বর্ষায়ও খরায় পুড়ছে চট্টগ্রামের চা বাগানগুলো, ব্যয় বাড়ছে উৎপাদনে

চট্টগ্রামে চা বাগানগুলো বর্ষা মৌসুমেও পুড়ছে খরায়। চা বাগানের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। বর্ষাকাল, অথচ বৃষ্টি নেই। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খররৌদ্রে জ্বলে যাচ্ছে চা বাগান। তবে কিছু কিছু বাগানে কৃত্রিমভাবে পানি ছিটিয়ে চা গাছকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতে চা উৎপাদনে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে চা উৎপাদনের উত্তম সময়। কিন্তু এই বর্ষায় বৃষ্টির এমন আচরণ দেখে হতাশ বাগান মালিক ও শ্রমিকরা। ভরা বর্ষায়ও বাগানে সেচ দিতে হচ্ছে। বাগানের ইতিহাসে এই ঘটনা বিরল। দেশে আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষা মৌসুম। ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও শ্রাবণ মাসের শুরুতেও চট্টগ্রামের ২২ চা বাগানে নেই বৃষ্টির দেখা। অনেক চা বাগানের পাতায় মড়ক ধরেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টি না থাকায় ‘একটি পাতা দুটি কুঁড়ি’র চা রক্ষা করাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির রামগড়, আঁধার মানিক, নাছেহা, দাঁতমারা, নিউ দাঁতমারা, মা-জান, নেপচুন, পঞ্চবটি, মুহাম্মদ নগর, হালদা ভ্যালি, এলাহী নূর, রাঙাপানি, বারমাসিয়া, উদালীয়া, খৈয়াছড়া, আছিয়া, চৌধুরী ও কর্ণফুলী এবং বাশঁখালীর চাঁদপুর বেলগাঁও, রাঙ্গুনিয়ার কোদালিয়া, আগুনীয়া, ঠান্ডাছড়িসহ মোট ২২টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র ফটিকছড়ি উপজেলাতেই আছে ১৮টি।

তথ্যমতে, রামগড় চা বাগানে ২০২০ সালে জুলাই মাসে ৪০ ইঞ্চি, ২০২১ সালের জুলাই মাসে ২৫ দশমিক ২৫ ইঞ্চি, ২০২২ সালের জুলাই মাসে ২৪ দশমিক ৩১ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা আছে। তবে ২০২৩ সালের জুলাই মাসের ২৪ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ২০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি জুলাই মাসের শুরুতে বৃষ্টি থাকলেও ১০ জুলাই থেকে এখনও পর্যন্ত বৃষ্টিপাত নেই।

অপরদিকে খরা অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। ফলে চা গাছ থেকে কুঁড়ি আসা তো দূরে থাক, উল্টো গাছ বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছে।

রামগড় চা বাগানের ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিশাল লেকের মাধ্যমে বর্ষার পানি সংরক্ষণ করে সেখান থেকে সেচের মাধ্যমে বাগানে পানি দিতে হচ্ছে। এই সময়টাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু এবার বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে চা বাগানে। বৃষ্টি না হওয়ায় বাগানিরা ক্ষতিগ্রস্ত।’

উদলিয়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই চা পাতা উৎপাদন হয়। কিন্তু এবার বৃষ্টি পাচ্ছি কম। ফলে এর প্রভাব উৎপানে পড়বে।’

রাঙাপানি চা বাগানের ব্যবস্থাপক উৎপল বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের বাগানে চা গাছ মরতে শুরু করেছে। বাগানের ইতিহাসে এমন পরিস্থিতি দেখিনি। এবার বর্ষাকালেও খরা। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক বৈরী প্রভাবটা প্রথমেই চা বাগানের ওপর পড়েছে। কোনো কোনো চা বাগান বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাই চা উৎপাদনের জন্য বৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!