ফুল দিয়ে জেলে যাওয়া সাকিবভক্তকে ছাড়ালেন মাশরাফি
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তান বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেস্ট ম্যাচে মাঠে অনুপ্রবেশ করে সাকিব আল হাসানকে ফুল দেওয়ার খেসারত দিয়েছিলেন নগরীর এনায়েত বাজারের বাসিন্দা ফয়সাল। তবে সেই খেসারতের ঘানি বেশিদিন টানতে হয়নি সাকিব ভক্ত এই যুবককে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ান ডে অধিনায়ক ও নড়াইল ২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার বদান্যতায় ছয় দিন কারাভোগের পরই মুক্তি পান। এ তথ্যটি ফয়সাল নিজেই জানিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে।
জানা যায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর খেলা চলাকালীন মাঠে অনুপ্রবেশ করে সাকিব আল হাসানকে ফুল দেওয়ার ঘটনায় বিসিবির নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দায়ের করা মামলায় ৭ সেপ্টেম্বর কারাগারে পাঠায় আদালত। বিষয়টি নিয়ে ওই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ফয়সালের নিকটাত্মীয়ের অনুরোধে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার আলম দিদার মাশরাফি বিন মর্তুজাকে হোয়াটসআপের মাধ্যমে ফয়সালের মুক্তির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান। এ সময় মিরপুর স্টেডিয়ামে একইভাবে মাশরাফির এক ভক্তের এমন কাণ্ডের ক্ষমা করার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
গত ৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে মাশরাফিকে বিষয়টি জানানো হলে এর পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলারকে ফোন দিয়ে কারাবন্দী ফয়সালের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এসময় নড়াইলের এই সংসদ সদস্য ফয়সালকে বলেন, ‘তুমি টেনশন করো না। আমি বিষয়টি নিয়ে যাদের সঙ্গে কথা বলার তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তুমি কয়েক দিনের মধ্যেই জামিনে বের হয়ে যাব। আর দ্রুত সময়ের মধ্যেই মামলাটি শেষ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে আমি সাকিবের সঙ্গেও কথা বলেছি।’
৭ সেপ্টেম্বর আটক হওয়া সাকিবভক্ত ফয়সাল অবশেষে ১৩ সেপ্টেম্বর জামিনে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পান। তবে মামলাটি এখনও প্রত্যাহার হয়নি। জানতে চাইলে ফয়সাল বলেন, ‘আমাকে কারাগারের নেওয়ার দুই দিন পর তিন দিনের দিন জেলারের রুমে ডেকে আনা হয়। তখন বলা হয় মাশরাফি ভাই আমার সঙ্গে কথা বলবেন ফোনে। তখন উনি আমার সঙ্গে কথা বলে সান্ত্বনা দিয়েছেন। জামিন করানোর পাশাপাশি মামলা থেকে মুক্তি পাবার বিষয়েও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরে জানতে পেরেছি একজন সাংবাদিক মাশরাফি ভাইকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আগামী ১ অক্টোবর হাজিরা আছে। উনি বলেছেন মামলাটিও শেষ হয়ে যাবে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার আলম দিদার বলেন, ‘ফয়সালকে নিয়ে ফেসবুকে অনেক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ওই সময়ে। তার প্রতিবেশী একজনের অনুরোধে আমি মাশরাফি ভাইকে হোয়াটসআপে বিস্তারিত জানিয়ে তার জামিনের বিষয়ে বিশেষ অনুরোধ করি গত ৮ সেপ্টেম্বর। কিন্তু আমি কল্পনাও করিনি যে, তিনি বিষয়টি এতো গুরুত্ব দেবেন। পরদিনই তিনি নিজ থেকে জেলারের মাধ্যমে ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেন আর জামিনের ব্যবস্থা করেন। তাকে আশ্বস্থ করেন। এ কাজটি একমাত্র মাশরাফি ভাইয়ের পক্ষেই সম্ভব। বিষয়টি কিন্তু উনি প্রকাশও করেননি। পরে ফয়সাল বলাতেই আমি জানতে পারলাম।’
উল্লেখ্য, গত ৬ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তান ইনিংসের ১০৬তম ওভারের বোলিং শুরু করতে যাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। এ সময় এক যুবক দৌড়ে ঢুকে পড়েন মাঠের মধ্যে। ফয়সাল নামের ওই দর্শকের হাতে দেখা যায় একতোড়া লাল গোলাপ। যুবকটি সাকিবের কাছে এসেই দিলেন স্যালুট। স্যালুটেই শেষ নয়। আকস্মিক মাঠে ঢুকে পড়া ফয়সাল হাঁটু গেড়ে লাল গোলাপ উপহার দিতে চাইলেন সাকিবকে। বিসিবির নিরাপত্তাকর্মী দৌড়ে এসে ওই দর্শককে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত খেলা থেমে থাকল ৩-৪ মিনিট। ফয়সালকে তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটস্থ পাহাড়তলী থানায়। সেখানে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
সিপি