন, ‘আমার স্ত্রী ফারহানা নওশিন ও তার পরিবার জাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে আমার সাথে বৈবাহিক প্রতারণা করেছে। আমি বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করে জাপানের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নওশিনকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করাই। পাশাপাশি আমেরিকায় আমার ব্যবসার ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক বানিয়ে তাকে আমার ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেই। কিন্তু ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে তার বড় ভাই ইকবালের যোগসাজসে সে আমার কোটি কোটি টাকা ক্ষতি করে। অনন্যোপায় হয়ে আমি এই প্রতারণার উপযুক্ত বিচার পেতে নওশিন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করি।’

জাহেদ অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলা করার পর থেকে আমার শাশুড়ি ও সম্বন্ধী আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। আমাকে মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য মামলা দিয়ে তারা আমাকে হয়রানি করবে বলে মোবাইল ফোনে নানা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।’

সনদ জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘ফারহানা নওশিন নামের একজনের বিরুদ্ধে সনদ জাল করার অভিযোগ আসলে আমরা তা খতিয়ে দেখি এবং অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ পাই। নওশিন ১৯৯৭ সালের এইচএসসি পরীক্ষার একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট জাল করেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ হাসান আলী জানান, বাদীর স্ত্রী নওশিন শুধু বৈবাহিক প্রতারণাই করেননি, পাশাপাশি একই জাল সনদপত্র আমেরিকা ও জাপান দূতাবাসে দাখিল করে নন-মাইগ্রেন্ট ভিসার জন্যও আবেদন করেন। নওশিনের সনদ জাল করার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুদক কার্যালয় ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাছাড়া বিজ্ঞ আদালত বাদির জবানবন্দি গ্রহণ, নথিপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা ও আইনজীবীদের বক্তব্য শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ১৭ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।’

এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত ফারহানা নওশিন, ফাতেমা বেগম ও মোহাম্মদ ইরফানের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!