ট্রান্সফরমার চোর ধরতে ছুটিতে থাকা চুয়েট ছাত্রের যন্ত্র দিল সমাধান

ছুঁলেই রিং যাবে মোবাইল নম্বরে

বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরি ধরতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এক শিক্ষার্থীর তৈরি করা যন্ত্র সাড়া ফেলেছে সুদূর গ্রামেও। ডিভাইসটি ট্রান্সফরমারের গায়ে লাগানোর পর কেউ ওই ট্রান্সফরমার স্পর্শ বা ক্ষতির চেষ্টা করলে ওই ডিভাইস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে রিং বাজতে থাকে। আবার যন্ত্রটি বন্ধ করে দিয়ে চুরি করারও সুযোগ নেই। যন্ত্রটি তৈরিতে খরচ মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে একদল চোর ডিভাইসযুক্ত ট্রান্সফরমার চুরির চেষ্টা করলে ওই ডিভাইস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কৃষক নাজমুল হকের মোবাইল নম্বরে রিং যেতে থাকে। এ সময় তিনি প্রতিবেশীদের নিয়ে ট্রান্সফরমারের দিকে আসতে থাকেন। লোক আসতে দেখে চোরের দল চুরি করার সরঞ্জাম ফেলেই পালিয়ে যায়।

ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকাতে অভিনব ডিভাইসটি তৈরি করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) প্রথম বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ রফিক।

পীরগঞ্জের সাগুনী গ্রামের বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের লো-লিফ্ট পাম্প (এলএলপি) তত্ত্বাবধায়নকারী কৃষক নাজমুল হক জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সাগুনী গ্রামের বিদ্যুত্চালিত এলএলপির পিলার থেকে ১০ কেভি তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। ফলে জমিতে সেচ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শুকিয়ে যেতে থাকে প্রায় অর্ধশত একর জমির ফসল। এ ব্যাপারে স্থানীয় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অফিসে যোগাযোগ করা হলে চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারের মূল্য বাবদ প্রায় ২ লাখ টাকা অফিসে জমা দিলে সংযোগটি পুনরায় চালু করা যাবে বলে জানানো হয়। এতে ভেঙ্গে পড়েন কৃষক নাজমুল।

বাবার এই বিমর্ষ অবস্থা দেখে করোনার ছুটিতে বাড়িতে অবস্থানকারী নাজমুলের ছেলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) অধ্যয়নরত প্রথম বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ রফিক বিকল্প কিছু ভাবতে থাকেন। এরপরই তার মাথায় চিন্তা আসে ট্রান্সফরমার চুরি প্রতিরোধে ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ভাবনের। একপর্যায়ে রফিক ডিভাইসটি তৈরি করতে সক্ষম হন।

রফিক জানান, ট্রান্সফরমারে সর্বনিম্ন ৬০ ডেসিবল মাত্রার কম্পনের সৃষ্টি হলে কোনো ধরনের সংকেত তৈরি ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনট্যাক্ট নম্বরে ফোন যাবে। এছাড়া ডিভাইসটি সোলার প্যানেলে চলার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই কার্যকর থাকবে।

এই ডিভাইসটি গত ১০ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে সাগুনি এলএলপি প্রকল্পের ট্রান্সফরমারে স্থাপন করা হয়। এরপর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত দুইটার দিকে একদল চোর ডিভাইসযুক্ত ট্রান্সফরমার চুরির চেষ্টা করলে ডিভাইস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এলএলপি তত্ত্বাবধায়নকারী কৃষক নাজমুল হকের মোবাইল নম্বরে রিং যেতে থাকে। এ সময় তিনি প্রতিবেশীদের নিয়ে ট্রান্সফরমারের দিকে আসতে থাকেন। লোক আসতে দেখে চোরেরা চুরি করার সরঞ্জাম ফেলে পালিয়ে যায়।

চুয়েট ছাত্র রফিক জানান, ডিভাইসটি মোবাইল সিমকার্ড ও সেন্সরের মাধ্যমে কাজ করে। ট্রান্সফরমারের হ্যাংগারে একটি ওয়াটার প্রুফ মাস্টার বক্স লাগানো থাকে। সেখান থেকে চিকন তারের সাহায্যে ট্রান্সফরমারের তলায় সেন্সর লাগানো হয়। সেগুলোও ওয়াটার প্রুফ। এটি মূলত ফোন নম্বরের সঙ্গে কানেক্ট থাকে। এ ডিভাইসে একাধিক ফোন নম্বর সেটআপ করা থাকলে পর্যায়ক্রমে সেটআপকৃত নম্বরে সিরিয়ালি কল যেতে থাকবে। ডিভাইসটি বন্ধ করে দিয়ে চুরি করার সুযোগ নেই বলেও রফিক জানান। ডিভাইসটি তৈরিতে খরচ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পীরগঞ্জ অঞ্চলের সহকারী প্রকৌশলী খায়রুল আলম সাফল্যের কথা নিশ্চিত করে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ট্রান্সফরমারে এ ডিভাইস লাগানো হয়েছে।

ডিভাইসটি উদ্ভাবনের জন্য রফিকের বাড়িতে গিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানান ওই প্রকৌশলী।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!