বিপ্লব বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ‘বেআইনি’ উদ্বোধনের নালিশ এমপি নদভীর (ভিডিও)

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি কলেজের ভবন উদ্বোধন ঘিরে তুমুল বিতর্কের ঝড় উঠেছে। সাংসদ আবু রেজা নদভী সরাসরি নালিশ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়ার বিরুদ্ধে। কোনো কলেজের উদ্বোধনী ফলকে বিশেষ সহকারীর নাম থাকতে পারে কিনা— এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিষয়টিকে পুরোপুরি ‘বেআইনি’ বলে উল্লেখ করেছেন নদভী। ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রকল্প উদ্বোধন করতে চাইলে তাকে নির্বাচন করে এমপি হয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বর্তমান এই সাংসদ।

শুক্রবার (১০ মার্চ) সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের চিববাড়ি এমএ মোতালেব কলেজের নবীনবরণ ও নবনির্মিত আইসিটি ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া।

সাংসদ নদভীর ‘ডিও লেটারে’ নির্মিত হওয়া ওই কলেজ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খোদ সাংসদকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ নিয়ে তৈরি হয় তুমুল সমালোচনা। কলেজটি প্রতিষ্ঠা হয় সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যবসায়ী এমএ মোতালেবের নামে। শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে জামায়াতঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলে আসছেন সাংসদ নদভী।

এদিকে চলমান বিতর্কের রেশ ধরে শনিবার (১১ মার্চ) লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এসআই চৌধুরীর স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা দিতে গিয়ে এ নিয়ে ক্ষোভ ঢেলে দেন সাংসদ আবু রেজা নেজামুদ্দিন নদভী।

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে এ সময় নদভী বলেন, এ ধরনের সব প্রকল্প এমপিদের ডিও লেটার মোতাবেক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী হয়।

তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো কেন্দ্রীয় নেতার কোনো প্রকল্প নেই। এখানে কোনো অমুক নেতা সমুক নেতার কোনো প্রকল্প নেই। অন্য এলাকার কোনো মন্ত্রী সাহেবেরও কোনো প্রকল্প নেই। সাতকানিয়া-লোহাগাড়াতে যা প্রকল্প আছে সব আমার, ড. আবু রেজা নদভীর। কার মাধ্যমে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে।’

লোহাগাড়ার সন্তান প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের প্রসঙ্গ টেনে নদভী বলেন, ‘আবেদীন সাহেবের মতো মানুষ। জেনারেল আবেদীন— প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব। পাওয়ারফুল মানুষ— মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন। উনি চুনতিতে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। উনি আমাকে টেলিফোন করে বললেন যে, মামা আপনি আমাকে এই এই প্রকল্পগুলোর জন্য ডিও লেটার দেন। ডিও লেটার উনি নিয়েছেন। নেওয়ার পরে চুনতিতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। যেখানে আবেদীন সাহেব আমার ডিও লেটার দিয়ে চুনতিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন, সেখানে কোনো কেন্দ্রীয় নেতা এইরকম প্রকল্প আনতে পারবে? পারবে না। তাহলে… অধিকার হরণ করা অনৈতিক। একজনের অধিকার দখল করে ফেলা এটা অনৈতিক, বেআইনি।’

সাতকানিয়ার চিববাড়িতে এমএ মোতালেব কলেজের উদ্বোধনী নামফলকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়ার নাম থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাংসদ নদভী বলেন, ‘গতকাল (১০ মার্চ) মোতালেব কলেজের ভবন উদ্বোধন হয়েছে। ডিও লেটার কে দিয়েছে? আমি দিয়েছি। এমএ মোতালেব আমার কাছ থেকে প্রায় নয়টি ডিও লেটার নিয়েছেন। এই নয়টি ডিও লেটার আপনারা কয়দিন পর ফেসবুকে পাবেন। বিপ্লব বড়ুয়া আমাকে বলেছেন এখানে ওখানে ডিও লেটার দেন। আমার ডিও লেটারে এই ভবন উদ্বোধন হয়েছে। কিন্তু আইনবহির্ভূতভাবে আইন ভঙ্গ করে এমপিকে দাওয়াত না দিয়ে এমপিকে বাদ দিয়ে বিপ্লব বড়ুয়ার নাম দিয়ে ওখানে পাথরে… তারপরে নওফেল সাহেবের নাম দিয়ে… নওফেল সাহেব উপমন্ত্রী হিসেবে ওনার নাম থাকতে পারে… বিপ্লব বড়ুয়ার নাম কলেজ ভবনের পাথরে কোনো আইনে কোনো নিয়মে পড়ে না।’

বিপ্লব বড়ুয়াকে উদ্দেশ্য করে সাংসদ নদভী বলেন, ‘আপনি বিপ্লব বড়ুয়া সাহেব, আপনি যদি এই ধরনের প্রকল্প উদ্বোধন করতে চান ভবিষ্যতে, আগামীবার আপনি নির্বাচন করেন। এমপি হয়ে আসেন, তারপর উদ্বোধন করেন। কিন্তু আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হয়ে দপ্তর সম্পাদক হয়ে আপনি নিয়মবহির্ভূত কাজ করতে পারবেন না। লোহাগাড়া-সাতকানিয়ার এই ধরনের প্রকল্প আপনি ভবিষ্যতে উদ্বোধন করার জন্য আসতে পারবেন না। আমি সহজ মানুষ নই, আসতে পারবেন না। এগুলো কেউ যদি বলে থাকে। কে বলছে, মতলব সাহেবের বিল্ডিং এমপি সাহেব আনছে। কেউ যদি এটা বলে থাকে, এটা নিয়মবহির্ভূত কথা বলছে। আইনবহির্ভূত কথা বলছে। সে কারণে কয়েকদিন পরে এগুলো কী দেওয়া হবে, ফেসবুকে দেওয়া হবে।……. আমি আল্লাহ শপথ করছি… মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি।’

বিপ্লব বড়ুয়ার প্রসঙ্গ তুলে সাংসদ নদভী আরও বলেন, ‘আপনি আমাকে বলেছেন আমার ভাইকে চেয়ারম্যান দিতে হবে। চেয়ারম্যান বানাই দিছি— বড়হাতিয়া। আপনি আমাকে বলছেন সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানাতে হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বানাই দিছি। তবে আমি ওনাকে শর্ত দিয়েছি, ঠিকাছে, আপনি মোতালেব সাহেবকে বলেন জামাত ছাড়তে। মোতালেবের সাহেবের ছোট ভাই মাহমুদুল হক জামাতের বড় হাড্ডি। মাহমুদুল হক কালকে মোতালব কলেজের ওই প্রোগ্রামে মন্ত্রী মহোদয়কে বিপ্লব বড়ুয়াকে ওনাদেরকে রিসিভ করেছে।’

সিপি