টেকনাফে মাদক সেবনকারীদের সংখ্যা বাড়ছে

টেকনাফে মাদক সেবনকারীদের সংখ্যা বাড়ছে 1গিয়াস উদ্দিন ভুলু , টেকনাফ : সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে ইয়াবা পাচারের পাশাপাশি মাদক সেবনকারী ও আসক্তদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে যুব সমাজ ও স্কুল-কলেজ পড়–য়া কম বয়সী ছাত্ররা।
বিভিন্ন সুত্রে তথ্য নিয়ে জানা যায়, ইদানিং টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশীর ভাগ তরুণ যুবক মাদক পাচারের সাথে জড়িত হওয়ার পাশাপাশি মাদক সেবনে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাদক সেবনকারীদের দেখা না গেলেও সন্ধ্যার পর তাদের দেখা মিলে। নাম প্রকাশ্যে অনিশ্চুক টেকনাফ উপজেলা ও পৌরসভার বেশ কিছু নির্দিষ্ট স্থানে মাদক সেবনকারীদের আড্ডা চোঁখে পড়ে এবং বিভিন্ন প্রকার মাদক সেবনের আড্ডায় মেতে উঠে। টেকনাফ পৌরসভার বেশ কয়েকটি হোটেল ও নিজস্ব প্রতিষ্টানেও সন্ধ্যার পর মাদক সেবনকারীদের আড্ডা বসে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যতই দিন যাচ্ছে ততই মাদক আসক্তদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হুমকি ও আতংকের মধ্যে রয়েছে আগামী প্রজন্ম ও শিশু-কিশোরদের অভিভাবকরা। কারন এই ভাবে দিনের পর দিন মাদক পাচার ও মাদক সেবনকারীদের সংখ্যা বেড়ে গেলে আগামী প্রজন্মকে মাদকের আগ্রাসন থেকে বাচাঁতে ও রক্ষা করতে খুবেই কষ্টকর হয়ে পড়বে। এদিকে মাদক পাচার প্রতিরোধ ও মাদক সেবনকারীদের আইনের আওয়াতাই নিয়ে আসতে কঠোর ভুমিকা পালন করছে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। সেই ধারাবাহিকতায় গত এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১ শতাধিক যুবকে মাদক সেবনের দায়ে ভ্রাম্যান আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রধান করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘ বছরের পর বছর মাদকে আসক্ত এই রকম একজন যুবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমি মাদককে ছাড়তে চাই, কিন্তু মাদক আমাকে ছাড়তে চায় না। দেশী-বিদেশী তৈরী এমন কোন মাদক নেই, যা আমি সেবন করিনি। দেশীয় তৈরী বাংলামদ (ছোলাই মদ) থেকে শুরু করে বিয়ার, মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন প্রকার বিদেশী মদ, গাজাঁ, ফেন্সিডিল, হিরোইন, দেশীয় ফার্মেসী থেকে বিভিন্ন প্রকার ঔষধ নিয়ে সৃষ্ঠ করা ককটেল, সিরিজ দিয়ে পুশ করা নেশার ইনজেকশন, মিয়ানমারের মরণ নেশা ইয়াবাসহ বলতে গেলে কোনটাই আমার বাদ নেই। আমি যখন মাদক সেবন করি, তখন বউ-বাচ্চাসহ দুনিয়াদারীর কোন কিছুই আমার খেয়াল থাকে না। এই মাদক সেবন করতে গিয়ে জীবনে আমার পরিবারের অনেক টাকা আমি ক্ষতি করেছি। এবং করে যাচ্ছি, একথাগুলো র্নিদ্বিধায় বলে গেলেন মাদকে আসক্ত যুবকটি। খবর নিয়ে আরো জানা যায়, টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় মাদক সেবকদের খপ্পরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার শিক্ষিত, সুশীল ও সর্বস্থরের মানুষ। পাড়া-মহল্লায় ও গ্রামেগঞ্জে যত ধরনের অপরাধ সংঘঠিত হয়, সমস্ত অপরাধের পেছনে মাদকাসক্তদের হাত থাকে। কারণ এলাকার প্রভাবশালী ও অপরাধ কর্মকান্ডের চক্রান্তকারীরা মাদকাসক্তদের মাদক সেবন করিয়ে অল্প টাকার বিনিময়ে অপরাধ সংঘঠিত করার জন্য উৎসাহিত করে। চুরি, ছিনতাই, জবরদখল, অপহরণ, ডাকাতি ও খুনসহ এমন কোন অপরাধ নেই তারা ব্যবহার হয় না। টেকনাফ উপজেলার অপরাধ দমনে থানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিমাসে ১০/১৫ জন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে আটক এবং অভিভাবকরা আইনের হাতে তুলে দিচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই পাচ্ছে ভ্রাম্যমান আদালতের সাজা, আবার অনেকেই বিভিন্ন মাদক মামলার আসামী হয়ে যাচ্ছে কারাগারে। এদের
মধ্যে বেশির ভাগ মাদক আসক্ত যুবক হচ্ছে হতদরিদ্র পরিবারের।
এব্যাপারে টেকনাফ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা লোকাশীষ চাকমা জানান, টেকনাফ উপজেলার মাদক পাচার ও মাদক সেবনকারী হার বেড়েই যাওয়ায় এই বিষয় গুলো জাতীর জন্য খুবই দু:খজনক। তিনি আরো বলেন, টেকনাফ উপজেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জনবল খুবেই কম তার পরও এলাকারবাসীর সহযোগীতা পেলে যেকোন মাদক পাচার প্রতিরোধ ও মাদক সেবনকারীদের ধরতে আমরা অভিযান পরিচালনা করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকব।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!