পতেঙ্গায় বিপদ বাড়াচ্ছে মূল সড়কের মাঝে ‘হাই ভোল্টেজ’ খুঁটি

মূল সড়কের মাঝখানেই বৈদ্যুতিক খুঁটি। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তবুও যেন ভ্রুক্ষেপ নেই কতৃপক্ষের। হাইকোর্ট কর্নেক সড়ক থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। উচ্চ ভোল্টেজের তার টানা বড় বড় এই খুঁটিগুলো স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে ভীতিকর। এইসব অযাচিত খুঁটির কারণে সড়কের ওই এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে যানজট লেগেই থাকে। এমন সব চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের স্টিলমিল এবং কাঠগড় এলাকায়।

সরেজমিনে পতেঙ্গা থানা এলাকার স্টিল মিলে গিয়ে দেখা যায়, কর্ণফুলী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (কেইপিজেড) গেইট থেকে খালপাড় রোড পর্যন্ত প্রায় ১২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি রয়েছে মূল সড়কের মাঝেই। খুঁটির একপাশ দিয়ে কেবল চলাচল করতে পারছে ছোট যানবাহন। বড় যানবাহনগুলো চলাচলের জন্যে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।

নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক এই স্টিলমিল রোড। কারণ এই সড়ক দিয়েই কেইপিজেডের লক্ষাধিক শ্রমিক প্রতিদিন যাতায়াত করে। তাদেরও পড়তে হয় যানজটের নিত্য ভোগান্তিতে।

পতেঙ্গায় বিপদ বাড়াচ্ছে মূল সড়কের মাঝে ‘হাই ভোল্টেজ’ খুঁটি 1

স্থানীয়রা জানান, আগে সড়কে স্থাপিত এই খুঁটির একপাশ জুড়ে ভাসমান দোকান ছিল। যা ইতোমধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে তদারকি না থাকায় উচ্ছেদের পরেও হকাররা এখানে বসে। কারণ বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় একপাশ দিয়ে বড় যানবাহন চলাচল করতে পারেনা। যার ফলে বারবার উচ্ছেদ করার পরও হকাররা ঠিক ওই জায়গা দখল করেই তাদের ব্যবসা চালায়। এর ফলে তৈরি হয় কৃত্রিম যানজট।

আবদুর রহীম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘রোডের মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় রাস্তার আয়তন কমে গেছে অনেকটাই। যার ফলে এখানে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। তাছাড়া শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এই খুঁটির উপরের উচ্চ ভোল্টের তারও জনসাধারণের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।’

বেলাল নামে এক বাস চালক বলেন, ‘এত বড় রাস্তার মধ্যে যদি এরকম বিদ্যুতের পিলার থাকে তাহলে আমরা বাম সাইড দিয়ে ওভারটেকও করতে পারি না। ভয়ে থাকি কোন সময় খুঁটি গাড়ির ওপরে ছিটকে পড়ে যায়। খুঁটিগুলো দ্রুত যথাস্থানে সরিয়ে নিলে আমরা নিরাপদে গাড়ি চালাতে পারতাম। নতুবা আমরা আতঙ্কে থাকি। আর যানজট তো আছেই।’

স্টিলমিল থেকে কিছুদূর আগাতেই দেখা যায়, পতেঙ্গা কাঠগড় মোড় থেকে পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন গার্লস কলেজের রোড পর্যন্ত মূল সড়কের মাঝে প্রায় ৮টি বৈদ্যুতিক খুঁটি রয়েছে। যা যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে এবং ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে স্থানীয়দের। অথচ এই সড়ক দিয়েই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে যায় দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা।

পতেঙ্গায় বিপদ বাড়াচ্ছে মূল সড়কের মাঝে ‘হাই ভোল্টেজ’ খুঁটি 2

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান থাকায় এমনিতেই রাস্তার আয়তন কমে এসেছে। তার উপর বৈদ্যুতিক খুঁটিকে বাড়তি ঝামেলা এবং যানজটের জন্য দায়ী মনে করছেন স্থানীয়রা।

বদিউল আলম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘রাস্তার একদম মাঝখানে এরকম বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে সড়কের কাজ করল কিভাবে? তারা কি দেখেনি? নাকি ইচ্ছা করেই করল? এখানে প্রায় সময় যানজট লেগে থাকে। এতে আমরা সত্যিই অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি।’

হাসনাত হাসান সোহাগ নামে এক চাকুরিজীবী বলেন, ‘প্রতিদিন অফিস থেকে আসার সময়ে এমনিতেই ক্লান্ত থাকি। এর উপর অসহ্য যানজটের কবলে পড়লে তো আর কথাই নেই। যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তা উন্মুক্ত করে দিলেই এ থেকে মুক্তি মিলবে।’

৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবদুল বারেক কোম্পানি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগকে এ বিষয়ে একাধিকবার বলার পরেও তারা খুঁটিগুলো অপসারণ করেনি। জনগণের সমস্যা সৃষ্টি করে এ ধরনের কাজ করার যৌক্তিকতা আমি দেখছি না। তাদের উচিত দ্রুত খুঁটিগুলো অপসারণ করে যা চলাচলের পথ উন্মুক্ত করে দেয়া।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (হালিশহর) নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এই বৈদ্যুতিক খুটিগুলো সরানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সড়কের মাঝের খুঁটিগুলো আমরা কিছুদিনের মধ্যে সড়িয়ে একপাশে নিয়ে আসবো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা করে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো এমনভাবে স্থাপন করবো যেন দেখতে দৃষ্টিনন্দন হয়।’ শীঘ্রই এ কাজটি সম্পন্ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে সড়ক ও মহাসড়কে বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ বিভিন্ন ধরনের খুঁটি ৬০ দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ওই নির্দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, সরকারের পূর্ত বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের খুঁটি সরানোর এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতেও বলা হয়েছিল।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!