পাকিস্তানে ক্রিকেট ফেরানোটা রাঙালেন জয়ের রঙে

বাবরের সেঞ্চুরি, শিনওয়ারির পাঁচ উইকেট

শ্রীলঙ্কা দলের উপর সন্ত্রাসীদের উপর হামলার পর থেকে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নির্বাসনে। পাকিস্তান অবশ্য নিজেদের মাঠে ক্রিকেট ফেরাতে সম্ভব সব উপায়ে টেষ্টা চালিয়ে আসছেন। মাঝখানে জিম্বাবুয়েকে নিয়ে গিয়েছিল বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে। তবে তা সীমাবদ্ধ ছিল শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টিতে। যাদের উপর হামলার কারণে নিজেদের মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজনের সুযোগ পাচ্ছে না পাকিস্তান সেই শ্রীলঙ্কাকে দিয়েই আবারও নিজেদের মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর প্রথমধাপটি সেরে নিল। তাও দশ বছর পর।

দশ বছর পর পাকিস্তানের করাচিতে ফিরল ওয়ানডে ক্রিকেট। শ্রীলঙ্কার মতো টেস্ট খেলুড়ে বড় কোনো ক্রিকেট দল পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট সিরিজ খেলা শুরু করল পাকিস্তানে। একই দিন পাকিস্তানের নতুন কোচ মিসবাহ-উল-হকের অভিষেকও হলো। বাবর আজমের সেঞ্চুরি আর উসমান শিনওয়ারির পেস ঝড়ে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে ৬৭ রানে উড়িয়ে দিয়ে দেশের ক্রিকেটের এ বিশেষ দিনটি স্মরণীয় করে রাখলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটারা। রাঙালেন জয়ের রঙে।

অসাধারণ এ জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল পাকিস্তান। অবশ্য প্রথম ম্যাচটি বাতিল হয়ে যায় বৃষ্টির হানায়।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ৩০৫ রান তোলে পাকিস্তান। রান তাড়া করতে নেমে উসমান শিনওয়ারির পেস তোপে ৪৬.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।

করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাট হাতে নেমে দুরন্ত সূচনা করে পাকিস্তান। ৩ উইকেটেই তুলে নেয় ২১৫ রান। শুধু ফকর জামান (৫৪) ও ইমাম-উল-হকের (৩১) উদ্বোধনী পার্টনারশিপেই আসে ৭৩ রান। পরে তৃতীয় উইকেটে হারিস সোহেল আর বাবর আজমের ১১১ রানের জুটি চ্যালেঞ্জিং স্কোরের ভিত গড়ে দেয়।

সহ-অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচেই ১০৫ বলে ১১৫ রানের অনবদ্য এক ক্রিকেটীয় ইনিংস খেলেন বাবর আজম। তার ক্যারিয়ারের এ একাদশ ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ছিল ৮টি চার ও ৪টি ছক্কার মার। পাকিস্তানের হয়ে এক বর্ষপঞ্জিতে একদিনের ক্রিকেটে দ্রুততম (১৯ ইনিংসে) এক হাজার রান সংগ্রহের রেকর্ডও গড়েছেন বাবর। আগের রেকর্ডটি ছিল জাভেদ মিঁয়াদাদের (২১ ইনিংস)। আর হারিস সোহেল ৪০ রানে রান আউট হলেও ৩২ রানে অপরাজিত থেকে যান ইফতিখার আহমেদ।

শ্রীলঙ্কার হয়ে দুটি উইকেট নেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। ম্যাচে তিনিই ছিলেন সফরকারীদের সবচেয়ে সফল বোলার।

জবাবে ৩০৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যায় অতিথি শ্রীলঙ্কা। উসমান শিনওয়ারির পেস আক্রমণে তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ে তাদের টপ-অর্ডার। ২৮ রান তুলতেই নাই হয়ে যায় লঙ্কানদের পাঁচ উইকেট।

ষষ্ঠ উইকেটে শিহান জয়াসুরিয়া ও দাসুন শানাকা ১৭৭ রানের জুটি গড়লে শুধু ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিলই থামেনি। লঙ্কানরা বুনতে থাকে জয়ের স্বপ্ন। তবে শেষরক্ষা হয়নি। ব্যাটিং দৃঢ়তা দেখালেও স্নায়ুচাপের কাছে হেরে জয়াসুরিয়া (৯৬) শতক বঞ্চিত হন মাত্র চার রানের জন্য। আর শানাকা ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন ব্যক্তিগত ৬৮ রানে। দুজনের বিদায়েই মূলত থেমে যায় রানের গতি। সঙ্গে একরকম হাতছাড়া হয়ে যায় ম্যাচও। তাই শেষ দিকে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা দলীয় স্কোরে ৩০ রান যোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যাচ সেরা উসমান শিনওয়ারি শিকার করেন ৫ উইকেট। দ্বিতীয় বারের মতো ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব গড়লেন তিনি। আর শাদাব খান উইকেট নেন দুটি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ৩০৫/৭, ৫০ ওভার (বাবর ১১৫, ফকর ৫৪, হারিস ৪০; হাসারাঙ্গা ২/৬৩)।
শ্রীলঙ্কা: ২৩৮/১০, ৪৬.৫ ওভার (জয়াসুরিয়া ৯৬, শনাকা ৬৮; শিনওয়ারি ৫/৫১, শাদাব ২/৭৬)।
ম্যাচ ফল: পাকিস্তান ৬৭ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: উসমান শিনওয়ারি
সিরিজ ফল: তিন ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ১-০ তে এগিয়ে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!