ঢাকা প্লাটুনকে আবারও হারিয়ে শেষ চারের পথে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স

আট ম্যাচে ছয় জয় চট্টগ্রামের

চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ঢাকা-চট্টগ্রামের মুখোমুখি লড়াইয়ে হয়েছিল রানউৎসব। যদিও চট্টগ্রামের বিশাল রানের পাহাড় পাড়ি দেয়ার আগেই থেমে গিয়েছিল ঢাকা। দুদিন বিরতির পর আবারও বিপিএল ঢাকায়। ঢাকায় এসে যেন হারিয়ে গেলো বিপিএল। ফিরে গেলো সেই সাদামাটা রূপে। বিপিএলের তৃতীয় পর্বের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ১২৫ রানের মামুলি লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিল ঢাকা প্লাটুন। জবাবে এক ওভার বাকি থাকতেই ইমরুল কায়েসের ব্যাটে ভর করে ৬ উইকেট হারিয়ে ঢাকাকে আবারও হারিয়ে সুপার ফোরে এক পা দিয়ে রাখলো চট্টগ্রাম।

ইনজুরি নিয়ে চট্টগ্রাম এসে চ্যালেঞ্জার্স অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ দুই ম্যাচ খেলার পর আবারও ইনজুরি নিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন। ঢাকার তৃতীয় পর্বেও ফিট হতে না পারায় অধিনায়কত্বের দায়িত্ব বর্তায় ইমরুল কায়েসের কাঁধে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ইমরুল কায়েস আগের দিনই বলেছিলেন, এবারের ঢাকাপর্বে অন্তত একটি ম্যাচ জেতার লক্ষ্য তাদের। একটি ম্যাচ জিতলে ‘সুপার ফোর’ অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে। ইমরুলের এই চাওয়া পূরণে বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। ঢাকায় দ্বিতীয়পর্বের প্রথম ম্যাচেই সেই লক্ষ্যপূরণ হয়ে গেল চট্টগ্রামের। আর সেটা হলো ইমরুলেরই ব্যাটে চড়ে। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) মিরপুরে ঢাকাকে হারিয়ে শেষ চারের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।

মামুলি রানের পুঁজি নিয়েও লড়াই জমিয়ে তুলেছিল ঢাকা প্লাটুন। কিন্তু একপ্রান্ত আঁকড়ে রেখে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়ক ইমরুল কায়েস দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। চট্টগ্রামের ৬ উইকেটের এই জয়ে ইমরুল কায়েস প্রমাণ করলেন টি-টোয়েন্টিতেও ধৈর্য নিয়ে ব্যাট করে জেতানো যায়। ৫৩ বলে ইমরুলের অপরাজিত ৫৪ রানের হাফ-সেঞ্চুরি চট্টগ্রামের ব্যাটিংয়ের সেরা এবং শিক্ষণীয় অংশ হয়ে রইল। ৫ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ইমরুল ধৈর্যশীল কায়দায় এই ম্যাচজয়ী ৫৪ রান করেন। যে ধৈর্যের বড়ই অভাব ছিল ঢাকা প্লাটুনের ব্যাটিংয়ে।

ঢাকা প্লাটুনের ১২৪ রানের জবাব দিতে নেমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ২৫ রানে হারায় দুই ওপেনারকে। উইকেটে বল গ্রিপ হচ্ছে। বল ব্যাটে একটু দেরিতে আসছে। এমন উইকেটে সঠিক জায়গায় বল রাখলে ব্যাটসম্যানের জন্য খেলা কঠিন। বোলিংয়ে মাশরাফি সেই সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগালেন। এক স্পেলে নিজের টানা ৪ ওভার শেষ করলেন। ৪ ওভারে ১৪ রানে ১ উইকেট পান মাশরাফি। কিন্তু পাওয়ার প্লে’র পরে নিজেদের প্রথম দুই ওভারে তিসারা পেরেইরা ও স্পিনার শাদাব খান একটু বেহিসেবি বোলিং করে ফেলেন। এই দুই ওভারে যথাক্রমে ১৮ ও ১২ রান যোগ করে চট্টগ্রাম। মাশরাফি ও মেহেদির বোলিংয়ে যে চাপের মুখে পড়েছিল চট্টগ্রাম, সেটা কাটিয়ে উঠে পেরেইরা ও শাদাবের খরুচে ওভারে।

ইমরুল কায়েস জানতেন এই উইকেটে ম্যাচ জিততে হলে ধৈর্য নিয়ে ব্যাট করতে হবে। সেটাই তিনি করে দেখালেন। ৫২ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পুরো করেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে ব্যাট হাতে সময়টা দারুণ কাটছে ইমরুলের।

টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত বলের হিসেবে সবচেয়ে ধীরগতির হাফ-সেঞ্চুরি এটি। কিন্তু ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী ইমরুলের এই হাফ-সেঞ্চুরির মূল্য অনেক বড়। ম্যাচ জেতানো হাফ-সেঞ্চুরি। মিরপুরের ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন এই উইকেটে উভয় দলের ব্যাটসম্যানরা যেখানে খাবি খাচ্ছিলেন, সেখানে ধৈর্য নিয়ে ব্যাট করে কিভাবে দলকে জেতাতে হয়- সেই প্রমাণ রাখলেন ইমরুল কায়েস।

এর আগে টসে জিতে যমুনা ব্যাংক ঢাকা প্লাটুনকে ব্যাট করতে পাঠায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল এবং এনামুল বিজয়ের ব্যাটে ভর দিয়ে শুরুটা বেশ ভালই করে ঢাকা। কিন্তু দলে উইকেটের মড়ক শুরু হয় এনামুলের বিদায়ের সাথে সাথে। দলীয় ৩২ রানে রান আউটের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় বিজয়কে। বিজয়ের আউটে এক প্রকারে ঘুরে যায় চট্টগ্রামের ভাগ্যের চাকা। দুই বল খেলা মেহেদী হাসানকে শূন্য হাতেই সাজঘরে ফিরে যেতে হয় প্লাঙ্কেটের বলে। এরপর ৬৮ রান তুলতেই একে একে বিদায় নেন ঢাকার আরও ৫ ব্যাটসম্যান। ৩২ রানে দুই উইকেট হারানো ঢাকা নিমিষেই ৬৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে।

আর কেউ সঙ্গ না দিলেও উইকেটের এক প্রান্ত আগলে রেখে একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মোমিনুল। কিন্তু এবারও বিধি বাম। ওয়াহাব রিয়াজের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে নিজের উইকেটটি হাতে ধরে চট্টলার উইকেট কিপার সোহানের হাতে বিসর্জন দিয়ে আসেন। শেষদিকে ওয়াহাব মাশরাফি এবং ওয়াহাব রিয়াজের ব্যাটে ভর দিয়ে দলীয় সংগ্রহ ১০০ ছাড়ায় ঢাকা। দলকে এনে দেন ১২৪ রানের সংগ্রহ।

চট্টগ্রামের হয়ে দুটি করে উইকেট পান মুক্তার আলি এবং রায়ান বার্ল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!