টাকা হাতে একটি ছবি, ২ কাস্টমস কর্মকর্তার হঠাৎ বদলি ও কিছু প্রশ্ন

টাকা হাতে একটা ছবির কারণে হঠাৎ করে কাস্টম হাউজের এয়ারপোর্ট ও এয়ারফ্রেইট শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান সরকার এবং রেহানা পারভীনের স্ট্যান্ড রিলিজ (তাৎক্ষণিক বদলি) নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

জানা গেছে, একটি সিন্ডিকেট চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনারের কাছে একটি ছবি সরবরাহ করে। এতে দেখা যায় নিজ কার্যালয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা রেহানা পারভীনের হাতে টাকা এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ওই ছবিতে এক পাশে আছেন আরেক রাজস্ব কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান সরকার।

যে ছবির অভিযোগের উপর ভিত্তি করে দুই কর্মকর্তার তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে তারা বলছেন এই ঘটনার সাথে কেউই জড়িত নন। নিজ কার্যালয়ে বসে কোন একটি বিল পরিশোধের জন্য ব্যাগ থেকে টাকা বের হয়। খুব কাছ থেকে ছবিটি তুলে অভিযোগ দেওয়া হয় কাস্টম হাউজের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে। ওই ছবির ভিত্তিতে দুই রাজস্ব কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয় বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সোমবার (২৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম স্বাক্ষরিত ওই বদলি আদেশে কাস্টমসের এয়ারপোর্ট ও এয়ারফ্রেইট শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান সরকারকে গেইট ডিভিশন এবং রেহানা পারভীনকে নিলাম শাখায় বদলি করা হয়। ওই দিন দুপুর থেকে কার্যকর হবে আদেশে উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে রেহানা পারভীন বিমান বন্দরের এয়ারপোর্ট ও এয়ারফ্রেইট শাখায় রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওই সময় কার্গো পণ্যের আড়ালে চোলাচালান ঠেকাতে তার কঠোর অবস্থানের কারণে ক্ষুব্ধ হয় ওই সিন্ডিকেট। প্রকাশ্যে উর্ধতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রেহানা পারভীনকে এয়ারপোর্ট ও এয়ারফ্রেইট শাখা বদলির হুমকি দেয় ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। হুমকির কয়েক দিনের মাথায় সেখান থেকে বদলি হন রেহানা পারভীন।

এরপর চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ওয়্যার হাউজ থেকে শুল্ক পরিশোধ ছাড়া পণ্য খালাস করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কঠোর হয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। রদবদল হয় বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা। গত দুই মাস আগে এয়ারপোর্ট ও এয়ারফ্রেইট শাখায় পুনরায় বদলি হন রাজস্ব কর্মকর্তা রেহানা পারভীন।

সূত্র জানায়, কাস্টমসের কঠোর নজরদারি এবং ‘এ’ ফরমের মিথ্যা তথ্য এবং ভুয়া পাসপোর্ট দিয়ে পণ্য খালাস করতে না পেরে নানা অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করতে থাকে ওই চক্রটি। রাজস্ব কর্মকর্তাদের নানা প্রলোভনে ম্যানেজ করতে না পেরে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে থাকে তারা। অফিস চলাকালীন বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যাগ থেকে টাকা বের করলেই ওই ছবি প্রকাশ্য এবং গোপনে মোবাইল ক্যামেরায় তুলতো চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

তাৎক্ষণিক বদলি হওয়া রাজস্ব কর্মকর্তারা বলেন, বদলি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগে তাৎক্ষণিক বদলি মেনে নেওয়া কষ্টের। ভালো কাজ করার পরও একটি চক্র তাদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য প্রভাবিত করেছে।

নিলাম শাখায় বদলি হওয়া কর্মকর্তা রেহানা পারভীন বদলি নিয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য করতে রাজি না হলেও তিনি বলেন, ছবির মাধ্যমে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কার্যালয়ে বসে খাবারের বিলসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে টাকা পরিশোধ করতে হয়। এই ছবিকে কৌশলে তুলে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এয়ারপোার্ট অ্যান্ড এয়ারফ্রেইট শাখায় গত দুই মাসের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি কারো অবৈধ লেনদেনে সাড়া কিংবা নিয়ম বহির্ভূত সুবিধাও দেননি।

বদলি হওয়া অপর কর্মকর্তা মাহবুবর রহমান সরকার বলেন, বদলি কাস্টম হাউজের নিয়মিত বিষয়। এই বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই। তবে যে ছবির উপর ভিত্তি করে অভিযোগ উঠলো সেটি শতভাগ মিথ্যা।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার নাহিদ নওশাদ মুকুল বলেন, যেহেতু বদলির আদেশটি কমিশনার মহোদয় করেছেন সেক্ষেত্রে আমার কোন মন্তব্য নেই।

কাস্টম কমিশনার ফখরুল আলমের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

এসসি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!