রিকশা চলাও দায় সদরঘাট-বারেক বিল্ডিং ট্রাংক রোডে (ভিডিও)

সদরঘাট থেকে বারেক বিল্ডিং। কাদায় টইটম্বুর একটি সড়ক। বড় বড় গর্তে কাত হয়ে আটকে আছে গাড়ি। কোনোটির ভেঙেছে চাকার নাট, কোনোটির স্প্রিং সেট। আবার কোনো কোনো গাড়ি একেবারে উল্টে গেছে সড়কের মাঝেই! গাড়িগুলোর চালক-হেলপাররা ব্যস্ত মেরামতের কাজে। আর পেছনে যানজটে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে শত শত গাড়ি। পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে এই ভাঙা-বিপদসংকুল সড়কটি পার করতেই ব্যয় করতে হয় ঘণ্টা পর ঘণ্টা। নিরাপদে কোনো গাড়ি যদি পার হতে পারে তাহলে চালক যেন হাফ ছেড়েই বাঁচলো!

বিড়ম্বনার এই গল্প বন্দরনগরী চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের। যে সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো বন্দরের পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে। স্থানীয়দের মুখে এই সড়কের নামও ট্রাক রোড! বর্তমানে এই সড়কটি রিকশা চলাচলের উপযোগিতাও হারিয়েছে।

মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তাটিজুড়ে লম্বা যানজট। কাদা মাড়িয়ে চলাচল করছে পথচারীরা। দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে সংস্কার কাজ। নালার ওপর ব্রিজ কাটা হয়েছে। কর্ণফুলী নদী ঘেঁষা এই সড়কে ঢুকছে জোয়ারের পানি। বৃষ্টি পানি জমে আছে সড়কের বিশাল বিশাল গর্তে। ওয়াসার নতুন পানির লাইন স্থাপনের কাজ চলছে এই বেহাল সড়কের ওপর। স্থানীয়দের দুর্ভোগ দেখার কেউ যেন নেই।

জানা গেছে, দুই বছর আগে এই সড়ক সংস্কারের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হলেও কাজে নেই কোন অগ্রগতি। সেই সাথে রশিদ বিল্ডিং থেকে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত রোডের জন্য নেই কোনো প্রকল্প অনুমোদন।

রিকশা চলাও দায় সদরঘাট-বারেক বিল্ডিং ট্রাংক রোডে (ভিডিও) 1

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সঙ্গে কথা হয় ষাটোর্ধ চা বিক্রেতা খালেদ মিয়ার। তিনি জানান, ২০ বছর ধরে এই এলাকায় চা বিক্রি করছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির এমন বেহাল দশা অতীতে আর কখনও দেখেননি তিনি। এই সড়ক দিয়ে সব রকমের ভারী যানবাহন চলাচল করে। ২ বছর ধরে এই সড়কের কাজ চলছে। কাজ শেষ হওয়ার লক্ষণও তিনি দেখছেন না।

খালেদ মিয়া বলেন, বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে গত একমাস ধরে রোডটি খানাখন্দক ও কাদায় একাকার হয়ে গেছে। সড়কটিকে ট্রাক রোড বলা হয়। এখন রিকশাও চলতে পারে না। গর্তে ট্রাক আটকে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা। দেখার যেন কেউ নেই।

পথচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই সড়কটিতে দিন-রাত পণ্যবাহী ভারি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলে। অন্যান্য রোডের চেয়ে এটাই সড়কটি আরো মজবুত করে বানানো প্রয়োজন। এখন প্রায়ই গর্তে চাকা আটকে গাড়ি উল্টে যায়। হেঁটে যাওয়ার মত অবস্থা নাই। তাও উপায় না পেয়ে কাদামাখা সড়কে হাঁটতে হচ্ছে।

রিকশা চলাও দায় সদরঘাট-বারেক বিল্ডিং ট্রাংক রোডে (ভিডিও) 2

ট্রাকচালক জমির উদ্দীন জানান, এত দীর্ঘ সময় ধরে সড়কটির কাজ না করে ফেলে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। এখন সড়কটি কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। গাড়ি চালাতে গেলে আটকে যায়। বড় বড় গর্ত বৃষ্টির পানিতে ভরে গেছে। বোঝার উপায় নাই গর্তের গভীরতা কতটুকু। যার ফলে গাড়ি ওই গর্তে পড়ে উল্টে যায়। সৃষ্টি হয় যানজট। সদরঘাট থেকে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত পুরা সড়কটি বেহাল অবস্থা।

তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে রশিদ বিল্ডিংয়ের সামনে গর্তে পড়ে একটি ট্রাক উল্টে যায়। পরে ক্রেন এনে ট্রাকটি তুলতে হয়েছে। এমন ঘটনা প্রতিদিন হচ্ছে। ট্রাকসহ মানুষের চলাচলের কথা চিন্তা করে দ্রুত সড়কটি ঠিক করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ বলেন, ‘আমাদেরকে একটা প্রজেক্ট দেওয়া হয়েছিল কার্পেটিংয়ের জন্য। কিন্তু এই রাস্তার যে বেহাল অবস্থা শুধু কার্পেটিং করলে হবে না। এই সড়কটিতে ট্রাকসহ ভারি গাড়ি চলে। যতই কার্পেটিং করা হোক না কেন রাস্তাটা বেশি দিন স্থায়ী হবে না। দুই বছর আগে এটার প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয় শুধু কার্পেটিংয়ের জন্য। তখন এত খারাপ ছিল না রাস্তাটা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সড়কে মাছের গাড়িগুলো থেকে প্রতিনিয়ত পানি পড়তে থাকে। সেজন্য আমরা পরিকল্পনা করেছি নিচ থেকে ঢালাই দিয়ে রোডটি সংস্কার করতে। অনুমোদন পেলে আমরা কাজ শুরু করে দেবো।’

সিটি করপোরেশনের এই প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘রশিদ বিল্ডিং থেকে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত রোডটির জন্য ২৪ হাজার ইট দেওয়া হয়েছে। তাও এই অবস্থা। এই রোডটির জন্যও আবেদন করা হবে। যদি অনুমোদন দেওয়া হয় তাহলে ওই অংশটুকুর কাজ আমরা শুরু করবো।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সদরঘাট-মাঝির ঘাট রোড দিয়ে ওয়াসা নতুন পানির লাইন নিচ্ছে পতেঙ্গা পর্যন্ত। পানির প্রেসারে লাইন ফেটে রাস্তার একপাশ ধসে গেছে। এখন ট্রাকের জন্য দিনের বেলায় ওয়াসা কাজ করতে পারছে না। যার জন্য এই রোডের বেহাল দশা হয়েছে। আসলে দেড় বছর আগেই এই রোডের প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তখন কাজ করা হয়নি। এখন সব ঠিক করে এই রোডের কাজ চালু হবে। ওয়াসা ২ থেকে ৩ দিন সময় চেয়েছে৷ তাদের কাজ শেষ করলে আমরা রোডের প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘দুর্ভোগের জন্য আমি চট্টগ্রামবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা এই রাস্তাটা এতদিনেও ঠিক করতে পারিনি। এতদিনে এই রাস্তাটা ঠিক হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। ইনশাল্লাহ আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি আশা করি হয়ে যাবে। ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সব অনুমোদন নিয়ে কাজ শুরু হবে যাবে।’

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!