নিপুণ কৌশলে দুই বন্ধুই মেরে দিলেন কাছের মানুষের বড় অংকের টাকা

মো. জামাল উদ্দিন (৪০) একজন প্রথম সারির ঠিকাদার। তার সেই ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে রেলওয়েতে ঠিকাদারি করার আগ্রহ প্রকাশ করে তারই পরিচিত দুই যুবক ইরফান চৌধুরী সাকিব (২৮) ও শাহাদাত হোসেন তামিম(৩০)। সাকিব ও তামিম সম্পর্কে বন্ধু।

সরল বিশ্বাসে তাদের নিজের ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহারের অনুমতি দেন জামাল উদ্দিন। শুধু তাই নয়, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহন করার খরচের জন্য ও ওয়ার্ক অর্ডার নেয়ার জন্য দফায় দফায় তাদের ৯ লাখ টাকাও দেন জামাল উদ্দিন।

কয়েকদিন পর ওই লাইসেন্সে দুটি কাজের ওয়ার্ক অর্ডার কথা জানায় সাকিব ও তামিম। ৯ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ টাকা ও ৬৭ লাখ ৭২ হাজার ২৬৫ টাকার ওই দুটি প্রকল্প পাওয়ার পর দেখা দেয় নতুন সমস্যা। কাজ করানোর মত টাকা নাই সে দুই যুবকের কাছে। কিন্তু এই সমস্যারও সহজ সমাধান বের করে সাকিব ও তামিম। জামালকে জানায়, ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া যাবে। তাদের পরামর্শে ওয়ার্ক ওর্ডারের বিপরীতে ওয়ান ব্যাংকের আন্দরকিল্লা শাখায় লোনের জন্য আবেদন করেন জামাল৷

ব্যাংকও আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা লোন দেয় জামালকে। জামাল সেই টাকা থেকে ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলে দেন সাকিব ও তামিমকে। কিন্তু এর পরই বদলে যেতে আরম্ভ করে দৃশ্যপট। কাজের আর কোনো অগ্রগতি নেই৷ ব্যাংক লোনের কিস্তি শোধেও কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি সাকিব ও তামিমের। এসবের একপর্যায়ে সন্দেহ জাগে জামাল উদ্দিনের। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, ওয়ার্ক অর্ডারের কপির বিপরীতে ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন জামাল উদ্দিন সেই ওয়ার্ক অর্ডারটিই ভুয়া।

এরপর ‘দুই প্রতারক’ এই প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে টাকা ফেরত দিবে বলে নতুন করে হয়রানি আরম্ভ করে জামাল উদ্দিনকে। কিছুদিন টাকা ফেরত দিবে বলে ঘুরানোর পর একপর্যায়ে অন্য রাস্তায় হাটে তারা। জামালকে হুমকি দেয় এই টাকা ফেরত চাইলে বড় ধরনের ক্ষতি করার।

এমন প্রক্রিয়ায় প্রতারিত হওয়ার ঘটনায় শেষ পর্যন্ত দুই প্রতারক যুবক ইরফান চৌধুরী সাকিব (২৮) ও শাহাদাত হোসেন তামিমের (৩০) বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় বিশ্বাস ভঙ্গ করে অর্থ আত্মসাৎ ও হুমকির অভিযোগে একটি মামলাদায়ের করেছেন জামাল উদ্দিন।

এর মধ্যে ইরফান চৌধুরী সাকিবের বাড়ি পটিয়ার ডেঙ্গাপাড়ায়। তিনি পশ্চিম ডেঙ্গাপাড়ার এমপি সিরাজের বাড়ির মো. ইউসুফ চৌধুরীর ছেলে। অন্যজন শাহাদাত হোসেন তামিমও একই বাড়ির বাসিন্দা।

গত ১২ ডিসেম্বর এই মামলাটি রেকর্ড করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। জামাল উদ্দিনের করা মামলার এজাহারে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নেজাম উদ্দিন।

ওসি মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘এই মামলার মূল অভিযোগটাই ওয়ার্ক পারমিট নকল করে প্রতারিত করার। এখন ওয়ার্ক পারমিট নকল করা হয়েছে নাকি হয়নি সেটাতো আমরা বলতে পারবো না। আমরা এটি যাচাই করছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে (যারা ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করে) আমরা ওয়ার্ক পারমিটের বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছি। অন্যান্য কাগজপত্রগুলোও আমরা যাচাই করছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে। আমরা খুব গুরুত্বের সাথেই তদন্ত করছি।’

প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে জামাল উদ্দিন বলেন, ‘তারা আমার পরিচিত। তারা আমাকে যা বলেছে তা আমি সরলভাবেই বিশ্বাস করেছি। ভেবেছি আমার লাইসেন্স কাজে লাগিয়ে যদি তারা কিছু করতে পারে তাহলে আমার ক্ষতি কি। আর কাজ করার জন্য তাদের আমি আর্থিক সহায়তাও করেছি। ব্যাংক লোনের জন্যও আবেদন করেছি। এখন দেখলাম ব্যাংকও যাচাই না করে লোন দিয়েছে। কিন্তু সাকিব ও তামিমের সকল লেনদেনের প্রমাণ আমার কাছে আছে। তাদের মানি রিসিডের মাধ্যমেই আমি টাকা দিয়েছি।’

জানা গেছে, শাহাদাত হোসেন তামিম কর্ণফুলী বিন্টার্স নামে একটি কোম্পানির মালিক৷ এই কোম্পানির নামেই নিয়মিত রেলে কাজ করেন। নিজের কাজের ওয়ার্ক অর্ডার নিয়ে সেটা নকল করে তার চাচাতো ভাই সাকিবকে দিয়ে ফাঁদ পেতে এভাবে আরও অনেককে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তবে এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

জামাল উদ্দিনের এসব অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে অভিযুক্ত সাকিব ও তামিমের সাথে কয়েকদফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এআরটি/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!