নগরীর সড়কে বিআরটিএর অভিযান কমেছে

ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও নানা অনিয়মে জর্জরিত নগরের সড়কগুলোতে শৃংখলা ফেরাতে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করলেও সম্প্রতি কার্যক্রম কমেছে সংস্থাটির।

ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোর চালক হেল্পারদের আটক, জরিমানা, কাগজপত্র জব্দ ও যানবাহন ডাম্পিং করাসহ বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করে বিআরটিএ। সম্প্রতি ৩ ম্যাজিস্ট্রেটের ২ ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পদায়নের ফলে সড়কে অভিযান কমেছে উল্লেখযোগ্যহারে।

জানা গেছে, বিআরটিএতে ১৮ মাস ম্যাজিস্ট্রেট শূন্য থাকার পর ২৭ আগস্ট ২০১৮ দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীর ও এস এম মনজুরুল হক ও পরে সোহলে রানা যোগদান করেন। এই ৩ ম্যাজিস্ট্রেট সড়কে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করেন।
সম্প্রতি দুই ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা কুমিল্লায় ও জিয়াউল হক মীর কুতুবদিয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পদায়নের ফলে বিআরটিএ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সংখ্যা দাঁড়ায় একজন। বিআরটিএতে দুজন নতুন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদে পদায়ন হলেও এখনো যোগদান করেননি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯ মাসে সোহেল রানার আদালত ২২দিনের অভিযানে ১১৪ মামলা, ৯২০৫০০ টাকা জরিমানা আদায় , ৭৪ যানবাহনের কাগজপত্র জব্দ ও ৪ গাড়ি ডাম্পিং করেন। এস এম মনজুরুল হকের আদালত ৯ দিনের অভিযানে ৫৮টি মামলা, ১ লাখ ৮১হাজার টাকা জরিমানা আদায়, ২ চালকের কারাদণ্ড, ১৫ টি যানবাহনের কাগজপত্র জব্দ, ৬ টি যানবাহন ডাম্পিং করেন।

জিয়াউল হক মীরের (আদালত ১৩) ১০ দিনের অভিযানে ১৩২ টি মামলা, ২লাখ ৭০ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায়, ১ জন চালকের কারাদণ্ড, ১৩ টি যানবাহনের কাগজপত্র জব্দ, ৩ টি যানবাহন ডাম্পিং করেন।

৪১ দিনের অভিযানে ৩৩৪টি মামলা,১৩ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা আদায়, ৩ চালকের কারাদণ্ড, ১০২ টি যানবাহনের কাগজপত্র জব্দ, ১৩ টি যানবাহন ডাম্পিং করেন।

এদিকে এ মাসে অভিযান ও আটক বা জরিমানার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। (২৪ আগস্ট) পর্যন্ত সোহেল রানার আদালত ২ দিনের অভিযানে ১৪ টি মামলা,১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়, ৫টি যানবাহনের কাগজপত্র জব্দ করেন।

এস এম মনজুরুল হকের আদালত ১১ দিনের অভিযানে ৯০ টি মামলা,২ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়,১ জনের কারাদণ্ড, ২৯ টি গাড়ির কাগজপত্র জব্দ, ২ টি গাড়ি ডাম্পিং করেন। জিয়াউল হক মীরের আদালত কোন অভিযান পরিচালনা করেননি।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নিরাপদ ও শৃংখলাপূর্ণ সড়ক পেতে অভিযানগুলো অব্যাহত রাখা জরুরি। সড়কের পাশাপাশি বিআরটিএ কম্পাউন্ডে দালালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো এবং বিআরটিএর কার্যক্রম নাগরিক পরীক্ষণের আওতায় আনা জরুরি।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘বিআরটিএতে আরো জনবল বাড়ানো দরকার। তবে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানার জন্য অভিযান নয় নাগরিক সচেতনতা জরুরি। আমরা সচেতন না হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না।’

বিআরটিএ উপ-পরিচালক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘নতুন ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যাপারে আমরা এখনো কিছু জানিনা।’

ফেনী সদরের ভূমি কর্মকর্তা মো. নুরের জামান চৌধুরী ২৮ আগস্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বিআরটিএতে পদায়ন হলেও এখনও যোগদান করেননি। তিনি জানান তিনি আগামী সপ্তাহে যোগদান করবেন।

কনজ্যুমারস অ্যসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহÑসভাপতি মো. নাজের হোসেন বলেন, সরকার সড়ক নিরাপত্তা জোরদার করতে হলে বিআরটিএতে আরও ম্যাজিস্ট্রেটসহ লোকবল বাড়াতে হবে। একই সাথে বিআরটিএর কার্যক্রম নাগরিক পরীক্ষণের আওতায় আনতে হবে। আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন কমিটি নামে যে কমিটি আছে সেখানে বাস-মালিক ও শ্রমিক কমিটির প্রতিনিধি থাকলেও ভোক্তা প্রতিনিধি নেই। এটি বিআরটিএ ও মাস মালিকদের দেনদরবার ছাড়া আর কিছুই হবে না।

সিএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!