ঢাকা থেকে এসে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ‘নথি চুরি’র চেষ্টায় অচেনা দুই যুবক, কী আছে নেপথ্যে?

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আসবে ১৫ দিন পর

চট্টগ্রামে কাস্টম হাউসের অপারেশন ম্যানেজারের কক্ষে দুই যুবকের অবৈধ প্রবেশের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি অফিস সকাল ৯টা থেকে শুরু হলেও দুই যুবক সকাল ৭টায় প্রবেশ করেন কাস্টম হাউসে। পরে তাদের অপারেশন ম্যানেজারের রুম থেকে আটক করে আনসার সদস্যরা। এরপর তাদের পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়। এই দুজন ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে চট্টগ্রাম এসেছিলেন।

সরকারি গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় কিভাবে এই দুজন প্রবেশ করেছে, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এছাড়া তাদের দু’দিনের রিমান্ডে নিয়েছে বন্দর থানা পুলিশ।

কাস্টমসের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, বিল অব এন্ট্রি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি এবং আলামত নষ্ট করার জন্যই ওই দুই যুবক অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে কাস্টম হাউসে। আর এই ঘটনার সঙ্গে ভেতরের কেউ জড়িত। তা নাহলে হুট করে বাইরের লোকের পক্ষে কাস্টমসের স্পর্শকাতর একটি কক্ষে প্রবেশ সম্ভব না।

এই ঘটনার পর পরই ৪ ফেব্রুয়ারি চার সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে কাস্টমস। আগামী ১৫ দিন পর ঘটনার প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে।

আটক দু’জন হলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানার ১৩৭ রহমতপুর এলাকার আলী আহমদের ছেলে মো. মেহেদী হাসান ওরফে রায়হান (২৯) এবং ফেনী সদর থানার নৈরাজপুর এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে খায়েজ আহমেদ (২৯)।

ওইদিন রাতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বাদি হয়ে দু’জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কাস্টমসের অপারেশন ম্যানেজার কক্ষটি খুবই স্পর্শকাতর একটি জায়গা। যেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৭ হাজার বিল অব এন্ট্রির দাখিলা সংরক্ষণ করা হয় রাজস্ব আদায়ের জন্য। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি ও নিষিদ্ধ মালামাল খালাসের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র চুরি বা আলামত নষ্ট করতে যায় ওই দুই যুবক।

আরও জানা গেছে, অপরিচিত কোনো লোকের পক্ষে রুমে সংরক্ষণ থাকা বিল অব এন্ট্রির শত শত নথিপত্রের মধ্যে কোনো একটি নথি খুঁজে বের করা দুষ্কর। কাস্টম হাউস ও সিঅ্যান্ডএফের কিছু অসাধু লোকজন অবৈধ এই কাজে জড়িত থাকতে পারে।

এদিকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করলে দু’দিন মঞ্জুর করেন আদালত।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায় দু’জন ব্যক্তি কাউকে কিছু না বলে কাস্টম হাউসে প্রবেশ করেন। পরে তাদের গতিবিধি সন্দেহ হলে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা। একপর্যায়ে কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার নুরুন নাহার লিলির কক্ষের তালা খোলা দেখতে পেয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন আনসার সদস্যরা। এই সময় একজনকে রুমের ভেতরে অন্ধকারে বিভিন্ন নথিপত্র খোঁজাখুঁজি করতে দেখতে পান তারা। একই সময় অপরজনকে হাউসের অভ্যন্তরে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা গেলে দু’জনকে নিচে আনা হয়। নিচে আনার পর কৌশলে মোটরসাইকেল করে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের আটকে রাখা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই যুবক মোটরসাইকেল করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসেছেন বলে জানান।

মামলার বিবরণীতে আরও বলা হয়, তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল (ফেনী-ল-১২-০২৭০), বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫টি মোবাইল ফোন, ২টি চাবির ছড়া, রুমের ১টি তালা, একটি কালো ব্যাগের ভেতর থাকা একটি ল্যাপটপ, ১টি ইউএসবি ক্যাবল, ১টি রাউডার, ২টি ইউএসবি হাফ, তালা খোলার ৫ ইঞ্চি সাইজের ১টি মাস্টার চাবি জব্দ করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, মেহেদী হাসান ওরফে রায়হানের বিরুদ্ধে এর আগেও সিএমপির বন্দর, হালিশহর ও খুলশী থানায় বিভিন্ন সময় চুরি, ফৌজদারি অপরাধ ও মাদকের চারটি মামলা রয়েছে। অপরদিকে খায়েজ আহমেদের বিরুদ্ধে চুরি, ফৌজদারি অপরাধ ও মাদকের তিনটি মামলা রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান  চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার মেহেদী হাসান ও খায়েজ আহমদের বিরুদ্ধে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত দু’দিনের মঞ্জুর করেন। তাদের রিমান্ড চলছে, তদন্তও প্রক্রিয়াধীন। রিমান্ড শেষে বিস্তারিত জানতে পারব।’

জানতে চাইলে কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার (প্রিভেনটিভ) মাহফুজুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই কাস্টমসের পক্ষ থেকে তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে ঘটনার দিন চার সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিন পর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা রয়েছে।’

আলামত ও নথিপত্র নষ্ট হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর পরই অপারেশন ম্যানেজারের কক্ষটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তদন্তের পর সব কিছু বলা যাবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!