পুষ্টিহীনতায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভুগছে ১ লক্ষ গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী

পুষ্টিহীনতায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভুগছে ১ লক্ষ গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী 1গিয়াস উদ্দিন ভুলু,টেকনাফ : মিয়ানমার রাখাইন রাজ্য থেকে জুলুম নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে আসা প্রায় ১লক্ষ গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী চরম স্বাস্থ্য ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। পাশাপাশি শিশুরা বিভিন্ন ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এদিকে রোহিঙ্গাদের শরীরে ভাইরাস রোগগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশংখা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। অসুস্থ নারী ও শিশুরা প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং পুষ্টি সহায়তা পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন থেকে ৬ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী এই মানবিক বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে তাদের ধারনা। কিন্তু স্থানীয়রা মনে করছেন গত ২৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত সীমান্ত অতিক্রম করে অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুরা। এদের মধ্যে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা সরকারে দেওয়া নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান নিলেও এখনো হাজার হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করে যাচ্ছে। আর সেই সমস্ত রোহিঙ্গারা স্থানীদের সাথে মিশে গিয়ে মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ লিপ্ত হচ্ছে।
এদিকে সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিচয় আলাদা ভাবে নিশ্চিত করার জন্য তাদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে নিবন্ধিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
নতুন ভাবে গড়ে উঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো ঘুরে দেখা যায় শত শত নারী পুরুষ ও বয়স্করা বিভিন্ন ভাইরাস রোগে আক্রান্ত। সেই রোগগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার আশংখা রয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে গর্ভবর্তী মা রয়েছেন ৩০ হাজার৷ তাঁদের মধ্যে ২০০ জন গর্ভকালীন মা নানা জটিলতার রোগে আক্রান্ত।
এব্যারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বরত  কর্মকর্তারা দাবি করছেন, এখন পর্যন্ত অপুষ্টিহীনতায় কারণে কোনো মা ও শিশু মারা যায়নি৷ জারা মারা গেছে তাদের শরীরে বিভিন্ন মরন ব্যাধি ভাইরাস রোগ রয়েছে।।
সুত্রে আরো জানা যায়, ২৫ আগস্ট থেকে গত এই পর্যন্ত চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালে মোট ভর্তি হওয়া রোহিঙ্গা রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ডায়রিয়ায় ২ হাজার জন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৫শত জন, এবং চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫শত জন৷ এর বাইরেও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২০ হাজার ৮০৫ জন রোহিঙ্গা৷ ইপিআই আক্রান্ত রোগের টিকা দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার জনকে৷
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ডাঃ টিটু কুমার শীল শিশু রোগিদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমার থেকে আসা পাঁচ বছরের নিচের শিশুরা সবচেয়ে বেশি অপুষ্টিহীনতায়  ভুগছে৷ এই পর্যন্ত বেশ কয়েক হাজার শিশুকে হাম ও রুবেলা টিকা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও শিশু যারা অপুষ্টির শিকার, তাদের জন্য ক্যাম্প গুলোতে আলাদা কোনো পুষ্টিকর খাবার বিতরণের জন্য তেমন কোন সঠিক ব্যবস্থা নাই৷
ক্যাম গুলো পরিদর্শন করে আরো দেখা যায়, গর্ভবতী, মা এ শিশুদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে পুষ্টি সমস্যা৷ কিন্তু সবাইকে একই ধরনের খাবার দেয়া হচ্ছে৷ এখনো তাদের জন্য আলাদা করে পুষ্টিকর খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি।
এদিকে ইউনিসেফের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ রোহিঙ্গা শিশু বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে দুই লাখের অধিক চরম স্বাস্থ্য ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। স্থানীয়রা  অাশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন যে ভাবে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের মাঝে নানা প্রকার ভাইরাস রোগ ধরা পড়ছে।আর যেভাবে রোহিঙ্গা শিশুদের আগমন বৃদ্ধি পাচ্ছে,এই ভাবে চলতে থাকলে স্থানীয় শিশুরা তাদের সাথে মিশে বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!