বন্যার ধকলে বিপর্যস্ত চকরিয়া-পেকুয়ার জনজীবন, মেলেনি প্রয়োজনীয় ত্রাণ

টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। এর মধ্যে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অবস্থা ভয়াবহ। এই দুই উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। বন্যায় দেউলিয়া হয়েছেন অনেক চিংড়ি ঘের মালিক। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সড়ক, গ্রামীণ রাস্তা ও কালভার্টগুলোর। পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ও হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। বেশিরভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও পেকুয়া ও চকরিয়ার কিছু এলাকায় এখনও পানি জমে রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা মানবেতর সময় পার করলেও তেমন ত্রাণ সহায়তাও পাননি। অসহনীয় দুর্ভোগে রয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা।

ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বলছেন, এখনও প্রয়োজনীয় সহায়তা পাননি তারা।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এই জেলার ৬০টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে ডুবে ছিল। সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি ছিল। পাহাড়ধস ও পানির ঢলে মৃত্যু হয় ২০ জনের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চকরিয়া উপজেলা। এই উপজেলায় ১১ জন, পেকুয়ায় ৬ জন, উখিয়াতে দু’জন ও রামুতে একজনের মৃত্যু হয়। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ করছে প্রশাসন।

চকরিয়া ও পেকুয়ার বাসিন্দারা বলছেন, এতো পানি আগে দেখেননি তারা। অধিকাংশ মানুষ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তাও পাননি। ১৯৯১ সালের দেড় লাখ মানুষের প্রাণহানির ঘূর্ণিঝড়েও এতো পানি হয়নি। গবাদি পশু ও আসবাবপত্র নিয়ে মহাসড়ক, বাঁধ, ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো সহসা বাড়ি ফিরতে পারছেন না।

পানি পুরো নেমে গেলেও বিড়ম্বনা পিছু ছাড়বে না পানিবন্দিদের, এমন অভিমত ভুক্তভোগীদের।

পেকুয়া সদরের বাসিন্দা আজিজুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় মাতামুহুরী নদী ভেঙে প্রায় সময় বন্যা হয়। বন্যার কথা চিন্তা করে আগের চেয়ে ৬ ফুট উঁচু করে বাড়ি তৈরি করেছি গত বছর। এবছর তবুও আমার বাড়ির ভেতরে কোমড় সমান পানি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাইনি।’

চকরিয়ার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘হাজার হাজার একর ধান খেত, সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন এলাকার মানুষ চাষের জমি কীভাবে ঠিক করবে আর কোথায় বীজ পাবে এই দুশ্চিন্তায় রয়েছে।’

চকরিয়ার মৎস্য চাষী কমর উদ্দিন আরমান বলেন, ‘মিঠা পানির মৎস্য চাষীরা দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত। আমার আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। বিষয়টি এমন নয় যে আমার ৫০ লাখ টাকা আছে আমি ইনভেস্ট করে ব্যবসা করি। আমরা মাছের ফিড বাকিতে কিনে মাছকে খাওয়াই। সেই মাছ বিক্রি করে ফিডের টাকা পরিশোধ করি। এই ৪০ থেকে ৫০ লাখ ক্ষতির মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ ফিডের টাকা। আমরা এই দেশের জন্য খাদ্য উৎপাদন করি প্রকৃতিকে ব্যবহার করে। আজ এসব উদ্যোক্তারা সত্যি অসহায়। এসব উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে কৃষি লোন দেওয়া গেলে আবার হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে অনেক খামারি।’

চকরিয়া সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানান, ‘বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের নানা ধরনের প্রকল্প রয়েছে। যা দ্রুত চালু করতে হবে। একইসঙ্গে বেসরকারি অনেকগুলো এনজিও রয়েছে তারাও বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারে।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ‘বন্যায় সড়ক বিভাগের ৫৯ কিলোমিটার এবং এলজিইডির ৮০ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা ও ৪৭ ব্রিজ/কালভার্ট বিভিন্ন মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা পানিতে ডুবে আছে। পানি নেমে গেলে আর্থিক মূল্য জানা যাবে।’

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান জানান, বন্যায় চকরিয়া উপজেলার ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। এখনো পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। সকল দপ্তর থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ক্ষয়ক্ষতি তথ্য সংগ্রহ করছেন। ভয়াবহ বন্যার পূর্ণাঙ্গ ক্ষতির পরিমাণ জানতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে।’

পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা বলেন, ‘মাতামুহুরী নদীর কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙনের কারণে এই উপজেলার সদর ও শিলখালী ইউনিয়নের কিছু এলাকা এখনও বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!