কর্ণফুলী গ্যাসে বিভাগীয় মামলার পরও ডিজিএমকে গৃহঋণ এমডি রফিকুলের

তাকে অতিরিক্ত দায়িত্বও দেন এমডি

বিভাগীয় মামলা চলমান থাকার পরও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) এক উপমহাব্যবস্থাপককে (ডিজিএম) ৬০ লাখ টাকা গৃহঋণ দেওয়া হয়েছে। এই কাজ করেছেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম। এমনকি তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আরেক বিভাগের। অথচ ওই পদে কর্মকর্তা ছিলেন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর অতিরিক্ত দায়িত্ব আইটি অ্যান্ড প্রিপেইড মিটারিং ডিস্ট্রিবিউশনের সাবেক ডিজিএম এবং বর্তমানে বিপণনের (দক্ষিণ) ডিজিএম প্রকৌশলী মু. রইস উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা তদন্ত শুরু করে কেজিডিসিএল। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রইস উদ্দিন আহমেদকে ৬০ লাখ টাকা গৃহঋণ মঞ্জুর করে কেজিডিসিএল। সবকিছুর পেছনে ছিল এমডি রফিকুলের হাত।

অথচ সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা থাকলে বা দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে অভিযোগপত্র দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঋণের অযোগ্য হবেন।

এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন অবৈধভাবে ২২টি গ্যাস চুলার সংযোগ দেওয়ার ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত কেজিডিসিএলের ১২ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ না এনে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। অভিযুক্তদের তালিকায় পাঁচ নম্বরে রয়েছেন ডিজিএম প্রকৌশলী রইস উদ্দিন আহমেদ।

চলতি বছরের ২০ মার্চ দুদক সচিবের এক আদেশে বলা হয়, কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিজিএম রইস উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে বিভাগী মামলা রুজু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে আদেশ জারি করা হয়। পরে এই আদেশের চিঠি বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অনুলিপির মাধ্যমে অবগত করে দুদক।

এদিকে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল দুদক মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে সেটি গ্রহণ করেননি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জেবুননেসার আদালত। পরে ওই মামলায় সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ নেন আদালত।

আরও জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর কেজিডিসিএলের এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম। এমডির হিসেবে যোগদানের পর থেকে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় ডিজিএম রইস উদ্দিন আহমেদের। এরপর তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পান আইটি অ্যান্ড প্রিপেইড মিটারিং ডিস্ট্রিবিউশন বিভাগের। সেখানেও জড়িয়ে পড়েন নানা অনিয়মে।

এছাড়া দেড় মাস আগে রইস উদ্দিন আহমেদকে কেজিডিসিএলের বিপণন বিভাগের (দক্ষিণ) অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে অফিসে আদেশ জারি করা হয়। ওই পদে এর আগে দায়িত্বে ছিলেন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা।

অভিযোগ রয়েছে, ৬০ হাজার গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার সংযোগ দেওয়ার সময় বকেয়া বিল আদায় করা বাধ্যতামূলক থাকলেও তা না করে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে প্রিপেইড মিটার দেন তৎকালীন আইটি বিভাগের ডিজিএম মো. রইস উদ্দিন আহমেদ, প্রকৌশলী হাসান সোহরাব, ব্যবস্থাপক (আইটি) প্রকৌশলী রেজাউল করিম। বকেয়া বিল আদায় না করায় সরকার শত কোটি টাকার রাজস্ব হারায়। এছাড়া বেশিরভাগ প্রিপেইড মিটারের আইডি টেম্পারিং করার নামেও বাণিজ্য করে তারা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের এমডি প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রইস উদ্দিন আহমেদকে বিভাগীয় মামলা চলমানের সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে এই গৃহ ঋণ দেওয়া হয়েছে। ঋণ দেওয়া তারিখ জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।

রইস উদ্দিন আহমেদ নাকি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমি এমডি। আপনি (প্রতিবেদক) কাকে ফোন দিয়েছেন জানেন?’

এরপর পরই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!